ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলে চীন সফরে যাচ্ছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:১০ পিএম, ০১ জানুয়ারি ২০২৪
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর সঙ্গে চীনের স্টেট কাউন্সিলর এইচ.ই. শেন ইকিন /ছবি: সংগৃহীত

ভারতের উদ্বেগ ও চিন্তা বাড়িয়ে এ বার চীন সফর করতে যাচ্ছেন মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু। দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত না হলেও, শোনা যাচ্ছে খুব শিগগির বেজিংয়ে গিয়ে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।

মুইজ্জুর চীন সফর অন্য একটি দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। গণতান্ত্রিক মালদ্বীপের সব প্রেসিডেন্টই দায়িত্ব নেওয়ার পর সবার প্রথমে ভারত সফর করেছেন। এমনকি, ভারতবিরোধী বলে পরিচিত প্রেসিডেন্টরাও শপথ নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ভারতেই এসেছেন। কিন্তু মুইজ্জু তার বিদেশ সফর শুরু করেছিলেন তুরস্ক গিয়ে। আর ভারতে আসার আগেই করতে চলেছেন চীন সফর।

আরও পড়ুন: মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট ‌‘ভারতবিরোধী’ মোহামেদ মুইজ্জু

মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্টের এই চীন সফরকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে নয়াদিল্লি। সীমান্তে সংঘাত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেজিংয়ের প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা- সব কিছুর নিরিখেই ভারত-চীনের সম্পর্ক একাধিক উত্থানপতনের মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মালদ্বীপের চীন-ঘনিষ্ঠতা অস্বস্তি বাড়িয়েছে মোদী সরকারের। এমনিতেই মুইজ্জু ভারত-বিরোধী ও চীন-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মহম্মদ সোলি ভারতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার যে নীতি নিয়ে চলতেন, সেই ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন মুইজ্জু। আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই ভারতকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, মালদ্বীপের মাটি থেকে সব বিদেশি সেনাকে আমারা ফেরত পাঠাবো।

মুইজ্জু প্রথমে কোনো দেশের সেনা ফেরত পাঠবে সেটা উল্লেখ না করলেও, স্পষ্টভাবেই বোঝা গিয়েছিল তিনি ভারতকেই ইঙ্গিত করেছেন। কারণ, ভারত মহাসাগরের ওই দ্বীপরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও শিল্পক্ষেত্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ভারতীয় সেনারা। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার বার্তা দেন তিনি। ভারত সেটা করতে বাধ্যও হয়।

আরও পড়ুন: মালদ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে ভারত

মালদ্বীপের রাজনীতিতেও মুইজ্জুর দল প্রোগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপসের (পিপিএম) বক্তব্য, তাদের দেশের সার্বভৌমত্ব খর্ব করতেই সেনা রেখে দিয়েছে ভারত। যদিও বিরোধী দলগুলোর দাবি, রাজনৈতিক কারণেই তীব্র জাতীয়তাবাদী প্রচার চালাচ্ছেন মুইজ্জু।

এদিকে, মুইজ্জুর এই ‘ইন্ডিয়া আউট’ নীতিকে মালদ্বীপের কূটনৈতিক অবস্থানে বড়সড় পরিবর্তন বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা। ভারত ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে সম্প্রতি নতুন বন্ধু খোঁজার চেষ্টা করছে মালদ্বীপ। কিছু দিন আগেই ভারতের সঙ্গে চার বছর আগের জল জরিপ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি বাতিল করেছে দেশটি।

আর প্রথম বন্ধু হিসেবেই যে দেশকে মুইজ্জু বেছে নিয়েছেন, সেই তুরস্কের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (৩৭০ ধারা) তুলে দেওয়া নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছিল তুরস্ক।

আরও পড়ুন: শপথ নেওয়ার পরপরই ভারতীয় সেনাদের বের করে দিতে চান মুইজ্জু

তা ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও ক্রমশ প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা করছে তারা। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ সফর করেছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দীর্ঘ দিন পরে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বিমানসেবাও চালু করেছে আঙ্কারা।

আর এক বন্ধু দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বেছে নিয়েছে মালদ্বীপ। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশের সঙ্গে ভারতের নিবিড় সম্পর্ক থাকলেও মনে করা হচ্ছে, পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব বাড়াতেই মালদ্বীপের এই সক্রিয়তা।

মালাবার উপকূলের অদূরে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপ ভারতের কাছে রণকৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ভারত মহাসাগরে শান্তি এবং স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে মলদ্বীপের সঙ্গে মোটের উপর সুসম্পর্ক রাখা প্রয়োজন নয়াদিল্লির।

আরও পড়ুন: ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা প্রত্যাহারের কথা জানালো মালদ্বীপ

আবার পর্যটন, পরিকাঠামোসহ একাধিক ক্ষেত্রে ভারতের উপর নির্ভরশীল মালদ্বীপও। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক না রাখলে ভারত মহাসাগরে বিশেষ স্বার্থ রয়েছে, এমন একাধিক দেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করতে হবে মালদ্বীপকে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।