প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরলে সংসদের ক্ষমতা খর্ব করবে কি না
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরলে সেটি সংসদের ক্ষমতা খর্ব করবে কি না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
বুধবার (২২ অক্টোবর) তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
এদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে দিয়ে ১৪তম জাতীয় নির্বাচন থেকে তা কার্যকর চেয়ে আপিল বিভাগে শুনানি করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া।
শুনানিতে শরীফ ভূঁইয়া বলেন, হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগ পর্যন্ত মোট ১২ জন বিচারপতি এ মামলাটি শুনেছেন। তাদের মধ্যে আটজনই তা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) রাখার পক্ষে মত দেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকসহ চারজন তা বাতিল করতে বলেন।
আরও পড়ুন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরলে কবে থেকে কার্যকর হবে?
দীর্ঘস্থায়ী গণতন্ত্রের পথে যেতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরতে চাই
এ আইনজীবী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আপিল বিভাগ একটি গাইডলাইন করে দিতে পারেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংক্রান্ত মামলার আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো মামলার আপিল শুনানি হবে না। কারণ, এটিই এখন সবচেয়ে বড় মামলা।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের প্রথম দিনের শুনানি হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই বছরের ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিল বিভাগের ২০১১ সালের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে প্রথম আবেদন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্যরা হলেন–তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
একই বছরের ১৬ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। এর এক সপ্তাহ পর ২৩ অক্টোবর রিভিউ আবেদন করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
১৯৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। তবে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট রুল জারি করেন।
২০০৪ সালের ৪ আগস্ট চূড়ান্ত শুনানি শেষে রিটটি খারিজ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করা হয়। আদালত এ মামলায় আট জন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ করে তাদের মতামত শোনেন। তাদের মধ্যে পাঁচ জন সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পক্ষে মত দেন।
আরও পড়ুন
দলীয় লোক সরিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন চায় বিএনপি
বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, এ সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছে
তারা হলেন–ড. কামাল হোসেন, টিএইচ খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। অপর অ্যামিকাস কিউরি ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে মতো দেন।
ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ড. এম জহির তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আমূল সংস্কারের পক্ষে মত দিয়ে তাদের প্রস্তাব আদালতে তুলে ধরেন। এছাড়া তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দেন।
২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং ৩ জুলাই গেজেট প্রকাশিত হয়। এরপর টানা তিনটি জাতীয় নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) দলীয় সরকারের (আওয়ামী লীগের) অধীনে অনুষ্ঠিত হয়।
এফএইচ/এমকেআর/এমএস