পিলখানা ট্র্যাজেডি : হাইকোর্টের যুগান্তকারী পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৫৫ এএম, ০৮ জানুয়ারি ২০২০

পিলখানা সদর দফতরে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় (ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর) প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বহুল আলোচিত যুগান্তকারী এক ঐতিহাসিক মামলায় ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

রায় প্রকাশের বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন। তিন বিচারপতির সইয়ের পর ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার রায়টি বুধবার প্রকাশ করা হয় বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

হাইকোর্টে রায়দানকারী বিচারকরা হলেন- বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

পরে এই রায়ের অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হবে। বৃহত্তর বেঞ্চের তিন বিচারপতির ঐক্যমতের ভিত্তিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আসামির ফাঁসির আদেশ এসেছে এ মামলার রায়ে।

বিশ্বে আলোচিত মামলাগুলোর মধ্যে আসামির দিক থেকে এবং রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা বিবেচনায় সবচেয়ে বড় মামলা এটি। বিচারিক আদালতে রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে রায়ও ঘোষণা হয়েছে। দীর্ঘদিন দেশি-বিদেশি মামলার রায় পর্যালোচনার পর হাইকোর্টের রায় লেখা শেষ হলো।

রায়ে প্রখ্যাত দার্শনিক, আইনবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, অপরাধবিজ্ঞানী, দণ্ডবিজ্ঞানী, চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের গবেষণায় অপরাধী, অপরাধের ধরণ ও কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে প্রদত্ত মতবাদ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর পর পর দুদিনে এ রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্ট রায়ে ১৩৯ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। এ রায় প্রকাশের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের অনুমোদন প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হলো।

জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি মো. শওকত হোসেন মূল রায় লিখেছেন। তিনি প্রায় সাড়ে ১১ হাজার পৃষ্ঠার রায় লিখে বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতির কাছে পাঠান। এরপর বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী পৃথকভাবে তার অংশ লেখেন। তিনিও প্রায় ১৬ হাজার পৃষ্ঠা লিখেছেন। এই দুই বিচারপতির সম্মিলিত রায় প্রায় ২৮ হাজার পৃষ্ঠা। এরপর বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার লিখেছেন ১১শ পৃষ্ঠা।

hc

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বিডিআর সদর দফতরে ৫৭ জন সেনা সদস্যসহ ৭৪ জনকে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত। ওই রায়ের ডেথ রেফারেন্স এবং আপিলের ওপর হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এর মধ্যে ১ জন মারা গেছেন। বাকি ১২ জনের মধ্যে ৮ জনের সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও অন্য চারজনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।

এখন এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ রায় পর্যালোচনা করে উচ্চতর আদালতে আপিলের কথা জানিয়েছেন।

হাইকোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রেখেছেন। বাকি ১৪ জনের মধ্যে দু’জন আগেই মারা গেছেন। আর অন্য ১২ জন খালাস পেয়েছেন।

খালাসপ্রাপ্ত ৬৯ জনের সাজা চেয়ে ফৌজদারি আপিল করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন ও চারজনকে সাতবছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর অন্য ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রয়েছে। সব মিলিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন ১৮৫ জন।

এদিকে বিচারিক আদালত ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। বাকি ২৫৩ জনের মধ্যে ১৮২ জনকে ১০ বছর করে, ২ জনকে ১৩ বছর করে, ৮ জনকে ৭ বছর করে এবং ৪ জনকে ৩ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকিদের মধ্য থেকে খালাস পেয়েছেন ২৯ জন। অবশ্য ২৮ জন আপিলই করেননি।

এদিকে হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলী মুক্তি পাওয়ার আগেই অসুস্থ হয়ে ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

 

এফএইচ/এনএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।