পরীক্ষা ছাড়া করোনার রিপোর্ট : সাঈদ-আরিফের রিমান্ড নামঞ্জুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪৪ পিএম, ২৭ জুন ২০২০

করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই মনগড়া রিপোর্ট সরবরাহের অভিযোগে গ্রেফতার দুইজনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন- সাঈদ চৌধুরী (৪৭) ও আরিফুল চৌধুরী (৪০)।

শনিবার দুইজনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। তেজগাঁও থানায় প্রতারণার আরেক মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো পূর্বক তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

অপরদিকে তাদের আইনজীবীরা জামিনের আবেন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সাঈদ তাদের রিমান্ড ও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত বুধবার (২৪ জুন) করোনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার ছয়জনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় আসামি হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজীনার জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

অপরদিকে সাঈদ চৌধুরী, বিপ্লব দাস, মামুনুর রশীদ এবং আরিফুল চৌধুরীকে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মঙ্গলবার (২৩ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিমানবন্দর, আশকোনা ও গুলশান-২ এর কনফিডেন্স টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতার হুমায়ুন কবির এ চক্রের মূলহোতা। তানজীনা পাটোয়ারী তার স্ত্রী। তাদের নেতৃত্বে চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে করোনার পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করত এবং ভুয়া রিপোর্ট দিত। চক্রটি জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিত।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, আটকরা করোনার উপসর্গ থাকা রোগীদের বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে দেন। তবে নমুনা সংগ্রহের পর তা আর পরীক্ষা করা হয় না। তাদের নেই কোনো ল্যাব। কম্পিউটারে ফলাফল লিখে ই-মেইলে তা রোগীর কাছে পাঠিয়ে দেন। এভাবে ইতোমধ্যে ৩৭ জনের ভুয়া কোভিড-১৯ টেস্ট রিপোর্ট জানিয়ে দেন তারা।

নমুনা সংগ্রহের সময় রোগীর বাহ্যিক উপসর্গ দেখে একটা ধারণা থেকে ফলাফল তৈরি করেন। করোনার বাহ্যিক উপসর্গ দেখা দিলে, সেক্ষেত্রে তার পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ উল্লেখ করা হয়। কোনো উপসর্গ না দেখা দিলে তার রিপোর্টে নেগেটিভ উল্লেখ করা হয়।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহমুদ খান বলেন, ‘গুলশানের কনফিডেন্স টাওয়ারের অফিসে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা কম্পিউটারে জাল রিপোর্ট পাওয়া গেছে।’

জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানান, এখন পর্যন্ত তারা ৩৭ জনের করোনা নমুনা সংগ্রহ করে মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছেন। বাসায় গিয়ে স্যাম্পল সংগ্রহ করতে জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন উর রশিদ বলেন, ‘এই চক্রটি আগে জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নামের প্রতিষ্ঠানে বুথের মাধ্যমে করোনার উপসর্গ রয়েছে এমন লোকের নমুনা সংগ্রহের চাকরি করতেন। প্রতিষ্ঠানটি আইইডিসিআর থেকে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহের জন্য অনুমোদিত।’

গত ১২ এপ্রিল তারা এই প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছেড়ে দেন। পরে তারা অনলাইনে ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ব্যবহার করে বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেন।

সেখানে উল্লেখ করা হয় যে, তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেন। তাদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।

তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল উদ্দীন বলেন, ‘বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ারের স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই। তারপরও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে আসছিল। তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে।’

জেএ/বিএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।