বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৫ শতাংশ কর দিতেই হবে
দেশের বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজেদের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতেই হবে বলে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আয়কর আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপন অবৈধ মর্মে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা বাতিল করে এ রায় দিলেন আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা ৪৪টি আপিল নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) অবসরে যাওয়ার আগে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে ছিলেন এএফ হাসান আরিফ ও খায়রুল আলম চৌধুরী।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ফাইল করি। ৪৪টি মামলা ছিল। এগুলোর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি দেন) করেন। সেসব আপিলের শুনানি শেষে আজ রায় হলো।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আয়কর আহরণ দৈনন্দিন কাজ। অর্ডিন্যান্স অনুসারে সবার জন্য ট্যাক্স ধার্য করা আছে। ব্যক্তিবর্গের জন্য ২৫ শতাংশ। সেখানে তাদের (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) জন্য কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আয়করের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পর্ক নেই। ভ্যাট হলে সম্পর্ক থাকতো। এখন কর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা মালিকদের দিতে হবে। আয়ের ওপরে ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।
২০০৭ সালের ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয় যেগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাদের উদ্ভূত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর পুনর্নির্ধারণ করা হলো। ১ জুলাই ২০০৭ থেকে এটি কার্যকর হবে।
২০১০ সালের ১ জুলাই এনবিআরের পৃথক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা শুধু তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজগুলো উদ্ভূত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের হার হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।
পরে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৪৬টি রিট হয়। ৪৬টি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর সরকারের ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের দুটি প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ওই দুই প্রজ্ঞাপন অনুসারে যে অর্থ আদায় করা হয়েছে, তা ফেরত দিতে এনবিআরকে নির্দেশ দেন।
উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি দিয়েছেন) করে অর্থ ফেরতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। তবে এ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হাতে আয়কর নেওয়া থেকে এনবিআরকে বিরত থাকতে বলা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষের ৪৪টি আপিলের শুনানি শেষে আজ রায় দেন আপিল বিভাগ।
এফএইচ/এমকেআর/এমএস
