প্রতিবন্ধী কোটা নিয়ে দুই যুগ আগের রিট, অগ্রগতি নেই শুনানির

মুহাম্মদ ফজলুল হক
মুহাম্মদ ফজলুল হক মুহাম্মদ ফজলুল হক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৪ এএম, ০৪ জানুয়ারি ২০২৩
উচ্চ আদালতের ফাইল ছবি

প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন অনুযায়ী সরকার প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কী পদক্ষেপ নিয়েছে কোটা নিয়ে দুই দশক আগে দায়ের করা রিট ও নির্দেশনার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদেশ দিলেও পরে আর শুনানি হচ্ছে না। তবে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব রিটের বিষয়ে শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। ২০০১ সালের ২১ এপ্রিল ৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার দাবিতে পৃথক দুটি রিট আবেদন করা হয়। এখন পর্যন্ত সেই রিটের শুনানি হয়নি।

এরপর ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর বিসিএস ক্যাডারভুক্তদের নির্ধারিত কোটাবিধি অনুসরণ করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রতিবন্ধীদের নিয়োগ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। এই রিটেরও প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারির পরে আর শুনানি হয়নি। অন্যদিকে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের পর ২০১৮ সালে সব কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। এরপর থেকে প্রতিবন্ধীরা তাদের কোটা বহালের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে, যা অব্যাহতভাবে চলছে। যদিও সরকারের দাবি, প্রতিবন্ধী কোটা বাতিল হয়নি। কিন্তু প্রতিবন্ধীরা বলছেন নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর তারা এর প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন না।

আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধী কোটা বহাল আছে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব

তাদের অভিযোগ, প্রতিবন্ধী কোটা প্রথা না থাকায় সরকারের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি সব স্থানে নিয়োগবঞ্চিত প্রতিবন্ধীরা।

প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে জানান প্রতিবন্ধী কোটায় চাকরিপ্রার্থী আলিফ হোসেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স করেছেন। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়কও আলিফ হোসেন।

প্রতিবন্ধী কোটা নিয়ে দুই যুগ আগের রিট, অগ্রগতি নেই শুনানির

কোটার দাবিতে আন্দোলেন সরব প্রতিবন্ধীরা-ফাইল ছবি

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে গেজেটের মাধ্যমে কোটা বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি। সর্বশেষ গত ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছি। আমরা এখন চাচ্ছি ১০ শতাংশ না হোক ৫ শতাংশ কোটা। যদি সেটিও না হয় তবে বিশেষ বিবেচনায় বা কোটায় যেকোনো প্রক্রিয়ায় আমাদের প্রতিবন্ধীদের নিয়োগ দেওয়া হোক।

আরও পড়ুন: বিসিএস প্রতিবন্ধী কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রুল

তিনি আরও বলেন, গত ১৪ ডিসেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ১০০ জন প্রতিবন্ধী উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যে পরিমাণ শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে, তাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ করলে প্রতিবন্ধী কোটার রেশিও অনুযায়ী এক শতাংশও হতো না।

শিক্ষক ও চাকরিজীবীদের নিয়ে কাজ করে আসা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ-জেনেভা কনভেনশন এর সঙ্গে চুক্তিতে প্রতিবন্ধীদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলা আছে। সে হিসেবে প্রতিবন্ধীদের সরকারি চাকরির সুবিধা না দেওয়ায় সরকারের জেনেভা চুক্তি ভঙ্গ হবে।

আরও পড়ুন: কোটা বাতিল হলেও প্রতিবন্ধীরা সরকারি চাকরি পাবেন: প্রধানমন্ত্রী

২০০১ সালে প্রণীত প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন অনুযায়ী সরকার প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে কোন কোন সরকারি চাকরিতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান করা সম্ভব তাও জানাতে বলেছেন আদালত। সরকারের সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। সরকারের সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া প্রতিবেদন পরীক্ষা করে এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে বলে জানান হাইকোর্ট।

প্রতিবন্ধী কোটা নিয়ে দুই যুগ আগের রিট, অগ্রগতি নেই শুনানির

সংবাদ সম্মেলনে বঞ্চনার কথা তুলে ধরছেন চাকরিপ্রার্থীরা-ফাইল ছবি

পৃথক দুটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার দাবিতে ওই বছরের ২১ এপ্রিল হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিট আবেদন করা হয়। রিটে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিসিএস) স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অযোগ্য ঘোষণা করা সংক্রান্ত ১৯৮২ সালের পিএসসি রুলসও চ্যালেঞ্জ করা হয়।

আরও পড়ুন: কোটা পুনর্বহালসহ ৫ দাবি প্রতিবন্ধীদের

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অ্যাডভোকেট স্বপন চৌকিদার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক এবং মানবাধিকার ও প্রতিবন্ধী অধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, অ্যাকশন অন ডিজ্যাবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ডিজ্যাবল্ড উইমেন এই রিটটি করে।

রিটে আইন সচিব, সংস্থাপন সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, পিএসসির চেয়ারম্যান, সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।

প্রতিবন্ধী কোটা নিয়ে দুই যুগ আগের রিট, অগ্রগতি নেই শুনানির

একজন প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীর অনশন-ফাইল ছবি

আরও পড়ুন: আমরা যেন নিজেদের ডালভাতের ব্যবস্থা করতে পারি, সেই সুযোগ দিন 

রিটে বলা হয়েছে, ২০০১ সালের প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইনে সরকার, বিধিবদ্ধ সংস্থা এবং স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের উপযুক্ত চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের নিয়োগ লাভের সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে বলা হয়েছে। এমনকি প্রতিবন্ধীদের সরকারি চাকরিতে কোটা সংক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত বিসিএস এবং জুডিশিয়াল সার্ভিসের চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের নিয়োগের জন্য কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এসব চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের নিয়োগ লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা সংবিধানের ২৬, ২৭, ২৯ এবং ৪০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন বলেও রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়।

আরও পড়ুন: সরকারি চাকরিতে কোটার বাস্তবায়ন চান প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা

এছাড়া ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর বিসিএস ক্যাডারভুক্তদের নির্ধারিত কোটা-বিধি অনুসরণ করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রতিবন্ধীদের নিয়োগ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। পিএসসি চেয়ারম্যান ও জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে সেই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। ৩৪তম বিসিএসে অংশ নেওয়া পাঁচজন প্রতিবন্ধীর দায়ের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারি করে আদেশ দেন। আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শফিকুল ইসলাম।

আইনজীবী জানান, ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রায় দুই হাজার ২০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হলেও এদের মধ্যে মাত্র তিনজন প্রতিবন্ধীকে ক্যাডার পদে নিয়োগ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে পিএসসি। কোটা বিধি অনুসারে এক শতাংশ প্রতিবন্ধী ক্যাডার পদে নিয়োগ পাওয়ার কথা। সে হিসেবে ৩৪তম বিসিএসের ক্যাডার তালিকায় আরও বেশি প্রতিবন্ধী প্রার্থী নিয়োগ পাবেন। বিজ্ঞপ্তির পর ক্যাডার পদে নিয়োগ না পাওয়া পাঁচজন প্রতিবন্ধী প্রার্থী কোটা বিধি ভঙ্গ কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না এবং প্রতিবন্ধীর কোটা-বিধি বাস্তবায়ন চেয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান ও জনপ্রশাসন সচিবকে বিবাদী করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। এই পাঁচজন প্রতিবন্ধী প্রার্থী সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও তাদের নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এফএইচ/এসএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।