কাফনের কাপড় জড়িয়ে আজও পিএসসির সামনে চাকরিপ্রার্থীরা

৪৩তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদ সংখ্যা বাড়িয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে আজও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সামনে অবস্থান কর্মসূচি করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রার্থীরা।

চাকরিপ্রার্থীরা নন-ক্যাডারের বিজ্ঞপ্তি ও পছন্দক্রম বাতিল, ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের ফল পৃথকভাবে প্রকাশ এবং আগের বিসিএসগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পদ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন: শহীদ মিনারে ৪৩তম বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীদের মানববন্ধন 

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা বলেন, ৪৩তম বিসিএসে হঠাৎ ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের ফল একসঙ্গে দিতে তড়িঘড়ি করে খুবই অল্পসংখ্যক পদে নন-ক্যাডারের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে পিএসসি। সেই পদগুলোতে পছন্দক্রম নিয়েছে। এতে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ অসংখ্য প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষা দিয়েও নন-ক্যাডারের চাকরি পাবেন না। এটা ৪৩তম ব্যাচের সঙ্গে স্পষ্টই বৈষম্য। এ প্রক্রিয়া বন্ধ করে পদ বাড়িয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

আরও পড়ুন: কাফনের কাপড় পরে পিএসসির সামনে চাকরিপ্রার্থীরা 

লামিয়া শাবনাজ নামে একজন প্রার্থী জাগো নিউজকে বলেন, গত কয়েকটি বিসিএসে নন-ক্যাডারে প্রায় চার হাজার করে প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। অথচ সেখানে এবার মাত্র ১ হাজার ৩৪২টি পদ। ৪১তম বিসিএসের নন-ক্যাডারে ফল প্রকাশের পর দ্রুত আরেকটা ব্যাচের (৪৩তম) ফল প্রকাশ করতে গিয়ে পিএসসি আমাদের বৈষম্যের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি, নন-ক্যাডারের ফল আলাদাভাবে প্রকাশ করা হোক এবং পদ বাড়িয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হোক।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনার ছবি হাতে পিএসসির সামনে প্রার্থীদের অবস্থান 

কাফনের কাপড় পরে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সিরাজুল তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, একটা বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির পর পরীক্ষা শেষ করতে তিন থেকে চার বছর সময় লেগে যায়। আমাদের তারুণ্য এখানেই ফুরিয়ে যায়। অথচ লিখিত পরীক্ষায় টিকে মৌখিক পরীক্ষা অংশ নিয়েও আমাদের এখন খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। এ বৈষম্য আমরা মানবো না। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

আরও পড়ুন: নন-ক্যাডার বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবিতে পিএসসির সামনে অবস্থান 

এদিকে, সকালে আন্দোলনকারীরা পিএসসির ফটকে তালা দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। পরে তারা পিএসসির সামনের দুই ফটকে অবস্থান নেন। অনেকে কাফনের কাপড় পরে, কেউ গলায় মুলা ঝুলিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন।

আন্দোলনরতদের অনেকেরে হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দেখা গেছে। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নেই’ স্লোগানও দিচ্ছেন।

জানা গেছে, ৪৩তম বিসিএসে ক্যাডার ও নন-ক্যাডারে একসঙ্গে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে পিএসসি। ক্যাডার পদের ফল প্রস্তুতের কাজ চলমান। পাশাপাশি নন-ক্যাডারে শূন্য পদ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে যারা নন-ক্যাডারে চাকরি করতে চান, শূন্য পদে তাদের পছন্দক্রমও (চয়েজ) নিয়েছে পিএসসি।

আরও পড়ুন: বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবির মধ্যেই নন-ক্যাডারে আবেদন শুরু 

তবে অল্পসংখ্যক পদে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। তারা পদ আরও বাড়িয়ে ৪৩তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানাচ্ছেন। এ দাবিতে টানা তিন সপ্তাহ ধরে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি করেছেন প্রার্থীরা। পিএসসি চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে লিখিত আবেদনও দিয়েছেন তারা। একই আবেদন দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকেও।

আরও পড়ুন: পেছনের ফটক দিয়ে পিএসসি ছাড়লেন কর্মকর্তারা 

জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আনন্দ কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ক্যাডার পদের ফল তৈরির কাজ শেষ। নন-ক্যাডারে যে পছন্দক্রম নেওয়া হয়েছে, সেটা যাচাই-বাছাই করে ফল প্রস্তুতের কাজ চলছে। দ্রুত ফল প্রকাশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ সপ্তাহে ফল প্রকাশ করা হতে পারে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) পিএসসির সামনে কাফনের কাপড় পরে অবস্থান নেন প্রার্থীরা। তারা পিএসসির সামনের দুটি ফটকে অবস্থান নেওয়ায় অফিস শেষে কর্মকর্তারা পেছনের ফটক দিয়ে বেরিয়ে যান।

এদিকে, গত ২০ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী- ৪৩তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে ১ হাজার ৩৪২ শূন্যপদে নিয়োগে সুপারিশ করবে পিএসসি। পদগুলোর মধ্যে নবম গ্রেডের ১৯৬টি, দশম গ্রেডের ৮৬১টি, ১১তম গ্রেডের ৬টি এবং ১২তম গ্রেডের ২৭৯টি।

এএএইচ/এমআরএম/জিকেএস