৫০ তালগাছে কীটনাশক প্রয়োগ
আওয়ামী লীগ নেতাকে লাগাতে হবে গাছ, ওসি ও সাংবাদিককে তলব

রাজশাহীর বাগমারার বাইগাছা এলাকায় বিষ প্রয়োগ করে ৫০টি তালগাছ মেরে ফেলার (নিধনের) দায়ে আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলমকে দুইটি গাছ লাগাতে বলেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ও প্রথম আলোর উপজেলা প্রতিনিধিকে তলব করেছেন আদালত। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের সশরীরে আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। ওইদিন শাহরিয়ার আলমকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
তলবে উপস্থিত হওয়ার পর রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অভিযুক্ত শাহরিয়ার আলম রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ নেতাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়েস আল হারুনী। আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে ছিলেন ড. মো. জাহেদুল হক। আর পত্রিকার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট প্রশান্ত কুমার কর্মকার।
এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে বাংলা ভাষায় আদেশ দেন হাইকোর্ট। যা চলতি বছর ভাষার মাসের প্রথম দিনে প্রথম বাংলায় দেওয়া আদেশ। ওই আদেশ অনুসারে শাহরিয়ার আলম আজ (রোববার) আদালতে হাজির হন। এরপর দুপুর পৌনে ১২টা থেকে (মধ্যাহ্ন বিরতি ছাড়া) বিকেল ৪টা পর্যন্ত আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষের আইনজীবী আদালতের কাছে গাছে কীটনাশক প্রয়োগের কথা অস্বীকার করেছেন।
আইনজীবীরা জানান, এর আগে অর্ধশত তালগাছ মারতে অভিনব কায়দায় কীটনাশক প্রয়োগ করার অভিযোগ উঠায় শাহরিয়ার আলমতে তলব করেন হাইকোর্ট। ওই তলবে আজ সশরীরে উপস্থিত হন শাহরিয়ার আলম। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি শাহরিয়ার আলমকে আবারও হাজির হতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ওইদিন বাগমারার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধিকে হাজির থাকতে হবে।
তারা আরও বলেন, আদালত ওই ঘটনায় করা একটি জিডির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে ওসিকে ব্যাখ্যা দিতে ও প্রথম আলো প্রতিনিধিকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি হাজির থাকতে বলেছেন।
গত ৩১ জানুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোয় ‘৫০ তালগাছে কীটনাশক: দোষীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ কেন নয়’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়মিত মৃত্যুর ঘটনা সত্যিই আমাদের মনোযোগের বাইরে থাকে। যেমন পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু, বজ্রপাতে মৃত্যু। প্রতি বছর এসব কারণে এত বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। এ নিয়ে সরকার বা নীতিনির্ধারকদেরও বলিষ্ঠ কিছু করতে দেখা যায় না।’
আরও পড়ুন: বিপিসিতে অনিয়ম, ৩ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট
‘নানা সময় প্রকল্প নেওয়া হলেও সেগুলোর কোনো সুফল মেলেনি, পুরোপুরি ব্যর্থই বলা যায়। বজ্রপাত নিরোধে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করেছেন, কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনাকাটা ও বসানোও হয়েছে। লাখ লাখ তালবীজ সংগ্রহ ও রোপণের কথাও বলা হয়েছে।’
‘কিন্তু দিন শেষে জনগণের অর্থ অপচয় কিছুই হয়নি। সেখানে সাধারণ মানুষেরাই স্বেচ্ছায় বছরের পর বছর ধরে তালবীজ রোপণ করে বরং বড় ভূমিকা রাখছেন। এখন সেসব তালগাছের ওপরও আসছে আঘাত। সম্প্রতি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাইগাছা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।’
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক দশক আগে স্থানীয় এক বৃদ্ধসহ কয়েকজন ব্যক্তি সড়কের উভয় পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তালবীজ লাগিয়েছিলেন। সেসব তালগাছ বড় হয়ে এখন ছায়া দিচ্ছে। একটি তালবীজ গাছ হয়ে উঠতেই সময় লাগে এক দশক বা যুগের বেশি।
এতে আরও বলা হয়, ফলে বোঝা যায়, কী নিষ্ঠা ও ধৈর্য নিয়ে পরিচর্যা করে তালগাছগুলো বড় করে তুলেছেন বাইগাছার সেসব উদ্যোগী মানুষ। আর আমরা অবাক হলাম, সেই গাছগুলো মারতে বাকল তুলে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন শাহরিয়ার আলম নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। প্রকৃতি ও গাছের প্রতি কী রকম নির্দয় হলে এমন কাজ করা যায়, সেটিই প্রকাশ পায় এ ঘটনায়।
‘শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শাহরিয়ার আলম তালগাছ মেরে ফেলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য প্রথম আলোর প্রতিবেদককে অনুরোধও করেন। তালগাছের ছায়ার কারণে শাহরিয়ারের লাগানো আমগাছ ঠিকমতো বেড়ে উঠছিল না। ফলে এমন কাণ্ড করেছেন তিনি।’
‘এমন অমানবিক কাজের জন্য শাহরিয়ার আলমকে আইনের আওতায় আনা হোক। এছাড়া বন বিভাগের স্থানীয় দায়িত্বশীলদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, মরতে বসা তালগাছগুলো সারিয়ে তোলার দ্রুত পদক্ষেপ নিন।’
এফএইচ/আরএডি/জেআইএম