যে কারণে আদা খাওয়া উচিৎ
আদার ব্যপারীর জাহাজের খোঁজ বলে বাংলায় একটি বাগধারা আছে, যেখানে আদার ব্যবসায়ীকে তুচ্ছার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। অবশ্য এই বাগধারাটি যখন থেকে প্রচলিতি তখন জ্ঞান বিজ্ঞানে মানুষ অতটা উন্নত ছিলনা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তো না-ই। যদি জানত আদার গুনের কথা তাহলে জাহাজের মালিকের আদার খোঁজ টাইপ কিছু একটা প্রবাদ চালু হয়ে যেত। কি নেই আদাতে? ভিটামিন এ, বি, সি, ই, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, সিলিকন, আয়রন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক এবং বেটা ক্যারটিনের চমৎকার উৎস আদা। আসুন দেখি আদার কিছু স্বাস্থ্যগত কার্যকারীতা।
পেটের সমস্যা দূর করে
পেটের বেশীর ভাগ সমস্যা দূর করতে আদার আছে এক বিশেষ গুন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়- Ginger tends to accumulate in gastrointestinal tract and ease abdominal heaviness। পেট কাঁপা, বদহজম, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের জন্য কার্যকর ওষুধ হলো আদা। শুধু হজম সহায়কই নয় রক্তে পুষ্টি আত্নিকরনেও আদা বিশেষ ভাবে কার্যকরী।
দুর্বলতা কাটায়
আপনার যদি জার্নি করলে বিশেষ করে নদী বা সাগরে শরীর দুর্বল লাগে তাহলে আদা দিতে পারে তার চমৎকার সমাধান। আদা যে কোন বমিভাব দূরকারী ওষুধের থেকে বেশী কার্যকর ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত বমি দূর করতে। খুব সামান্য পরিমাণ আদা যাত্রা কালের সকল শারীরিক দুর্বলতা যেমন বমিভাব, মাথাঘোড়া ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। গর্ভবতী মাদের জন্য গর্ভাবস্থার একদম শুরর দিকে আদা খাওয়া খুবই উপকারী। আদা বার্থ ডিফেক্টস এবং বাচ্চা প্রসবের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকির মাত্রা কমাতে অনেকটা কার্যকারী।
ব্যথা ও প্রদাহ নাশক
ব্যথানাশক হিশেবে আদার কার্যকারীতা প্রচুর। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে আদার এক্টীভ এজেন্ট গুলি বাজারে প্রচলিত বেদনানাশাক গুলোর থেকেও বেশী কার্যকর। আদা অবশ্যই গ্রহণীয় যারা মাসিকের সমস্যায় (menstral cramps) ভুগছেন। মাইগ্রেনের মাথা ব্যথা, পেশী ব্যথা, পিঠ এবং জয়েন্টের ব্যথাতেও আদা কার্যকরী। মাথা ব্যথা হলে আদা-চা এর কথা তো সর্বজন বিদিত।
ক্যান্সার প্রতিরোধক
আদার শক্তিশালী এন্টি অক্সিজেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে আদা কোলারেক্টাল ক্যান্সারের কোষের বুদ্ধির হারকে হ্রসে করে এবং কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে ফেলে। এছাড়াও আদা অন্যান্য ধরণের ক্যান্সার, যেমনঃ স্তন, ফুসফুস, স্কিন, অগ্নাশয় এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের এর ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন সকালে সামান্য আদা চা পান করুন আর এসকল ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে দুরে থাকুন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
প্রতিদন আদা সেবন আপনাকে সর্দি কাশি থেকে দূরে রাখবে। বিশেষ করে শীতকালে। প্রচুর পরিমাণে জিংক, ক্রোমিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আছে আদাতে যা রক্ত সঞ্চালনকে করে উদ্দীপিত। যার ফলে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা, ঘাম এবং জ্বর জ্বর থেকে শরীর থাকে মুক্ত। প্রতিদন আদা-লেবু-চা পান আপনাকে শীত গ্রীষ্ম-বর্ষায় রাখবে সতেজ ও প্রাণবন্ত।
তরকারীকে দেয় এক আলাদা স্বাদ
মাংস রান্নায় আদা ছাড়া চলেই না। এছাড়া মাছ, খিচুরী এমনকি সব্জীতেও আদা ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে তুলবে অনেক গুন।
ওজন কমাতে সহায়তা করে
আপনি খুব সহজেই আপনার ওজন কয়েক কেজি কমিয়ে ফেলতে পারেন এই আদা ব্যাবহার করে। আদা মুখের স্বাদ ও পরিতৃপ্তিতা বাড়িয়ে তোলে। যার ফলে অল্প ক্যালরিই আপনাকে পরিতৃপ্ততা দিতে পারে। ধরা হয়ে থাকে আদা এক শক্তিশালী এজেন্ট যা ক্ষুধা কমাতে সহায়তা করে। আদাতে থাকে সামান্য ক্যালরী এবং শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি এবং ফ্যাট বার্ন করে ওজন কমানোর আদর্শ হলো আদা।
কামোদ্দীপক
হাজার বছর ধরে কামোদ্দীপক হিসেবে আদা ব্যবহার হয়ে আসছে। আদার এই গুনটির কারনে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীন কাল থেকে সনাতন ধর্মে বিধবাদের আদা এবং আদা দেওয়া তরকারী খাওয়া ছিল একেবারে বারণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাই আপনি যখন একটি রোমান্টিক রাত মনের মানুষটিকে নিয়ে কাটানোর চিন্তা করছেন তখন খাবারে আদা রাখবেন।