অন্যের স্ত্রীকে বিয়ের মামলা

সাংবাদিক দেখে মাস্ক পরে দ্রুত চলে গেলেন নাসির-তামিমা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০৬ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানার বিরুদ্ধে করা মামলা শুনতে বিব্রত প্রকাশ করেছেন আদালত। এরপর মামলাটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাছে বদলির আদেশ দেন বিচারক। সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান এ আদেশ দেন।

এদিন মামলাটিতে নাসির ও তামিমা সুলতানার আত্মপক্ষ শুনানির দিন ধার্য ছিল। নাসির ও তামিমা সুলতানা আদালতে হাজির হন। শুনানির সময় আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন নাসির ও তামিমা। এরপর শুনানি শেষ হলে মুখে মাস্ক পরে এজলাস ত্যাগ করে দ্রুত নিচে নামতে যান তারা।

তবে আদালতে কর্মরত সাংবাদিকরা তাদের সামনে ক্যামেরা ধরে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে বিব্রতবোধ করেন তারা। এসময় মুখ লুকিয়ে বারবার সাংবাদিকদের পাশ কাটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। প্রায় তিন মিনিট ধরে এমন লুকোচুরির পর একপর্যায়ে মামলার বিষয়ে নাসির তামিমার বক্তব্য তাদের আইনজীবী তুলে ধরবেন বলে জানান। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন নাসির তামিমার আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু।

তিনি বলেন, এ মামলার বিচার চলছে। এ অবস্থায় বাদীপক্ষের আইনজীবী গত ১৬ এপ্রিল মিডিয়ায় বলেন নাসির ব্যভিচার করে তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে আদালতে বিচার চলছে। বিচার শেষে আদালত রায়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন নাসির তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন কি না এবং ব্যভিচারের সম্পর্ক করেছেন কি না। আগেভাগেই বাদীপক্ষের আইনজীবীর এমন বক্তব্য দেওয়া আদালত অবমাননার শামিল। একই সঙ্গে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার পুরো অভিযোগ না শুনিয়ে সারসংক্ষেপ পড়ে শোনানোর আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।

অভিযোগের বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, মামলার কেস রেকর্ডে যা আছে তাই বলেছি, যা সত্যি তাই বলেছি। আদালতকে নিয়ে কোনো কিছু বলিনি বরং আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করা কোনো অপরাধ নয়। এ ধরনের আবেদন উদ্দেশ্যমূলক। আমাকে মামলা পরিচালনা থেকে বিরত রাখার জন্য আগেও প্রকাশ্য আদালতে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বারবার আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। তবে এসব করে লাভ হবে না। আইনজীবীকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমি আইনগতভাবেই সব বিষয় মোকাবিলা করবো।

এদিন দুপক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত বলেন, উভয় পক্ষেরই আবেদন দেওয়ার অধিকার আছে। এটা একটা ব্যস্ত আদালত। এক মামলার শুনানি করতে যে ধৈর্য দরকার এত সময় এই আদালতের নেই। এতে অন্য মামলায় ইফেক্ট পড়ে। আমি আসলে বিব্রতবোধ করছি। মামলাটা অন্য কোর্টে পাঠিয়ে দেই। এতে আপনারা কি নাখোশ হবেন? তখন দুপক্ষের আইনজীবীরাই বলেন, এতে তাদের আপত্তি নেই।

তখন আদালত বলেন, মামলাটা বদলি করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠিয়ে দিচ্ছি। সিএমএম মামলাটি একটা অন্য কোর্টে পাঠিয়ে দেবেন।

এর আগে গত ১৬ এপ্রিল মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।

২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি একই আদালত ক্রিকেটার নাসির ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে নাসিরের শ্বাশুড়ি সুমি আক্তারকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই বছরের ৬ মার্চ মহানগর দায়রা আদালতে নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন করেন তাদের আইনজীবী কাজী নজিব্যুল্লাহ হিরু। অন্যদিকে সুমি আক্তারকে অব্যাহতির আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন দায়ের করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসান।

২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের রিভিশন অবেদন নামঞ্জুর করে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মেদ মামলাটির বিচার চলবে বলে আদেশ দেন। একই সঙ্গে নাসিরের শ্বাশুড়ি সুমি আক্তার মামলার দায় থেকে অব্যাহতি থাকবেন বলে আদেশ দেন।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তামিমার সাবেক স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তামিমা ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের আট বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তামিমা পেশায় একজন কেবিন ক্রু। ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তামিমা ও নাসিরের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা রাকিবের নজরে আসে। পরে পত্র-পত্রিকায় তিনি ঘটনার বিষয়ে সম্পূর্ণ জানেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, রাকিবের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক চলমান অবস্থাতেই তামিমা নাসিরকে বিয়ে করেছেন; যা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন নাসির। তামিমা ও নাসিরের এমন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে রাকিব ও তার আট বছর বয়সী কন্যা মারাত্মভাবে মানসিক বিপর্যস্ত হয়েছেন। আসামিদের এমন কার্যকলাপে রাকিবের চরমভাবে মানহানি হয়েছে, যা তার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

এমআইএন/এমআইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।