বিচার বিভাগ নিয়ে কটাক্ষ করবেন না : প্রধান বিচারপতি
বিচার বিভাগকে নিয়ে কটাক্ষ না করতে রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। বুধবার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে মরহুম ব্যারিস্টার শওকত আলী খানের ৯০তম জন্ম বার্ষিকীতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান তিনি।
এসকে সিনহা বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে কথা বললে আমার খুব কষ্ট হয়। কিছু রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি বিচার বিভাগ নিয়ে কথা বলেন। বিচার বিভাগ নিয়ে কটাক্ষ না করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
আইনজীবীদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, আমরা আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগকে কটাক্ষ করলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবো না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আজকে যখনই কোনো ইস্যু সামনে আসে তখন বারকে বিভক্ত হতে দেখা যায়। এমনকি বিচার বিভাগ নিয়ে কটাক্ষ করতে আমাদের এই আইনজীবীরা পিছপা হন না। এটা খুব কষ্টদায়ক। এই বিচার বিভাগ নিয়ে আপনাদের চিন্তা করতে হবে। অনেক পরীক্ষার পর এই বিচার বিভাগ আজকে এই পর্যায়ে এসেছে।
তিনি বলেন, সেই ব্রিটিশ আমল থেকে কয়েকটি মার্শাল ল’ সংবিধানকে ছিন্ন ভিন্ন করেছে। এই বিচার বিভাগই আবার সংবিধানকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে এনেছে। আপনারা রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন। কিন্তু কেউ বিচার বিভাগকে কটাক্ষ করবেন না। 
গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবাদ মাধ্যমে যারা কাজ করেন মনে রাখতে হবে এটি কোনো ব্যবসা না, পেশা। আজকে আমাদের দেশে এটি ব্যবসা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আজকে আমার দেশের সংবাদ মাধ্যম, তাদের ব্যক্তিগত হীন স্বার্থের জন্য, তারা কোনো দিনই পিছপা হন না, তারা বিচার বিভাগ এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান। আজকে যদি এই সংবাদ মাধ্যমের, তাদের কনটেমট প্রসিডিং করতে সময় নষ্ট করি, তাহলে লাখ লাখ মামলা এগুলো কিভাবে আমরা শেষ করবো। আমি প্রধান বিচারতি হিসেবে সবার প্রতি আহ্বান জানাবো যাতে বিচার বিভাগের মান অক্ষুন্ন থাকে সে ব্যাপরে সবাই চেষ্টা করবেন।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাইকার্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসন, এম ইনায়েতুর রহীম, গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর, মো. মুজিবুর রহমান মিঞাসহ আপিল বিভাগ ও হাইকার্টের বিচারপতিগণ।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদারের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া, হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ফজলুল হক (এফআর) খান, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শম রেজাউল করিম, ড. বশির উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট আসমা আক্তার প্রমুখ।
ব্যারিস্টার শওকত আলী খান ১৯২৬ সালে টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানার লাউহাটি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম আরফান খানের দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন। তার শৈশব এবং কিশোর কিছু সময় ইয়াঙ্গুন (মায়ানমার), কলকাতা ও ঢাকা শহরে কাটান।
ব্যারিস্টার শওকত ১৯৫৭ সাল থেকে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। তিনি ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। একই সঙ্গে সংবিধান প্রণেতা, সুপ্রিমকোর্টের সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও দলের কোষাধ্যক্ষের পদেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি টাঙ্গাইলের নাগপুর এবং মির্জাপুরের সংসদ সদস্য ছিলেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মানবতাবিরোধী বিচারের দাবিতে যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল তিনি আসামির একজন। ২০০৬ সালের ২৯ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এফএইচ/একে/এবিএস