জবানবন্দিতে আসিফ মাহমুদ
আন্দোলন বন্ধ না করলে আমাদের হত্যার নির্দেশ আছে বলে ভয় দেখাতো ডিবি
জুলাই আন্দোলন বন্ধে রাজি না হলে ছয় সমন্বয়ককে হত্যার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশনা ছিল বলে তৎকালীন ডিবি কর্মকর্তারা ভয় দেখাতেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, আন্দোলন প্রত্যাহারে আমাদের ওপর চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন তৎকালীন ডিবিপ্রধান মো. হারুন অর রশীদ ও রমনা জোনের ডিসি হুমায়ুন কবীর। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ করে আন্দোলন প্রত্যাহারের চাপসহ ভয়ভীতি দেখানো হয়। আমাদের বারবার বলা হয় যে, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই তুলে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে আন্দোলন প্রত্যাহারের চাপ দেওয়া হচ্ছে। আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি না হলে আমাদের হত্যা করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল। তারা (ডিবি) আরও বলে যে, তারা দয়া করে আমাদের এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষের ১৯তম সাক্ষী হিসেবে প্রথম দিনের মতো তার জবাবন্দি পেশ করেন। পরবর্তী জবানবন্দি পেশ করার জন্যে ১৬ অক্টোবর দিন ঠিক করেছেন আদালত।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আরও পড়ুন
‘হাসিনা-কামালের হত্যার নির্দেশের পরও ডিবি বলতো, তারা দয়া করে বাঁচিয়ে রেখেছে’
চানখাঁরপুলে আমার সামনেই পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হন
জবানবন্দিতে আসিফ মাহমুদ বলেন, গত বছরের ২৬ জুলাই গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় নাহিদ ইসলাম, আবু বাকের মজুমদারসহ আমাকে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নেওয়া হয়। ২৭ জুলাই সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকেও আনা হয়। পরদিন সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকেও তুলে আনা হয়। আন্দোলন প্রত্যাহার করার জন্য সেখানে আমাদের চাপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে আমাদের পরিবারের সদস্যদেরও ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। তাদের দিয়ে আমরা সুস্থ আছি বলে মিডিয়ায় বক্তব্য প্রচারে বাধ্য করা হয়।
তিনি বলেন, ডিবি তাদের লিখিত একটি বক্তব্য জোরপূর্বক আমাদের দিয়ে সই করিয়ে পাঠ করায় এবং সেটি মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। ডিবি অফিসে বন্দি অবস্থায় আমরা আমরণ অনশন শুরু করি। টানা ৩২ ঘণ্টা অনশনে থাকার পর আমাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ আগস্ট আমাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
সরকারের এ উপদেষ্টা আরও বলেন, ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপে ১ দফা কর্মসূচি ও অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করি। ওই কর্মসূচিতে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একাত্মতা ঘোষণা করে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে শাহবাগে আমাদের সমাবেশ ছিল। সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগে আমাদের সমাবেশস্থলে পুলিশ গুলি চালায় এবং সেখানে কমপক্ষে ৪ জন নিহত হন এবং অসংখ্য আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা আহত হওয়ার খবর পাই। সেদিন বিকেলে ৫ আগস্ট সারাদেশে বিক্ষোভ ও ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এই কর্মসূচি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন কর্তৃক ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয় মর্মে আমরা জানতে পারি। এ কারণে সর্বসম্মতি নিয়ে আমি সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করে ২ ঘণ্টার মধ্যে পরবর্তী কর্মসূচি পরিবর্তন করে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ৬ তারিখের পরিবর্তে ৫ তারিখে পালনের আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করি, যোগ করেন আসিফ মাহমুদ।
এফএইচ/কেএসআর/এমএস