বিআরটিসি’র যাত্রী ছাউনিতে কনফেকশনারীর দোকান
শত শত মানুষ সকাল-বিকালে বাস কিংবা অটোরিকশা ধরার জন্য শিশু মেলা এলাকায় অপেক্ষায় থাকেন। অনেকে আবার স্কুল ফেরত শিশুদের জন্যও অপেক্ষায়। এখানে বিআরটিসির যাত্রী ছাউনি থাকা স্বত্ত্বেও সবাই দাড়িয়ে থাকেন বাইরে। কারণ ভেতরে যে বসেছে কনফেকশনারীর দোকান, ঔষধ, পেপার কিংবা ফল বিক্রেতা। বাদ নেই মুচির দোকানও। অগত্যা যাত্রী সাধারণ বাইরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাবতলী থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত মিরপুর সড়কের শিশু মেলা এলাকা থেকে আগারগাঁও লিঙ্ক রোডটি নির্মাণের পর থেকেই তা রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম রুটে পরিণত হয়। তবে লিঙ্ক রোডটি হওয়ার আগেই শিশু মেলার ঠিক বিপরীত পাশেই বিআরটিসি একটি যাত্রী ছাউনি তৈরি করেছিল। বাস স্টপেজ সংলগ্ন ওই যাত্রী ছাউনি নগরবাসীর বাসে উঠা-নামা ও অপেক্ষার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে যাত্রীরা ব্যবহার করেন না এই ভুয়া অজুহাতে আরও কয়েকটি যাত্রী ছাউনির সঙ্গে শিশু মেলার যাত্রী ছাউনিটিও লিজ দিয়ে দেয় বিআরটিসি।
এরপর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে ওই স্থানে আদৌ কোনকালে যাত্রী ছাউনি ছিল। এখন সেখানে বসেছে কনফেকশনারী, ঔষধ, কলা-কমলাসহ ফলমূলের দোকান, পত্রিকার হকার কিংবা মুচির দোকান। এছাড়া ছোট ফাস্টুফুডের দোকান তো রয়েছেই।
আগারগাঁও কিংবা নিউমার্কেট ও ফার্মগেট রুটের যাত্রীরা শিশু মেলার ওই মোড়েই দখল হয়ে যাওয়া যাত্রী ছাউনির সামনেই দাড়িয়ে থাকেন। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে ছুটোছুটিও করেন। কিন্তু অপেক্ষা ওই দাড়িয়েই। বসার কোনো সুযোগ নেই। অনেকে জানেনই না যে শিশু মেলায় সুবিশাল যাত্রী ছাউনি ছিল।
যাত্রী ছাউনিতে সোনারগাঁও কনফেকশনারী ও ভ্যারাইটিজ স্টোরের মালিক মর্জিনা বেগম জানান, বছর দুয়েক আগে তিনি জায়গাটি বিআরটিসির কাছ থেকে ৯৫ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন।
তার দাবি এ জন্য তাকে গুনতে হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা! পাশের দোকানের নাম ফাহিম জেনারেল স্টোর। এর পাশেই সোনারগাঁও ফার্মেসি। নাম প্রকাশ না করে মালিক জানান, তিনিও লিজ নিয়েছেন তবে টাকা দিতে হয়নি!

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিশু মেলার ওই যাত্রী ছাউনিতে কমপক্ষে ১০টি দোকান গড়ে উঠেছে। যদিও লিজ হয়েছিল এক নামে। মর্জিনার দাবি, আমার নামে লিজ হলেও এখানে ক্ষমতার দাপটে অনেকে দোকান গড়েছেন।
যাত্রী সাধারণের অভিযোগ, এখানে ছাউনি আছে কিন্তু তা তাদের জন্য নয়। ভাড়ায় চলে। ফাস্টফুডের দোকান, ফলমূল, মুচির দোকান বসেছে। নিউমার্কেট কিংবা শাহবাগ রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের শিশুমেলার ওই মোড়েই অপেক্ষায় থাকতে হয়।
মোস্তাক হোসেন নামে বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন এখানে টাইম কিল হয়। অযথা যানজট লেগে থাকে। কারণ একটাই, পরিবহনের চেয়ে এখানে অপেক্ষমান মানুষের সংখ্যা বেশি। তাই রাস্তায় দাঁড়াতে হয়। যাত্রী ছাউনি দখলে, যাত্রীরা দাঁড়াবে কোথায়?
হাবিবুন্নাহার নামে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে নূরজাহান রোডে একটি স্কুলে পড়ে। তাকে নিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতে হয়। কিন্তু এখানে এসে বিপত্তিতে পড়তে হয়।
মির রেজা নামে অপর এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, কে দেখবে যাত্রীদের সুবিধা? যেন কেউ নেই। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও লজ্জাহীন হয়ে এসব বলতে হয়। বিআরটিসি নাকি লিজ দেয় যাত্রী ছাউনি। দেশটা যে কোথায় যাচ্ছে?
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিআরটিসি প্রধান কার্যালয়ের মেইনটেনেন্স বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সচিব আফসার উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, বিআরটিসিরি যাত্রী ছাউনিগুলির বেহাল দশা। কিছু লিজে আর কিছু দখলে। যাত্রীদের জন্য বাকি বুঝি একটাও নাই।
জেইউ/এমএমজেড/পিআর