মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কেন পড়বেন?

মেকানিক্যাল হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজির সবচেয়ে প্রাচীন ও বিস্তৃত একটি শাখা। যা যন্ত্রপাতি, শক্তি, গতি এবং তাপের ব্যবহার নিয়ে কাজ করে। এ টেকনোলজি ছাড়া আধুনিক বিশ্বের উন্নয়ন সম্ভব নয়। ফলে বিশ্বজুড়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কী? এ টেকনোলজির কাজ কী? এ বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে? এ ছাড়া আরও অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। সেসব নিয়েই আজকের আয়োজন—
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কী?
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাংলা হচ্ছে যন্ত্রকৌশল। প্রকৌশল জগতের মানুষেরা এ টেকনোলজিকে ‘মাদার অব ইঞ্জিনিয়ারিং’ বলেন। আমাদের চারপাশের প্রতিটি বস্তু, যা নড়ছে, ভাঙছে—এর সবই যন্ত্রকৌশলের অন্তর্ভুক্ত। গাড়ি কীভাবে চলে, রকেট কীভাবে মহাকাশের অনন্ত পথে উড়ে যায়, প্লেন কেন ল্যান্ড করার সময় ব্রেক করে না। এ ছাড়া ফ্রিজ, ওভেন, ওয়াশিং মেশিন কীভাবে কাজ করে কিংবা লিফট কীভাবে ওপরে ওঠে—এসব নিয়ে ভাবা এবং কাজ করাই হচ্ছে যন্ত্রকৌশলের কাজ।
যেসব বিষয়ে পড়ানো হয়?
যন্ত্রকৌশলের একদম মৌলিক বিষয় হচ্ছে তিনটি। হিট ট্রান্সফার, ফ্লুইড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডায়নামিকস এবং মেকানিকস। যন্ত্রকৌশল মানেই যন্ত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করা, তবে এখানে তত্ত্বীয় অনেক বিষয়ও আছে।
পুরো চার বছরে যেসব বিষয়ে পড়ানো হয়, তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—
প্রথম বছর: পুরো যন্ত্রকৌশল সম্পর্কে একটি খসড়া ধারণা, পাশাপাশি বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলোর সম্পর্কে পড়ানো হয়।
দ্বিতীয় বছর: থার্মোডাইনামিকস, মেকানিকস, সলিড মেকানিকসের বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়।
তৃতীয় বছর: ফ্লুইড ডাইনামিকস, হিট ট্রান্সফার; তথা যন্ত্রকৌশলের একদম মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে পড়ানো হয়।
চতুর্থ বছর: যে যার ইচ্ছামতো রিনিউয়েবল ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোবাইল, মেকাট্রনিকস, রোবটিকস, এরোডায়নামিসক ইত্যাদি বিশেষায়িত বিষয় পড়তে পারেন।
ভবিষ্যৎ কী?
নিজেদের মতো করে যন্ত্রকৌশলীরা প্রকৌশল জগতে অবদান রেখে যাচ্ছেন। ভবিষ্যৎ বিশ্বে শক্তির সংকট মোকাবিলায়ও অন্যতম ভূমিকা রাখবেন এ টেকনোলজির ইঞ্জিনিয়াররা। এককথায় বলতে গেলে, যন্ত্রকৌশলের ভবিষ্যতের কথা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। যতদিন সভ্যতা থাকছে; ততদিনই যন্ত্রকৌশলীদের প্রয়োজন থাকবে।
ক্যারিয়ার কোথায়?
দেশের বিভিন্ন পাওয়ার প্ল্যান্টে প্রতিনিয়ত যন্ত্রকৌশলীদের চাহিদা আছে। বাংলাদেশে গড়ে উঠছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে এ টেকনোলজির ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মসংস্থানও বাড়ছে। এ ছাড়া বিদেশেও বিভিন্ন অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠানে, ইনটেল থেকে শুরু করে আরও অনেক বহুজাতিক, আন্তর্জাতিকমানের প্রতিষ্ঠানেও এ টেকনোলজির কাজের সুযোগ আছে। বর্তমানে দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ইউরোপ-আমেরিকায় অহরহ যাচ্ছেন উচ্চতর পড়ালেখা ও গবেষণার কাজে। এতে সেখানেও তারা নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি পেশা; যেখানে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই আছে বিস্তৃত কর্মসংস্থানের সুযোগ। তবে শুধু ডিগ্রি অর্জন করলেই হবে না। আধুনিক সফটওয়্যার জ্ঞান ও বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সহজেই একটি সফল ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কর্মসংস্থান
সরকারি চাকরি
গণপূর্ত বিভাগ
বিভিন্ন সরকারি স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ ও নির্মাণকাজে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন হয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ
সেতু, রাস্তা, যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ হয়।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড
পাওয়ার প্লান্ট পরিচালনা, মেইনটেন্যান্স ও মেশিনারি ব্যবস্থাপনায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড
পানি সরবরাহ ব্যবস্থার যান্ত্রিক অংশ নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করা হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে
রেল ইঞ্জিন, ওয়াগন, যন্ত্রপাতি এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন।
বিসিক, বিটাক, বিসিআইসি
শিল্প উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও উৎপাদন খাতেও এ টেকনোলজির ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ হয়।
এ ছাড়া প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং দেশের বিভিন্ন সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে।
আরও পড়ুন
বেসরকারি চাকরি
উৎপাদন ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান
সিমেন্ট, টেক্সটাইল, ইস্পাত, ফার্মাসিউটিক্যালস, ফুড প্রসেসিং কারখানায় প্রোডাকশন ও মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ।
বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র
ইউনাইটেড পাওয়ার, সামিট পাওয়ার, কনফিডেন্স পাওয়ার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ।
বহুজাতিক কোম্পানি
দেশের বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিতে সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার, প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের সুযোগ।
গাড়ি ও অটোমোবাইল শিল্প
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গাড়ির কোম্পানিতে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার বা মেইনটেন্যান্স সুপারভাইজার হিসেবে কাজ।
প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও সেলস ইঞ্জিনিয়ারিং
যন্ত্রাংশ বা মেশিন বিক্রি ও পরামর্শভিত্তিক কাজে সেলস বা মার্কেটিং পদে চাকরি।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ঘরে বসেই ডিজাইন, প্রজেক্ট রিপোর্ট ইত্যাদি কাজ করার সুযোগ আছে। এদিকে বেসরকারি বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা হিসেবেও ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।
কোথায় পড়বেন
যদি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বা ডিপ্লোমা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চান, তাহলে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে।
ডিপ্লোমা শেষে সরকারিভাবে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) বিএসসি করার সুযোগ আছে। এ ছাড়া দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বিএসসি করা যাবে।
এসইউ/এমএস