টাকার জন্য মৃত করোনা রোগীর হাত বাঁধা : পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ
রাজধানীর মালিবাগের প্রশান্তি হাসপাতালে করোনা রোগী মারা যাওয়ার পরেও টাকার জন্য হাসপাতালের বেডের সঙ্গে মৃতের হাত বাঁধা ছিল কি-না, তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তদন্ত শেষ করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।
একই সঙ্গে, করোনা আক্রান্ত রোগীর রিপোর্টে পজিটিভ না লিখে নেগেটিভ লেখার বিষয়ে অনুসন্ধান করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে (ডিজি) প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে সংঘটিত ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় এফআইআর করার জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন আইনজীবী জহির উদ্দিন লিমন।
এ-সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (২০ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জহির উদ্দিন লিমন। তার সঙ্গে ছিলেন কামাল উদ্দিন আহমেদ ও খালেকুজ্জমান ভূঁইয়া।
এর আগে গত (৭ জুলাই) রাজধানীর মালিবাগের প্রশান্তি হাসপাতালে রোগী মারা যাওয়ার পরেও টাকার জন্য হাসপাতালের বেডের সঙ্গে মৃতের হাত বাঁধা ছিল কি-না, তা খতিয়ে দেখার দাবিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। রিটে বিষয়টি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়। পাশাপাশি ভর্তি হওয়া রোগীকে (সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কর্মকর্তা ডা. মহিন উদ্দিন পারভেজ) জোর করে আইসিইউতে রেখে মৃত্যুর অভিযোগে রোগীর পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আর্জি জানানো হয় রিটে। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চে মৃত রোগীর বড় ভাই জসিম উদ্দিন রুবেলের পক্ষে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জহির উদ্দিন লিমন।
রিটের বিবাদীরা হলেন-স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের (ডিজি) মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) পরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি), শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), প্রশান্তি হাসপাতালের পরিচালক, আইসিইউয়ের দ্বায়িত্বে থাকা ডা. আব্দুল আলিম ও জেনারেল ম্যানেজার।
আইনজীবী জানান, ঘটনার বিষয়ে রিটে বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও পাশাপাশি পরিবারের একমাত্র উপার্জক্ষম পুরুষ মারা যাওয়ার ঘটনায় পরিবারের তিন সন্তানের জন্যে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।
গত ২৪ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে ‘করোনায় মৃত, মালিবাগে টাকার জন্য বেঁধে রাখা হলো লাশের হাত’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ওই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর ওই রোগীকে কথিত আইসিইউতে নেয়া হয়। এরপর ক্রমাগত টাকার চাপ দেয়া হয় রোগীর পরিবারকে। রোগী মারা যান, মৃত্যুর পরেও বেডের সঙ্গে মৃতের হাত বাঁধা ছিল। এমনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর মালিবাগের প্রশান্তি হাসপাতালে।’
করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কর্মকর্তা ডা. মহিন উদ্দিন পারভেজ। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অনেকটা সুস্থ থাকার পরও ১৪ জুন ভর্তি হওয়ার পরই তাকে প্রায় জোর করেই আইসিইউতে পাঠিয়ে দেন আইসিইউ কনসালটেন্ট ডা. এস এম আলীম।
১৮ জুন ভোরে মারা যান মহিন উদ্দিন পারভেজ। স্বজনদের কাছে এক লাখ ৫৬ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেয়া হয়। এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় রোগীর স্বজন রুবেলের মোবাইল কেড়ে নেন ডা. আলীমের ম্যানেজার সাইফুল। তাকে এক রুমে আটকে রাখা হয়। বলা হয়, টাকা না দিলে তাকে র্যাবে দেয়া হবে। তার ভাইয়ের লাশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে দিয়ে দেয়া হবে। পরে রুবেল তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা হাসপাতাল খরচ ও প্রায় ৬০ হাজার টাকা ওষুধের দাম দিয়ে লাশ নিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় ছাড়া পান।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রশান্তি হাসপাতালের মালিক ও আইসিইউ কনসালটেন্ট ডা. এস এম আলীম বলেন, ‘রোগীকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখন আমি সেখানে ছিলামই না। রুবেল যেসব কথা বলেছেন, তা মিথ্যা। তাকে পাগলের মতো মনে হয়েছে। তাছাড়া আমরা এই হাসপাতালে করোনার কোনো রোগী ভর্তি করাই না। শ্বাসকষ্ট হলে ভর্তি করানো হয়।’
পরে এক পর্যায়ে অবশ্য তিনি বলেন, করোনার প্রাথমিক উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের ভর্তি করাই। সিরিয়াস হলে করানো হয় না। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল থেকে করোনা রোগী হিসেবেই এখানে নিয়ে আসা হয়- এমন প্রশ্নে ডা. আলীম বলেন, তারা বলেছে শ্বাসকষ্টের কথা। করোনা নয়। আমাকে মিথ্যা বলা হয়েছে।
এফএইচ/এসআর/এমকেএইচ