করোনাকালে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাইক চুরি
করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একারণে গণপরিবহন এড়িয়ে অনেকেই বাইক বা সাইকেল ব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে এগুলোর চাহিদা। তবে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চুরির সংখ্যাও।
রাস্তার পাশ থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে শখের বাইক। গ্যারেজ, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের বেজমেন্ট থেকেও অহরহ হারিয়ে যাচ্ছে দুই চাকার সাইকেল। এমনকি রাস্তায় চলার পথে ছিনতাইয়ের শিকারও হচ্ছেন অনেকে। এই সংকট শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, ফ্রান্স, ব্রিটেনের মতো দেশগুলোতেও রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে বাইক চুরির হার।
ব্রুকলিন থেকে সম্প্রতি দু’টি বাইক হারিয়েছেন জ্যাকব প্রিলে নামে ২৯ বছর বয়সী এক যুবক। কিছুদিন আগে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভের সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। এসময় রাস্তার পাশে নিজের বাইকটি রেখে যান। কিন্তু ফিরে এসে আর সেটি খুঁজে পাননি। এরপর ৮০০ ডলার দিয়ে একটি ইলেক্ট্রিক সাইকেল কেনেন জ্যাকব। কিন্তু তালা দেয়া থাকলেও একরাতে চুরি হয়ে যায় সেটিও।
সাইকেল বা বাইকের জন্য তালা হয়তো কিছুটা নিরাপত্তা দিতে পারে। তবে আধুনিক চোররা যে ইলেক্ট্রিক করাত ব্যবহার করে, তার কাছে এগুলো কিছুই না।
ম্যানহাটনের একটি সাইকেলের দোকানের কর্মী স্টাই গনজালেস বলেন, ‘এটি দিয়ে সব তালা ভাঙা যায়। তালা যত শক্তিশালী হবে, সেটি ভাঙতে সময় কিছুটা বেশি লাগবে মাত্র। ’
নিউইয়র্ক পুলিশের তথ্যমতে, গত মার্চ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৭৭টি সাইকেল ও ইলেক্ট্রিক সাইকেল চুরির অভিযোগ পেয়েছেন তারা। সেখানে গত বছর একই সময়ে সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছিল ৩ হাজার ৫০৭টি, অর্থাৎ চলতি বছর চুরি বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ।
তবে ৫২৯ গ্যারেজ নামে একটি বাইক নিবন্ধন সংস্থার দাবি, চুরির প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। কারণ প্রতি পাঁচটি বাইক চুরির ঘটনায় একটির বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ যায়।
সংস্থাটির হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ১৭ লাখ বাইক চুরি হয়। অর্থাৎ প্রতি ৩০ সেকেন্ডে চুরি হচ্ছে একটি।
বাইক ইনডেক্স নামে আরেকটি সংস্থা জানিয়েছে, তাদের কাছে গত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ১০ হাজার ৫৯টি বাইক চুরির খবর এসেছে। গত বছর এ সময়ে চুরির অভিযোগ এসেছিল ৫ হাজার ৯৯৮টি। অথাৎ, এবছর চুরি বেড়েছে ৬৮ শতাংশ।
চোরের প্রাদুর্ভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বেড়েছে অন্য দেশেও। ফরাসি গণমাধ্যমের তথ্যমতে, প্যারিসে চলতি বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত বছরের তুলনায় বাইক চুরি বেড়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। শহরটির সাইক্লিস্টরা তাদের সাইকেলগুলোর জন্য নিরাপদ স্থান তৈরির অনুরোধ জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে।
ব্রিটেন লকডাউনে যাওয়ার পর লন্ডনে চুরির হার কমে গিয়েছিল। কিন্তু চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতেই হু হু করে বেড়েছে বাইক চুরির সংখ্যা। মেট্রোপলিটন পুলিশের হিসাবে, গত জুন থেকে আগস্টের মধ্যে তাদের কাছে ৮ হাজার ৪৫৩টি বাইক চুরির অভিযোগ এসেছে। গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৪২২টি। অর্থাৎ চলতি বছর মহামারির মধ্যে সেখানে বাইক চুরি বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস
কেএএ/পিআর