আল মাহমুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মহাকাব্য
![আল মাহমুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মহাকাব্য](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/al-mhamud-20200215123808.jpg)
‘সোনালি কাবিন’ খ্যাত কালজয়ী কবি আল মাহমুদ স্মৃতি হয়ে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো আজ শনিবার। সাহিত্যে নিজের অমরতা নিশ্চিত করে তিনি বিদায় নিয়েছেন ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার মহাকাব্য ‘এ গল্পের শেষ নেই শুরুও ছিল না’ প্রকাশ করেছে সরলরেখা প্রকাশনা সংস্থা।
সরলরেখার পরিচালক নাজমুস সায়াদাত বলেন, ‘আল মাহমুদ নিজেই একজন মহাকাব্যিক কবি। তবে গত প্রায় এক শতাব্দি পর নতুন করে মহাকাব্য রচিত হয়েছে, যা বাংলা সাহিত্যে গৌরবজনক ঘটনা। শিল্পী ধ্রুব এষ ও লেখক আজরা পারভীন সাঈদসহ বড় একটি টিম আল মাহমুদের মহাকাব্যটি প্রকাশের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন। আমরা পাঠকের হাতে এটি তুলে দিতে পেরে আনন্দিত।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আল মাহমুদের ‘সহোদরা’ ও ‘রাগিণী’ নামে দুটি নতুন উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে মুজিববর্ষের বিশেষ প্রকাশনা হিসেবে তাঁর নতুন কাব্যগ্রন্থ ‘ইতিহাস দেখো বাঁক ঘুরে গেছে ফের ইতিহাসে’ এবং ছড়ার বই ‘আমার নামে ডাকছে পাখি’ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। আল মাহমুদের সাহিত্য জীবনের গোধূলি লগ্নের ছায়াসঙ্গী ও সহলেখক হিসেবে এ পাঁচটি বইয়ের গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন লেখক ও সাংবাদিক আবিদ আজম। বইগুলো পাওয়া যাবে ৬১৮ নম্বর স্টলে।’
আল মাহমুদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও তাঁর জন্মভিটায় পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আল মাহমুদ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কবি আবিদ আজম বলেন, ‘কিংবদন্তি এ কবির প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর কবিতা ক্যাফেতে শনিবার বিকেল ৫টায় ‘আল মাহমুদ স্মরণ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একই দিন চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে ‘ক্বণন শুদ্ধতম আবৃত্তি অঙ্গণ’র আয়োজনে বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণানুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর নূরুল আমিনসহ অনেকেই।’
তিনি বলেন, ‘কবির জন্মভিটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া মৌড়াইলে সকালে স্মরণানুষ্ঠান ছাড়াও কবির কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। এছাড়া আল মাহমুদ স্মারকগ্রন্থ প্রকাশনা ছাড়াও কবির প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে বড় পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিকে ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযোদ্ধা এ কবিকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার দাবি জানিয়েছে কবি পরিবার।’
১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়িতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আশীর্বাদ হয়ে জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য কবি আল মাহমুদ। পঞ্চাশের দশকে আবির্ভুত সাহিত্যের সব্যসাচী কবি আল মাহমুদ কবিতা ছাড়াও লিখেছেন উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া, আত্মজীবনী ইত্যাদি। এ যাবৎ তাঁর প্রকাশিত শতাধিক গ্রন্থ নিয়ে প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য মোট ১৩ খণ্ডে প্রকাশ করেছে ‘আল মাহমুদ রচনাবলি’।
১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় আল মাহমুদের প্রথম কবিতার বই ‘লোক লোকান্তর। এর তিন বছর পর ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয় তার আরও দুটি কবিতার বই ‘কালের কলস ও ‘সোনালি কাবিন’। এর মধ্যে ‘সোনালি কাবিন’ তাঁকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়। এ ছাড়া তার ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’, ‘অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না’, ‘একচক্ষু হরিণ’, ‘মিথ্যাবাদী রাখাল’ ও ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য।
‘কাবিলের বোন’, ‘উপমহাদেশ’, ‘ডাহুকি’, ‘আগুনের মেয়ে’, ‘চতুরঙ্গ’ ও ‘পোড়ামাটির জোড়া হাঁস’ ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। ‘পানকৌড়ির রক্ত’সহ বেশ কিছু গল্পগ্রন্থও রচনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’ ও ‘বিচূর্ণ আয়ণায় কবির মুখ’ তার উল্লেখযোগ্য আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের লিফলেটে কবিতা ছাপা হওয়ার কারণে ফেরারী হওয়া আল মাহমুদ একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামে মুজিবনগর সরকার স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন। যুক্ত ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গেও। নিজের প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা রচনা করে গেছেন কালজয়ী দুটি উপন্যাস ‘কাবিলের বোন’ ও ‘উপমহাদেশ’। তৎকালীন দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার প্রাক্তন এ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্তরিক সহায়তায় যোগদান করেছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে।
সৃজনশীল সাহিত্য রচনার জন্য অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন আল মাহমুদ। বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৮), জয়বাংলা পুরস্কার (১৯৭২), হুমায়ূন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৪), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৭), নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৯০), সমান্তরাল (ভারত) কর্তৃক ভানুসিংহ সম্মাননা পদক (২০০৪) সম্মাননা উল্লেখযোগ্য।
নিজের অসামান্য সাহিত্যকীর্তির কারণে আল মাহমুদ জীবনব্যাপী মানুষের হৃদয়ে আর ইতিহাসের শিলালিপিতে যে অমরতা পেয়েছেন, কোনো স্বীকৃতিই তার সঙ্গে তুল্য নয়।
এসইউ/এমএস