প্রার্থীদের আন্দোলন

৪৩তম বিসিএসে বাড়ছে ৪০০ ক্যাডার পদ, ফল প্রকাশ একসঙ্গেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫৪ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

৪৩তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে পদ সংখ্যা বাড়িয়ে নতুন করে পছন্দক্রম (চয়েজ) নেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রার্থীরা আন্দোলন করছেন। একই সঙ্গে তারা নন-ক্যাডারের ফল পৃথকভাবে প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে প্রার্থীদের সেই দাবি পূরণ করা হবে কি না, তা নিয়ে এখনো টু শব্দও করেনি সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

তবে ক্যাডার পদ সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে থাকা এক হাজার ৮১৪ পদের সঙ্গে যোগ হচ্ছে আরও চার শতাধিক পদ। ফলে দুই হাজার দুইশ’র বেশি ক্যাডার পদে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হতে পারে। এর সঙ্গে নন-ক্যাডারে এক হাজার ৩৪২টি পদে নিয়োগের সুপারিশ করবে পিএসসি।

সব মিলিয়ে ৪৩তম বিসিএসে চলতি সপ্তাহে নিয়োগের সুপারিশ পেতে যাচ্ছেন সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি চাকরিপ্রত্যাশী। এটিই হবে প্রথমবারের মতো ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে একসঙ্গে ফল প্রকাশ।

আরও পড়ুন>> কাফনের কাপড় জড়িয়ে আজও পিএসসির সামনে চাকরিপ্রার্থীরা

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) পিএসসির একজন সদস্য ও পরীক্ষা শাখার তিনজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তাদের প্রত্যেকে জানান, ক্যাডার পদ কিছুটা বাড়লেও নন-ক্যাডারে বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। চলতি সপ্তাহের যে কোনো দিন ক্যাডার ও নন-ক্যাডারে একসঙ্গে ফল প্রকাশ করা হবে।

নাম প্রকাশ না করে পিএসসির একজন সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘৪০৩ অথবা ৪০৪টি পদ বাড়ানো হতে পারে। সেটাও ক্যাডারে। নন-ক্যাডারে কোনো পদ বাড়ছে না। ক্যাডারে যে পদগুলো বাড়ছে তার মধ্যে কৃষি, খাদ্য, রেলওয়ে, কর ও প্রাণিসম্পদে। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বাড়ছে কৃষি ক্যাডার। প্রায় দুইশ’র মতো কৃষি ক্যাডার পদ বাড়ানো হচ্ছে। চূড়ান্ত সুপারিশে সুনির্দিষ্ট পদ দেখতে পাবেন সবাই।’

পিএসসির পরীক্ষা শাখার (ক্যাডার) দুজন উপ-পরিচালকও একই রকম তথ্য জানিয়েছেন। তারা জানান, এ সপ্তাহেই ফল প্রকাশ হবে। ক্যাডার ও নন-ক্যাডারে একসঙ্গেই নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে কাজ চলছে। ক্যাডারের ফল প্রস্তুত। নন-ক্যাডারের কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো দু-একদিন লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে বুধ বা বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশ হতে পারে।

আরও পড়ুন>> পেছনের ফটক দিয়ে পিএসসি ছাড়লেন কর্মকর্তারা 

২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। ২০২২ সালের জুলাইয়ে লিখিত পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করে পিএসসি। গত ২০ আগস্ট লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ৯ হাজার ৮৪১ জন।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী-এ বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৮১৪ কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০ জন, পুলিশ ক্যাডারে ১০০, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২৫, শিক্ষা ক্যাডারে ৮৪৩, অডিটে ৩৫, তথ্যে ২২, ট্যাক্সে ১৯, কাস্টমসে ১৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এর সঙ্গে আরও চারশ’র মতো পদ বাড়াছে। ফলে সব মিলিয়ে দুই হাজার দুইশর বেশি পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হতে পারে।

এদিকে, নন-ক্যাডার পদ বাড়ানো এবং ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের ফল পৃথকভাবে প্রকাশের দাবিতে আন্দোলন টানা তিন সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন কিছু ফলপ্রত্যাশী। তাদের দাবি নিয়ে পিএসসিতে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনাও হয়নি বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্যমতে, ‘পিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এটা তাদের অধীনস্থ কোনো ইস্যু নয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যদি পদ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়, তাহলে ভেবে দেখবে।’

আরও পড়ুন>> নন-ক্যাডার বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবিতে পিএসসির সামনে অবস্থান 

আর আগেই ঘোষণা দেওয়া ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের ফল একসঙ্গে প্রকাশের সিদ্ধান্তে এখনো অটল পিএসসি। চলতি সপ্তাহে একসঙ্গে এ ফল প্রকাশ করতে ছুটির দিনেও কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরীক্ষা শাখার কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন সোমবার দুপুরে জাগো নিউজকে বলেন, ‘কে কিসের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন, তা আমাদের ভাবার বিষয় না। আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা মতো শূন্য পদে দ্রুততম সময়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগে সুপারিশ প্রক্রিয়া শেষ করতে কাজ করছি। পিএসসি বিসিএসের জট রাখতে চায় না। জঞ্জাল সরাতে আমরা কাজ করছি।’

এদিকে সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে পদ বাড়ানোর দাবিতে মানববন্ধন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। ছুটির দিন হওয়ায় এদিন পিএসসির সামনে কোনো কর্মসূচি রাখেননি তারা।

আরও পড়ুন>> বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনার ছবি হাতে পিএসসির সামনে প্রার্থীদের অবস্থান 

নিলুফা ইয়াসমিন নামে আন্দোলনরত একজন প্রার্থী জাগো নিউজকে বলেন, ‘দ্রুত সময়ে ফল হোক সেটাতো আমরাও চাই। একটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির পর দুই-তিন বছর অমরা সেটা নিয়ে পড়ে আছি। লিখিত পরীক্ষায় পাস করলে সবার মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। অন্তত নন-ক্যাডরের একটি চাকরি হয়তো হয়ে যাবে। কিন্তু ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় ক্ষেত্রে এবার পদ সংখ্যা এতই কম যে, লিখিত পরীক্ষায় পাস করা তিনভাগের একভাগ প্রার্থীও চাকরি পাবেন না।

তিনি বলেন, ‘অথচ সর্বশেষ কয়েকটি বিসিএস দেখুন। সেখানে দেখবেন ৯ হাজার প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষা দিলে অন্তত সাড়ে ৫ থেকে ছয় হাজার প্রার্থী ক্যাডার হোক বা নন-ক্যাডার; একটা চাকরি অন্তত পেয়ে যান। খালি হাতে ফেরেন খুব কম। কিন্তু এবার খালি হাতে ফেরার সংখ্যাটা বেশি হবে। এজন্যই আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। শেষ পর্যন্ত আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো। আশা করি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পিএসসি আমাদের দাবি বিবেচনা করবে।’

এএএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।