আগ্রাসনের প্রতিবাদ করায় শিশুদেরও ছাড়লো না পুতিন প্রশাসন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ পিএম, ০২ মার্চ ২০২২

আগ্রাসনে ভুক্তভোগীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে মস্কোয় ইউক্রেন দূতাবাসের বাইরে ফুল দিতে গিয়েছিলেন একদল শান্তিপ্রিয় মানুষ। সঙ্গে ছোট ছোট সন্তানদেরও সঙ্গে নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু বাচ্চাদের ওপরও যে পুলিশ প্রশাসন চড়াও হবে, ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি কেউ। মঙ্গলবার (১ মার্চ) মায়েদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি শিশুকেও আটক করে থানায় নিয়ে যায় রুশ পুলিশ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক হৃদয়স্পর্শী ভিডিওতে দেখা যায়, এক রুশ মা তার সন্তানকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তাকে কেন আটক করা হয়েছে।

ডেইলি মেইলের খবরে জানা যায়, ওই নারীরা যুদ্ধে ভুক্তভোগীদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে মস্কোর ইউক্রেন দূতাবাসের বাইরে ফুল দিতে গিয়েছিলেন। এসময় তাদের হাতে ছিল যুদ্ধবিরোধী পোস্টার-প্ল্যাকার্ড। সেখান থেকে মাসহ ওই শিশুদের আটক করে পুলিশ। তাদের প্রথমে একটি পুলিশের গাড়িতে রাখা হয়েছিল, পরে প্রেসনেন্সকয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আলেকজান্দ্রা আরখিপোভা নামে এক সমাজকর্মী জানান, আটক মায়েদের কাছ থেকে ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। পুলিশ হুমকি দিচ্ছিল, তাদের মাতৃত্বের অধিকার কেড়ে নিয়ে শিশুদের কেয়ার সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের হাতে আটক একাতেরিনা জাভিজিওন নামে এক মা তার সাত বছর বয়সী মেয়ে সোফিয়ার সঙ্গে ধাতব খাঁচার মধ্যে থেকে কথা বলছেন। মেয়েটি খাঁচার ফাঁক দিয়ে মায়ের হাত ছুঁয়ে রয়েছে।

আতঙ্কিত সোফিয়া মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করে, তুমি ওখানে বসা কেন? জবাবে মা বলেন, ওরা চায় না এক জায়গায় অনেক মানুষ জড়ো হোক। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাকে বিশ্বাস করো তো?

একাতেরিনা পরে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, খারকিভে ভয়ংকর বোমা হামলার ভিডিও দেখে বুঝতে পেরেছি, আমি আর ঝোঁপের নিচে বসে কাঁপতে কাঁপতে ভাবতে পারবো না যে, কিছুই হচ্ছে না। দুঃখ-বেদনায় আমার হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমার উদ্দেশ্য খুবই শান্তিপূর্ণ ছিল- ইউক্রেনে নিহত বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের স্মৃতিতে ফুল দেওয়া। আমি দেখাতে চেয়েছিলাম, আমরা আলাদা নই, এখানে আমরাও দুঃখ-বেদনায় মরছি।

সন্তানদের সঙ্গে আটক হওয়ার বিষয়ে এ নারী বলেন, আমি এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। শিশুরা চিৎকার করতে লাগলো। সব যেন জাহান্নাম হয়ে উঠলো। আমি সেই মুহূর্ত কখনো ভুলবো না।

ভিডিওর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে আরও কিছু ছবি, যেখানে একাধিক শিশুকে পুলিশের গাড়ি এবং থানায় হাতে ফুল ও যুদ্ধবিরোধী ব্যানার নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে।

রুশ পত্রিকা নোভায়া গ্যাজেটার বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, পরে ওই শিশুদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের মায়েদের কী অবস্থা, তা জানা যায়নি।

ইউক্রেন আক্রমণের দিন থেকেই রাশিয়ায় যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। তবে প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুতিন প্রশাসন। ওভিডি-ইনফো নামে একটি সংস্থার হিসাবে, রাশিয়ায় অন্তত ৫০টি শহর থেকে এ পর্যন্ত সাত হাজারের মতো বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ।

কেএএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।