পরচর্চার অভ্যাস ত্যাগ করতে চান? যেভাবে শুরু করবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:২৬ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

বন্ধুর সঙ্গে গল্প করতে করতে কখন যে তৃতীয় কাউকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, তা অনেক সময় টেরই পাওয়া যায় না। অনেকে একে খারাপ কিছু মনে করেন না, আবার অনেকে এই অভ্যাস ত্যাগ করতে চেয়েও মনের অজান্তে পরচর্চা করে ফেলছেন।

পরচর্চা করা বন্ধ করার তত্ত্বটি সহজ মনে হলেও বাস্তবে এটি সরল বিষয় না। বেশিরভাগ মানুষই সম্পর্কে বা ব্যক্তিগত জীবনে জটিলতা পছন্দ করেন না বলে দাবি করেন; সেই সঙ্গে আমরা এটাও জানি যে অন্যের সম্পর্কে নেতিবাচক আলোচনা করা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়। তবুও আমরা মাঝে মাঝে পরচর্চা বা গসিপে জড়িয়ে পড়ি। অনেক সময় কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করার রাস্তা হিসেবে তার অপছন্দের কাউকে নিয়ে গসিপ করাকে ব্যবহার করি।

বিজ্ঞাপন

নিউ ইয়র্ক সিটির সাইকোথেরাপিস্ট ফ্যানি ট্রিস্টান এ বিষয়ে বলেন, আমরা সামাজিক প্রাণি, তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা অন্যের সম্পর্কে কথা বলি। এই পরচর্চাের ইচ্ছা সবসময় খারাপ বা মনোযোগ আকর্ষণের উদ্দেশ্যে হয় না। হতে পারে আপনি কোনো বন্ধুর সম্পর্কে অভিযোগ করছেন যে সে আবারও আপনাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, সেসময় হয়তো মনের অজান্তেই আপনি তার অতীতের সব ব্যর্থতার কথা আরেকজনকে বলে ফেলছেন।

পরচর্চা, গসিপ

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অর্থাৎ, সমস্যা তখনই দেখা দেয় যখন পরচর্চা শুধু আপনার হতাশা প্রকাশের বদলে কারো চরিত্র হননে রূপ নেয়। যেমন, কোনো সহকর্মী প্রমোশন না পেলে তার ‘খারাপ আচরণ’ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করা, বা কোনো দম্পতির অতিরিক্ত রোমান্টিক ইনস্টাগ্রাম পোস্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাটে মজা করা। ট্রিস্টান বলেন, এই ধরনের নেতিবাচক আলোচনা সম্পর্কের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করতে পারে। যদি আপনি নিয়মিত অন্যের পিছনে কথা বলেন, তাহলে আপনার কাছের মানুষরাও ভাবতে পারে যে আপনি তাদের পিছনেও একই করছেন।

তাই জেনে নিন পরচর্চার অভ্যাস কমাতে ও ত্যাগ করতে হলে কী করবেন-

১. পরচর্চার উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করুন
সব পরচর্চা সমান নয়। যদি আপনি সত্যিই কষ্ট পেয়ে বা বিভ্রান্ত হয়ে কথা বলছেন, তাহলে তা মজার জন্য পরচর্চা করার চেয়ে ভিন্ন। ক্যালিফোর্নিয়ার থেরাপিস্ট ইংরিড হেল্যান্ডার বলেন, কোনো কথা বলার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন – আমি কেন এটি শেয়ার করছি? এর উদ্দেশ্যে কি ভালো?

যদি পরামর্শ চান যে, সে আমাকে এমন বলেছে – আমি কীভাবে এই পরিস্থিতি সামলাব? অথবা যদি শুধু আবেগীয় সমর্থন চান যে, আমার ম্যানেজার সম্পর্কে শুনে আমি চিন্তিত। তাহলে সেটি স্বাভাবিক শেয়ারিং। তবে শুধু মজার জন্য অন্যের জীবনের গোপনীয় তথ্য নিয়ে আলোচনা করা খারাপ অভ্যাস।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

২. আপনার কথা শেয়ার করার জন্য সঠিক ব্যক্তিকে বেছে নিন
অন্যের সম্পর্কে কিছু শেয়ার করার করতে হলে এমন কাউকে বেছে নিন যিনি এটা নিয়ে মজা না করে আপনাকে ভারসাম্যপূর্ণ মতামত দেবেন। হেল্যান্ডার বলেন, অনেকে শুধু অভিযোগ শুনতে পছন্দ করে, তাই তাদের সঙ্গে কিছু শেয়ার করলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।

৩. আচরণ নিয়ে কথা বলুন, ব্যক্তিত্ব নয়
’সে এত বিরক্তিকর’ বলার বদলে ’সে মিটিংয়ে আমাকে বারবার বাধা দিচ্ছিলো’ – এইভাবে কথা বললে পরচর্চা কম ক্ষতিকর হয়। ট্রিস্টান বলেন, কোনো একটি আচরণ নিয়ে আলোচনা করুন, পুরো ব্যক্তিত্ব নয়।

পরচর্চা, গসিপ

বিজ্ঞাপন

৪. অন্যকে নিয়ে আলোচনার সময় সীমিত করুন
আপনার পুরো অবসর শুধু অন্যের জীবন নিয়ে আলোচনা না করে একটি সময়সীমা ঠিক করুন। যেমন – একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একটি টপিক নিয়ে কথা বলুন, তারপর অন্য বিষয়ে চলে যান।

৫. স্ক্রিনশট শেয়ার করবেন না
প্রাইভেট চ্যাট বা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। এটি বিশ্বাসভঙ্গের শামিল এবং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।

৬. সহানুভূতিকে প্রাধান্য দিন
পরচর্চা করার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন – ‘আমি কেন এই বিষয় নিয়ে কথা বলছি? এটি কি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ?’ ট্রিস্টান বলেন, অন্যের জীবনযাপন নিয়ে মন্তব্য না করে বরং তাদের পছন্দকে সম্মান করুন।

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

পরচর্চা করার মুহূর্তের তৃপ্তি কিছুক্ষণের জন্য ভালো লাগলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্কের ক্ষতি করে। পরিবর্তে নিজের জীবন, আগ্রহ বা বিনোদনমূলক বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন – যেখানে অন্যের নাটক আপনার মজার উৎস হবে না।

এএমপি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।