এনআরসির প্রতিবাদে মাঠে হাজির বাঁটুল দ্য গ্রেট!
ভারতীয় বাংলা কমিক্সের প্রথম সুপার হিরো ‘বাটুল দি গ্রেট’! অবিশ্বাস্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে শক্তি প্রয়োগে দ্বিধাহীন বাংলা কমিক্সের এই চরিত্রটি মানুষের বিপদ দেখলেই ঝাপিয়ে পড়ে। পাঁচ দশকের দর্শক নন্দিত গোলাপি গেঞ্জি পরা বিশাল ছাতিওয়ালা বাটুল এবার এসেছে নতুন রূপে লাল-হলুদের জার্সি গায়ে। বাটুল এসেছে ভারতের সংশোধিত নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। এবার বাটুল প্রতিবাদী।
বরাবরের মত এবারও বাটুলের সঙ্গী বাচ্চু-বিচ্ছু। যেখানে তারা বাটুলকে বলছে- ‘কিরে বাঙাল, এনআরসি আসছে, যা পালা’। উত্তরে মিলেছে বাটুলের ঘুসি।
রোববার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচে এমন ব্যানার নিয়ে লাল-হলুদের জার্সিতে ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা খেলা দেখতে এসেছিলেন।
সেখানে বাটুলকে ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরিয়ে ‘বাঙাল দি গ্রেট’ বলা হয়েছে। কালের বিবর্তনে মিশে গেছে ভূমিহীন, উদ্বাস্তু আর আদি কলকাতার বাসিন্দারা। তবে এই মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচে ধরা পড়ে বাঙাল আর ঘটিদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দেশ ভাগের সময় পূর্ব বাংলা থেকে কলকাতায় পাড়ি জমানোদের বাঙাল আর স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটি নামে পরিচিত।
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ ব্যাচে শুধু বাঙালিরাই নন; এনআরসির প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঘটিরাও। সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে তারাও এনআরসিবিরোধী বিভিন্ন ব্যানার হাতে মাঠে এসেছিলেন। তাদের একটি ব্যানারে লেখা ছিল- পলাশি প্রান্তরে সূর্যাস্তের পর চোখে চোখ রেখে লড়াই শিখিয়েছি আমরাই।
এ দিন মাঠে ব্যানার-ফেস্টুনে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে অনেককেই। কোথাও সোজাসুজি পোস্টারে লেখা নো এনআরসি, নো সিএএ, নো এনপিআর। আবার কোথাও বাটুলকে বাঙালি সমর্থক করে বিশাল ব্যানারে লিখে এনেছে- বাটুল আমাদের। আমরা তারই মতো শক্তিধারী। সুতরাং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন হলে এ দেশ ছেড়ে তাকে পাড়ি জমাতে হবে অন্যত্র।
বাটুল দ্য গ্রেট কমিক্সের কর্ণধার রাজর্ষি মজুমদার বলেন, নারায়ণ দেবনাথের বাটুল কখনও বাঙালি ছিল না। তবে খেলার মাঠেও যে বাটুল প্রতিবাদের হাতিয়ার হয়েছে, সেটা টিভিতে দেখে খুব ভালো লাগল।
গ্যালারিতে বিশাল একটি ব্যানারে লেখা ছিল রক্ত দিয়ে কেনা মাটি, কাগজ দিয়ে নয়। গ্যালারিতে উপস্থিত ইস্ট বেঙ্গলের এক সমর্থক বলেন, এটাও নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে স্লোগান। ইস্টবেঙ্গলের আরেক সমর্থক জানান, এই দেশে আমাদের জমি অর্জিত। দেশভাগের মতো যন্ত্রণার বিষয় নিয়ে যারা আমাদের ব্যঙ্গ করেন, তাদের জবাব দিতেই এই ব্যানার নিয়ে আসা হয়েছে।
কৃষ্ণেন্দু দত্ত নামে এক সমর্থক বলেন, অনেক সময়ই আমাদের বিদ্রুপ করে বলা হয়, কাগজ নেই। ইস্ট বেঙ্গল সমর্থক মানেই যেন রিফিউজি। এ সবের প্রতিবাদ দরকার। তাই ডার্বি ম্যাচকে প্রতিবাদের মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করেছি।
বামপন্থী ছাত্রসংগঠন এসএফআইয়ের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য শুভজিৎ সরকার বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন তা আরও দৃঢ় করতে এসএফআই সমর্থকেরা ম্যাচে পোস্টার লিখে নিয়ে এসেছেন। এতে অসংখ্য দৃষ্টি আকর্ষণ করা গেল। আনন্দবাজার।
এসআইএস/জেআইএম