তেলের দাম ১১৮ ডলার ছাড়ালো, সংকট চললে ইতিহাসে সর্বোচ্চ হওয়ার শঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৩৪ এএম, ০৫ মার্চ ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগতে চলছে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েই চলেছে। সংকট চলতে থাকলে আগামী তিন মাসের মধ্যে এর দাম ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ব্যারেলপ্রতি ১৫০ মার্কিন ডলার ছাড়াবে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, শুক্রবার (৪ মার্চ) বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের বেঞ্চমার্ক ব্রেন্টের দাম বেড়েছে ব্যারেলপ্রতি ৭ দশমিক ৬৫ ডলার। দিন শেষে এর দর আগের দিনের চেয়ে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১১৮ দশমিক ১১ ডলার, যা ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে সর্বোচ্চ।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ৮ দশমিক ০১ ডলার বা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে স্থির হয় প্রতি ব্যারেল ১১৫ দশমিক ৬৮ ডলারে, যা ২০০৮ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ।

jagonews24

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর মাত্র এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে ব্রেন্টের দাম বেড়েছে অন্তত ২১ শতাংশ এবং ডব্লিউটিআইয়ের দাম বেড়েছে পুরো ২৬ শতাংশ। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলো একজোট হয়ে নিষেধাজ্ঞা দিতে শুরু করায় বিশ্ব অর্থনীতিতে এই সংকট দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত রুশ তেল-গ্যাসের ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি সেই পথেই যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে রুশ তেল আমদানি নিষিদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের ওপর ক্রমেই চাপ বাড়ছে। রয়টার্সের এক জরিপ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশ মানুষ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি নিষিদ্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য পরবর্তী ধাপের নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার জ্বালানি খাতকে টার্গেট করতে পারে। স্বদেশে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় এখন পর্যন্ত এই পথে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছে ব্রিটিশ সরকার।

তবে চলতি সপ্তাহের শুরুতেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিষিদ্ধ করেছে কানাডা। রুশ তেলের বৃহত্তম আমদানিকারক চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডেসের মতো দেশগুলোতে অনেক পরিশোধনকারীই নিষেধাজ্ঞার ভয়ে রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনে অনীহা দেখাতে শুরু করেছেন।

jagonews24

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনর্বহালে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা প্রায় সমঝোতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমা মন্ত্রীরা। এটি কার্যকর হলে বিশ্ববাজারে দৈনিক আরও ১০ লাখ ব্যারেল তেল যোগ হতে পারে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানি তেল দিয়ে রাশিয়ার ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে না।

সৌদি আরবের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক রাশিয়া। তারা দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করে থাকে। ফলে মস্কোর ওপর জ্বালানি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে তা সংকট আরও বাড়িয়ে দেবে।

২০০৮ সালের জুলাই মাসে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম উঠেছিল ১৪৭ দশমিক ২৭ ডলার। আজ পর্যন্ত এটিই তেলের দামের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

গোল্ডম্যান স্যাশ গ্রুপের জ্বালানি গবেষণার প্রধান ড্যামিয়েন কুরভালিন মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন, রাশিয়ার তেল ব্যাপকভাবে পরিহার অব্যাহত থাকলে আগামী তিন মাসের মধ্যে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৫০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।

তার মতে, রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও এর ইউরোপীয় মিত্ররা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরে তেলের দাম কমানোর একমাত্র উপায় হবে চাহিদা কমানো। এটি ছাড়া তেলের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানোর আর কোনো রাস্তা নেই বলে মন্তব্য করেছেন এ বিশেষজ্ঞ।

কেএএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।