পিয়ন হতে যাচ্ছে ডেপুটি রেজিস্ট্রার
নীতিমালার দোহাই দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পিয়ন হিসেবে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা শাখা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে পদোন্নতি পাচ্ছেন। এসব পিয়ন এখন সহযোগী অধ্যাপকের বেতন কাঠামো পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
বিভিন্ন সময়ে জোর জবরদস্তি করে তৈরি করা এ নীতিমালার ফাঁক-ফোকড় দিয়ে এক শ্রেণির কর্মকর্তারা পদোন্নতি এবং বেতন স্কেল বৃদ্ধির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। এ দাবিকে অনৈতিক আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রিধারী কর্মকর্তারা।
প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও পিয়নরা যেন কোনোভাবেই পদোন্নতি পেয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হতে না পারে এবং বেতন স্কেল যেন না পায় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছে তারা। সহযোগী অধ্যাপকের বেতন স্কেল দাবিদার এসব কর্মকর্তারা কয়েকদিন ধরে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১/৩ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে আসছে। দাবি আদায়ে শিক্ষকদেরও মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে তারা।
রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখায় পিয়ন এবং নিম্নমান সহকারী হিসেবে চাকরিতে যোগদানকারী কর্মচারীরা আপগ্রেডিং নীতিমালার আলোকে পদোন্নতি পেয়ে শাখা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদে আসীন হচ্ছে। একই সঙ্গে তারা সহযোগী অধ্যাপকের বেতন স্কেল পাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষকদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। পাশাপাশি তাদের ফাইল স্বাক্ষর করা থেকে বিরত রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখায় প্রায় ৫০ জন শাখা কর্মকর্তা এবং সহকারী রেজিস্ট্রার রয়েছে যারা পিয়ন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছিল। এছাড়া নিম্নমান সহকারী পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে প্রায় ২০০ জন কর্মরত রয়েছেন।
জানা গেছে, এসব কর্মকর্তারা অধিকাংশই অষ্টম শ্রেণি পাশের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেছিল। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদার নীতিমালার সুযোগ নিয়ে প্রাইভেট এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট নিয়ে কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ধাপ ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদেও আসীন হয়েছেন।
এদিকে, তুলনামূলক কম মেধাবী এসব কর্মচারীরা ডেপুটি রেজিস্ট্রারের পদে আসীন হওয়ায় প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তাদের আপগ্রেডিং নীতিমালা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নীতিমালার আলোকে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে পিয়ন এবং নিম্নমান সহকারীদের পদোন্নতি দেয়া হয়ে থাকে। পিয়ন পদে থেকে তিন বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীতে পদোন্নতি পেয়ে থাকে। পরবর্তীতে কোনো প্রকার ডিগ্রি পাশের সার্টিফিকেট জোগাড় করে আট বছরের মাথায় শাখা কর্মকর্তা এবং ছয় বছরের মাথায় সহকারী রেজিস্ট্রার এবং মাস্টার্স ডিগ্রি থাকলে ডেপুটি রেজিস্ট্রারের চেয়ারও দখল করে নিচ্ছে এসব কর্মচারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পিয়ন থেকে পদন্নোতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখায় কমপক্ষে ১০০ জন সহকারী এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকারী রেজিস্ট্রার জাগো নিউজকে জানান, নীতিমালার আলোকে একাডেমিক যোগ্যতা ছাড়াই যাদের পদোন্নতি দিয়ে কর্মকর্তা বানানো হচ্ছে, তাদের কোনো কাজের যোগ্যতা নেই। আবার অনেকেরই ইংরেজিতে খসড়া আবেদনপত্র লেখার যোগ্যতাও নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দফতরে কর্মরত ১১২ জন ডেপুটি রেজিস্ট্রার সহযোগী অধ্যাপকের বেতন কাঠামো পেতে উঠে পড়ে লেগেছেন। এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নীতিমালা সংগ্রহ করে সংযোজন-বিয়োজন করে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সামনে এনে প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। এরই অংশ হিসেবে তারা বেশ কয়েকদিন ধরে ভিসি কার্যালয়ে ১/৩ ঘণ্টা অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে বলে ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে, প্রশাসনিক কাজের জটিলতা মুক্ত করতে কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল সংক্রান্ত সৃষ্ট সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. শামসুল আলম। কর্মকর্তাদের দেয়া কাগজপত্র এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছে ওই কমিটি।
এ বিষয়ে প্রফেসর ড. শামসুল আলম জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, কর্মকর্তাদের দাবির বিষয়টি আমলে নিয়ে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুত একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুল ইসলাম হাসান জাগো নিউজকে জানান, আমাদের দাবির যুক্তিকতা হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নীতিমালা এনেছি। যেহেতু অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি আছে সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন দেয়া হবে না।
সাবেক রেজিস্ট্রার ড. মসলেম উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পদন্নোতি নীতিমালা অনুসরণ করা হয়ে থাকে সেটি এখন আর নীতিমালায় নেই, গণমালায় পরিণত হয়েছে। আর কর্মকর্তারা শিক্ষকদের ফাইলে স্বাক্ষরা না করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি ধৃষ্টতার সামিল।
এআরএ/এমএএস/এবিএস