উজবেকিস্তান

‘ইসলামিক সভ্যতা কেন্দ্র’: জ্ঞান ও প্রেরণার এক অনন্য ক্ষেত্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৫৬ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
উজবেকিস্তানের ইসলামিক সভ্যতা কেন্দ্র

উজবেকিস্তানের ইসলামিক সভ্যতা কেন্দ্র কেবল একটি জাদুঘর কমপ্লেক্স নয়; এটি একটি বৃহৎ সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক মেগা প্রকল্প। যার লক্ষ্য বিশ্ব ইতিহাসে ইসলামী ঐতিহ্যের ভূমিকা নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা। উজবেকিস্তানের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক বিষয় অধ্যয়ন করা এবং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করাও এর উদ্দেশ্য।

এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ধারণাটি প্রথম উত্থাপন করেন উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়য়েভ। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের মঞ্চ থেকে তিনি এই প্রকল্পের দর্শন তুলে ধরেন।

প্রেসিডেন্ট মিরজিয়য়েভ বলেন, আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ইসলামের প্রকৃত মানবিক সত্তাকে তুলে ধরা। ইসলাম আমাদের কল্যাণ ও শান্তির পথে আহ্বান জানায় এবং মানবতার প্রকৃত মূল সত্তাকে রক্ষা করতে বলে।

প্রেসিডেন্ট এই ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপনের আট বছর পর, তা আজ দৃশ্যমান স্থাপত্যে রূপ পেয়েছে। এই কমপ্লেক্সটি নির্মিত হয়েছে তাশখন্দের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হাস্ত-ইমাম এলাকায়।

৬৫ মিটার উচ্চ গম্বুজ ও চারটি প্রবেশপথ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐক্যের প্রতীক বহন করে। কমপ্লেক্সের কেন্দ্রে রয়েছে পবিত্র কুরআনের হল, যেখানে সপ্তম শতাব্দীর বিখ্যাত উসমানী মুশাফ (কুরআনের পাণ্ডুলিপি) সংরক্ষিত আছে। এটি ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নিবন্ধনে অন্তর্ভুক্ত।

আধুনিক ডিজিটাল স্থাপনায় সমৃদ্ধ প্রদর্শনীর ধারণাটি একটি কালানুক্রমিক ধারায় গড়ে তোলা হয়েছে—ইসলাম-পূর্ব যুগ থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় রেনেসাঁ, এরপর নতুন যুগ এবং নতুন উজবেকিস্তান পর্যন্ত।

এই কেন্দ্র বিজ্ঞান, শিল্প ও শিক্ষাকে একত্র করেছে। এখানে রয়েছে ২ লাখ বইসমৃদ্ধ একটি বৃহৎ গ্রন্থাগার, ক্যালিগ্রাফি স্কুল, হস্তশিল্প কর্মশালা এবং একটি সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার গবেষণাগার।

এছাড়া এখানে রয়েছে কিংস ফাউন্ডেশন স্কুল অব ট্র্যাডিশনাল আর্টস এবং উজবেকিস্তানের প্রথম শিশুদের জন্য নিবেদিত জাদুঘর, যেখানে খেলাধুলা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মাল্টিমিডিয়া স্থাপনার মাধ্যমে বিজ্ঞান শেখানো হয়।

এই কেন্দ্রের ভেতর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কার্যালয় রয়েছে, যার মধ্যে আছে ইসলামিক ওয়ার্ল্ড এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন, ইসলামিক ইতিহাস, শিল্প ও সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র, অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজ এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান।

কমপ্লেক্সের ভেতরে রয়েছে ৪৬০ আসনের একটি সম্মেলন হল, যা আন্তর্জাতিক সংলাপ ও সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে। এই বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশে সম্পন্ন সব আবিষ্কার, গবেষণা ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগ কেন্দ্রের প্রথম তলার প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হবে। জাদুঘরের বিষয়বস্তু নিয়মিত হালনাগাদ করা হবে, যা একে একটি জীবন্ত ও বিকাশমান ব্যবস্থায় রূপ দেবে।

এই কেন্দ্রের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো বহু বছর ধরে বিদেশে থাকা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক নিদর্শন পুনরুদ্ধার করা। উজবেক গবেষক ও শিল্প ইতিহাসবিদদের প্রতিনিধিদল বিশ্বের শীর্ষ নিলামঘর, খ্যাতনামা ব্যক্তিগত সংগ্রাহক ও গ্যালারি পরিদর্শন করেন। এই ব্যাপক কার্যক্রমের ফলে এক হাজারেরও বেশি দুর্লভ বস্তু উজবেকিস্তানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এদিকে, উজবেকিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অধ্যয়ন, সংরক্ষণ ও জনপ্রিয়করণ বিষয়ক বিশ্ব সমাজ উজবেকিস্তানের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত প্রায় এক হাজার পাণ্ডুলিপি ও নিদর্শন দান করেছে।

এই কেন্দ্র দাতব্য সংস্থা ও ব্যক্তিগত সংগ্রাহকদের সঙ্গেও অংশীদারত্ব গড়ে তুলেছে, যাতে ঐতিহাসিক অখণ্ডতা বজায় থাকে এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সংগঠন, বিষয়বস্তু ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের সর্বোচ্চ স্তর নিশ্চিত করা যায়।

ইসলামিক সভ্যতা কেন্দ্রের পরিচালক চেয়ারম্যান ড. ফিরদাভস আবদুখালিকভ বলেন, প্রতিদিন উজবেকিস্তানের ইসলামিক সভ্যতা কেন্দ্রে প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়য়েভের উদ্দেশে অসংখ্য কৃতজ্ঞতার বার্তা আসে। তাশখন্দে শান্তি, কল্যাণ, বিজ্ঞান, জ্ঞানচর্চা ও আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে ইসলামী সভ্যতার আধুনিক ব্যাখ্যা গঠনে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য মানুষ তাকে ধন্যবাদ জানায়।

তিনি আরও বলেন, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ইতিহাসের পাতায় ছড়িয়ে ছিল, আজ তা আবার একত্র করা হচ্ছে। ইসলামিক সভ্যতা কেন্দ্রে অতীতের এই আধ্যাত্মিক উচ্চতা নতুন ঐক্য লাভ করছে।

তিনি বলেন, এই মহান প্রকল্পকে এগিয়ে নেওয়া এবং এটিকে এমন এক সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক শক্তিতে রূপান্তর করা আমাদের দায়িত্ব, যা এই মহান ঐতিহ্যের ফসলকে আলোকিত ভবিষ্যতের শক্তিশালী জ্বালানিতে পরিণত করতে সক্ষম হবে।

সূত্র: সিএনএন

এমএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।