ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে বিসিএস পুলিশ ক্যাডার সাইফুল

মো. সাইফুল ইসলাম কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার সন্তান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। একাডেমিক পড়াশোনা শেষে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সাফল্যের দেখা পান। সাইফুল ৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেছেন।
তার ৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার হওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: আপনার বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা সম্পর্কে বলুন—
মো. সাইফুল ইসলাম: আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার বকুসার গ্রামে। এ গ্রামেই আমার সোনালি শৈশব কেটেছে। মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠা। বাবা কৃষিকাজ করতেন। এখনো সে কাজই করেন। তাই কৃষির সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক আছে। এসএসসি পর্যন্ত আমি গ্রামের বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করেছি। প্রাথমিক শিক্ষার শুরু সুন্দরদৌল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়ে আমড়াতলী সরকারি প্রথামিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এসএসসি পরীক্ষা দিই আমড়াতলী সি আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এরপর অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজে ভর্তি হই। কলেজ পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় আসা। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে ভর্তি হই। সেখান থেকেই বিএসসি ও এমএসসি সম্পন্ন করি।
জাগো নিউজ: ৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন ছিল?
মো. সাইফুল ইসলাম: বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার আমার প্রথম পছন্দ ছিল। তাই এ চাকরি পাওয়ার অনুভূতি অন্যরকম আনন্দের! আমার সব সময়ই মনে হতো—এ চাকরিতে আমি নিজেকে সর্বোচ্চ বিকশিত করতে পারবো। চ্যালেঞ্জিং চাকরি হিসেবে বিসিএস পুলিশ সব সময়ই আমাকে আকর্ষণ করতো।
জাগো নিউজ: বিসিএস দেবেন এমন ভাবনা মাথায় এলো কীভাবে?
মো. সাইফুল ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় গবেষক হওয়ার ইচ্ছা ছিল। সেই লক্ষ্য থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট বেছে নিই। বিভিন্ন বাস্তবতায় লক্ষ্য পরিবর্তন হয়ে সরকারি চাকরির দিকে ফোকাস শুরু হয়। সরকারি চাকরি হিসেবে বিসিএসই প্রথম পছন্দ ছিল। তখন থেকে বিসিএস দেওয়ার ভাবনা মাথায় আসে।
আরও পড়ুন
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
মো. সাইফুল ইসলাম: বিসিএসের পড়াশোনা শুরু করি চতুর্থ বর্ষের শেষদিক থেকে। এর আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে বিভিন্ন বিসিএস গ্রুপে যুক্ত ছিলাম। ফলে বিসিএস নিয়ে ধারণা পূর্ব থেকেই ছিল। এরপর বিগত বছরের প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করে সাবজেক্ট ভিত্তিক প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করি। ৩৮তম বিসিএসে প্রথম আবেদন করি এবং শিক্ষা ক্যাডারে (আইসিটি) সুপারিশপ্রাপ্ত হই। এরপর চাকরির পাশাপাশি প্রস্ততি নিয়ে ৪১তম বিসিএসে ট্যাক্সেশন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই এবং ৪৩তম বিসিএসে প্রথম পছন্দ বিসিএস পুলিশে সুপারিশপ্রাপ্ত হই এবং যোগদান করি।
জাগো নিউজ: বিসিএস জার্নিতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল?
মো. সাইফুল ইসলাম: প্রতিবন্ধকতা বলতে বিসিএসের দীর্ঘ যাত্রা মাঝেমাঝে ক্লান্তিকর মনে হতো। তা ছাড়া যেহেতু তীব্র প্রতিযোগিতা, তাই এক ধরনের অনিশ্চিয়তা বোধও ছিল। তবে এসব ক্ষেত্রে আমার পরিবারকে সব সময় পাশে পেয়েছি।
জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
মো. সাইফুল ইসলাম: সব সময় বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা ছিল। তারা সব সময় চাইতেন আমি যাতে ভালো কিছু করি। আমার মনে হতো—তারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, অন্তত এর জন্য হলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত।
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
মো. সাইফুল ইসলাম: বিসিএসের প্রশ্ন প্যাটার্ন, প্রার্থীর স্ট্রং ও উইক পয়েন্ট, তীব্র প্রতিযোগিতা, দীর্ঘ সময় ধরে লেগে থাকার ধৈর্য্য—এসব বিবেচনা করে সিদ্বান্ত নিতে হবে; প্রার্থী আসলেই বিসিএস পরীক্ষায় বসার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত কি না। প্রস্তুতির জন্য প্রথমে পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন নিয়ে আ্যনালাইসিস করতে হবে। তারপর সাবজেক্ট ভিত্তিক প্রিপারেশন নিতে হবে। এ ছাড়া পরীক্ষার আগে মডেল টেস্ট দেওয়া যেতে পারে।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. সাইফুল ইসলাম: ভবিষ্যতে একজন যোগ্য, দক্ষ ও মানবিক পুলিশ অফিসার হয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই।
এসইউ/এমএস