আবু জাফর শামসুদ্দীন: সাহিত্য ও প্রগতির আলোকবর্তিকা

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
প্রকাশিত: ০৪:৩৭ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০২৫
ভাষাসৈনিক ও কথাসাহিত্যিক আবু জাফর শামসুদ্দীন, ছবি: সংগৃহীত

আজ ভাষাসৈনিক, কথাসাহিত্যিক ও প্রগতিশীল চিন্তার অনন্য পুরোধা আবু জাফর শামসুদ্দীনের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। তবে তাঁর প্রয়াণ দিবসে গাজীপুরের কালীগঞ্জে নেই কোনো আয়োজন। উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের দক্ষিণবাগ তাঁর জন্মভূমি হলেও কৃতিত্ব ছড়িয়ে আছে সমগ্র বাংলার আকাশে-বাতাসে। এক হাতে কলম, অন্য হাতে সমাজচেতনা—দুয়ের মেলবন্ধনেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলার সাহিত্য-ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম।

১৯১১ সালের ১২ মার্চ দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্ম নেওয়া এক সাধারণ বালকই পরে হয়ে ওঠেন ভাষা আন্দোলনের সাহসী কর্মী ও প্রগতিশীল সাহিত্যিক। স্থানীয় পাঠশালা থেকে মাদরাসা, এরপর ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ—শিক্ষার পথচলা ছিল অগ্রযাত্রার সূচনা মাত্র। যদিও প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা পূর্ণতা পায়নি কিন্তু জীবন ও সমাজই হয়ে উঠেছিল তাঁর প্রকৃত পাঠশালা।

শুরুতে সরকারি চাকরি করলেও কলমের আহ্বান তাঁকে ফের টেনে আনে সাংবাদিকতায়। আজাদ, ইত্তেফাক, পূর্বদেশ, সংবাদ—এসব পত্রিকায় তাঁর উপস্থিতি ছিল কেবল সংবাদকর্মী হিসেবেই নয় বরং মত ও মননের দিকনির্দেশক হিসেবে। তাঁর সাহিত্যজীবন শুরু হয় ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘পরিত্যক্ত স্বামী’ দিয়ে। এরপর একে একে উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, জীবনী, ভ্রমণকাহিনি ও অনুবাদ—সবক্ষেত্রেই তিনি রেখেছেন স্বতন্ত্র স্বাক্ষর।

‘ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যান’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘সংকর সংকীর্তন’, ‘দেয়াল’—এসব উপন্যাস কেবল গল্প নয় বরং এ দেশের সামাজিক বাস্তবতার দলিল। তাঁর কলমে যেমন উঠে এসেছে গ্রামীণ জীবনের টানাপোড়েন; তেমনই ফুটে উঠেছে মানবমুক্তির আকাঙ্ক্ষা। প্রবন্ধ চিন্তার বিবর্তন ও পূর্ব পাকিস্তানি সাহিত্য কিংবা লোকায়ত সমাজ ও বাঙালি সংস্কৃতি—এসব লেখায় প্রকাশ পেয়েছে ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতিকে নতুন করে বোঝার প্রচেষ্টা।

আবু জাফর শামসুদ্দীন কেবল সাহিত্যিকই নন, ভাষার জন্য সংগ্রামী সৈনিক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে আন্দোলনের পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ঐতিহাসিক কাগমারি সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হয়ে প্রমাণ করেছিলেন তাঁর সাংগঠনিক প্রজ্ঞা।

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, শহীদ নূতনচন্দ্র সিংহ স্মৃতিপদক, মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার এবং মৃত্যুর পর ফিলিপস পুরস্কার—এসব অর্জন তাঁর অবদানকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৮৮ সালের ২৪ আগস্ট তিনি চলে যান না-ফেরার দেশে। তবে তিনি রয়ে গেছেন তাঁর রচনায়, তাঁর আদর্শে এবং প্রগতিশীল চিন্তার আলোয়।

আব্দুর রহমান আরমান/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।