ঠাকুরগাঁওয়ে স্রোতের বিপরীতে হেঁটেছেন গীতা রাণী


প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, ০৮ মার্চ ২০১৬

২০০৮ সালের শুরুর দিকের কথা। অভাব ও অনটনের সংসার নিয়ে নামলাম দর্জি ব্যবসায়। সংসারের অভাব মোচন, সন্তানদের ভরণপোষণ, স্বামীকে সাহায্য করা ছিল আমার স্বপ্ন। চারদিকে তখন অনেক কথাবার্তা। নারী কিনা দোকানদারি করবে?

তবে হাজারো নিন্দুকের মুখে চুনকালি দিয়ে স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে আজ তিনি একজন সফল নারী। সফল নারী উদ্যোক্তা। তিনি আর কেউই নন। ঠাকুরগাঁও শহরের শান্তিনগর এলাকার কল্যানী লেডিস টেইলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী গীতা রাণী। সাহস, প্রবল ইচ্ছা আর পরিশ্রম এবং স্বামীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে তার সহযোগিতা নিয়ে কাটা বিছানো পথ পাড়ি দিয়ে তিনি আজ সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন।

Thakurgaon-Geta-Raqni

কথা হয় গীতা রাণীর সঙ্গে। তিনি জানান, যখন শুরু করি তখন একটি সেলাই মেশিন ছিল মূল পুঁজি। বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটি ছোট্ট দোকান নিয়ে যাত্রা শুরু করি। কাপড় কাটা ও সেলাই নিজেই করতাম। রাত দিন পরিশ্রমের ফলে ‘সোনার হরিণ’ নামক সফলতার ধরা পেয়েছি। দোকানের পরিধি যেমনি বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে জনবল। আজ তার দোকানে ৫/৬টি সেলাই মেশিন। বর্তমানে ৬ জন নারী দর্জি দোকানে কাজ করেন। সালোয়ার-কামিজ, বোরকাসহ নারীদের পোশাক তৈরি করেন। এখন আর প্রচার লাগে না। কাজের মান দিয়েই তিনি হাজারো পোশাকপ্রেমীর হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন। তার দোকানে নারীদের ভিড় লেগেই থাকে।

আশপাশের অনেক নারী জানালেন, পুরুষ দর্জির কাছে কাপড় তৈরি করতে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। কিন্তু গীতা আপার কাছে মন খুলে কথা বলে পছন্দের পোশাক তৈরি করা যায়।

গীতা আরও জানান, তার কাছে যারা কাজ শিখতে আসে তাদের বেশিরভাগ দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। দর্জির কাজ করে ওই দম্পতিরা বেশ সুখেই আছে। তারাও এখন স্বাবলম্বী।

Thakurgaon-Geta-Raqni

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঠাকুরগাঁও শাখার সাধারণ সম্পাদক সুচরিতা দেব বলেন, প্রথম দিকে অনেক কিছুই সইতে হয়েছে গীতা রাণীকে। কিন্তু সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি আমরা। আমরা চাই এমন কর্মঠ নারীদের সহযোগিতা করতে। গীতার এই সাফল্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঠাকুরগাঁও শাখার সদস্যরা গর্বিত।

২০০৬ সালে গীতা রাণী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই সন্তানের জননী। স্বামী প্রদীপ রায় গাংনী কাপড়ের দোকানে কাজ করে। সংসারের অভাব দূর করার জন্য ও দুস্থ নারীদের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে এ পেশা বেছে নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এসএস/এমএএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।