মো. রবিন ইসলামের কবিতা
বেঁচে থাকি প্রতিদিন মরে এবং অন্যান্য

বেঁচে থাকি প্রতিদিন মরে
নীরব শহরের কোলাহলে ডুবে
হারিয়ে যাই নিজেরই মাঝে,
মুখে হাসি, চোখে ঝড়—
ভেতরে কেবলই শূন্যতার সাজে।
ভেবেছিলাম আলো আসবেই কখনো
কিন্তু আঁধারই হলো চির সাথী,
স্বপ্নেরা ক্লান্ত, ভেঙে পড়ে
অসহায় এই জীবনপথে রাতি।
চেনা মুখে নেই আর আশ্রয়,
বুক ভরে আছে ভাঙা আকুলতায়,
প্রতিটি ভোর এক নতুন ক্ষয়,
দিন পুড়ে যায় নিঃসীম দহনতায়।
বাঁচি কেবল অভ্যাসে, ভালোবাসায় নয়,
এই জীবন তো কেবলই সময়ের কয়েদী,
যত দূরে যাই; তত কাছে ফিরে আসে—
নিজেকেই হারানোর চিরন্তন ভীতি।
****
অচেনা লাগে জীবন
বিবর্ণ বিকেলের বুক চিরে
ঘনিয়ে আসে অতৃপ্ত দিন;
অস্থির নিঃশ্বাসে জমে থাকে—
কী এক অজানা হাহাকার।
চোখের পলকে রূপ বদলায় সময়,
কেউ থাকে না চিরকাল পাশে,
জীবনের হাতছানিতে ছুটে গিয়ে
ফিরে আসি শূন্য দুই হাতে।
অভিমানের পথ পেরিয়ে
যখন নিজেকেই হারিয়ে ফেলি,
তখন আয়নার ভেতরে দাঁড়িয়ে
আমি কাঁদি আমারই মুখের দিকে।
প্রতিশ্রুতি ভাঙা শব্দেরা
বেজে চলে নিঃশব্দ রাতে,
স্বপ্নের ছায়ারা একে একে
হারিয়ে যায়, নিভে যায় বাতি।
এই কি তবে বাঁচার মানে?
নাকি এ-ও এক নতুন মরণ?
জীবনের রূপ যে যত দেখি,
ততই অচেনা লাগে জীবন।
****
নীরবতার চিঠি
তোমার অনুপস্থিতি আজকাল শব্দ হয়ে ওঠে,
না-বলা কথাগুলোই আমার রাতের দীর্ঘশ্বাস।
ঘুমাতে গেলে কান পেতে শুনি—
নীরবতা এক চিঠি লেখে,
হয়তো শুরু তোমার নামেই,
শেষটা—নিরুদ্দেশের পথে।
তোমার চোখের সেই আলোক রেখা,
যা একদিন পথ দেখাতো—
আজ নিভে গেছে,
তার ছায়াও পড়ে না জানালার ধারে।
তোমার ছোঁয়ার অভ্যাসে জন্মাতো আমার সকাল,
এখন সেই স্পর্শহীন ভোর
জাগিয়ে তোলে এক ফাঁকা বিছানা,
একটা নীরব চায়ের কাপ,
একটা জমে থাকা অভিযোগ।
তুমি জানো কি—
প্রতিদিন আমি অপেক্ষা করি
তোমার ‘উপেক্ষা’ নামের চেনা ছুরিটাকে
আরেকবার বুক পেতে নিতে?
তুমি আসো না,
তবু রক্ত ঝরে—নীরব ভাবে।
এসইউ/জিকেএস