অসচ্ছল আইনজীবীদের ৪ কোটি টাকা সহায়তা দিচ্ছে বার কাউন্সিল
করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের অসচ্ছল আইনজীবীদের চার কোটি টাকা সহায়তা দেবে আইনজীবীদের একমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলেও তারা আর্থিক অনুদান দেবেন বলে বার কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে।
আইনজীবীদের সহযোগিতার এ অর্থ বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে দেশের প্রত্যেক আইনজীবী সমিতিতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। পরে সেই অর্থ ওইসব জেলা বারের পক্ষ থেকে অসচ্ছল আইনজীবীদের দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের জন্য যে বরাদ্দ সেটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী নজীব উল্লাহ্ হিরু জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আলোচনা করে একটি বাজেট পেশ করেছি। বাজেটের এই অর্থ ভাগাভাগি করে সারাদেশের আইনজীবী সমিতিগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এরপর ওই টাকা সংশ্লিষ্ট বার থেকে অসচ্ছল মেম্বারদের কাছে পৌঁছে দেবেন আইনজীবী নেতারা।
কত টাকার বাজেট জানতে চাইলে নজিব উল্লাহ্ হিরু বলেন, টোটাল অর্থের হিসাবটা এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই। তবে আমরা বাজেট পেশ করেছি। আশা করি সেটা বারে পৌঁছানো হবে।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে এবং ঢাকা বারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে লোন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা বেনাভোলেন্ট ফান্ড থেকে লোন দেয়ার বিষয়টিও আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
এ বিষয়ে বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ মেম্বার এবং মানবাধিকার ও লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. মোখলেসুর রহমানক বাদল জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে দেশের অসহায় মানুষ ও আইনজীবীদের জন্য সহযোগিতা করতে পাঁচ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ কোটি টাকা দেশের সব আইনজীবী সমিতির (বার) সদস্যদের জন্য, যা বিভিন্ন হারে বণ্টন করে দেয়া হবে। এর সঙ্গে বিভিন্ন আইনজীবী সমিতি থেকে বার কাউন্সিলের পাওনা টাকা সমন্বয় করে আইনজীবীদের বণ্টন করে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এক কোটি টাকা দেয়া হবে, দেশের গরিব অসহায় মানুষদের দেয়ার জন্য।
এদিকে অসচ্ছল আইনজীবীদের সহায়তা করতে ঢাকাসহ দেশের সব জেলার আইনজীবী সমিতিকে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক, বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নজীব উল্লাহ্ হিরু।
তিনি দেশের সব আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনার সমিতির সচ্ছল আইনজীবী বন্ধুদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করে অতি দ্রুত একটি জরুরি সহায়তা ফান্ড গঠন করে অর্থিকভাবে অসচ্ছল আইনজীবী বন্ধুদের সহায়তা করুন।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট কাজী নজীব উল্লাহ্ হিরু জাগো নিউজকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে এবং ঢাকা বারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে লোন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অসচ্ছল আইনজীবীদের নিজ দায়িত্বে খুঁজে বের করে আর্থিক সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ঋণ নেয়ার জন্য তিন হাজারের মতো আইনজীবী আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে। তারা যাচাই-বাছাই করে আইনজীবীদের ঋণ দেবেন।
এদিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে (ঢাকা বার) বিনা সুদে ঋণের জন্য সাত হাজার ৫১১ জন তালিকাভুক্ত সদস্য আবেদন করেছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে পাঁচ হাজার ৪৮৫ জন ঋণের জন্য বিবেচিত হয়েছেন। একজন আইনজীবী সর্বোচ্চ ঋণ পাবেন ৩০ হাজার টাকা।
করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারের সাধারণ ছুটির সঙ্গে মিল রেখে আদালত অঙ্গনও বন্ধ রয়েছে। কেবল জরুরি প্রয়োজনে প্রত্যেক জেলায় একটি করে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট খোলা রয়েছে। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট বার থেকে স্বল্প পরিসরে কোর্ট চালু করতে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেন। এছাড়া অন্যান্য আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির কাছে সীমিত পরিসরে কোর্ট খোলার আবেদন করেন।
এরপর গত ২৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কঠোর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অতীব জরুরি বিষয়গুলো শুনানির নিমিত্তে ছুটিকালীন সময়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে বসবেন। হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সব অধিক্ষেত্রের জরুরি বিষয়গুলো শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। অপর বিজ্ঞপ্তিতে সপ্তাহে দু’দিন জজ কোর্ট খোলা রাখার সিদ্ধান্তও জানানো হয়।
এ দুই বিজ্ঞপ্তি জারির পর আইনজীবীরা কোর্ট চালু না করতে আবেদন জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট চালুর সিদ্ধান্ত ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি সপ্তাহে দু’দিন জজ কোর্ট খোলার বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতাও পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। পরে ২৬ এপ্রিল ফুল কোর্ট সভায় সাধারণ ছুটিতে (৫ মে পর্যন্ত) কোর্ট খোলার বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করা হয়।
এফএইচ/এমএফ/পিআর