ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

যশোরে প্রান্তিক নারীদের দিন বদলের গল্প

মিলন রহমান | প্রকাশিত: ১২:৩২ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫

‘একটু তরকারি দেবে না বলে যে প্রতিবেশী কড়াই ঢেকে রেখেছিল, তার মেয়ের বিয়েতে ৪০ হাজার টাকা ধার দিয়েছি!’ দিন বদলের গল্প শোনাতে শোনাতে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে কথাটি বলেন যশোর শহরের পুরাতন কসবা লিচুবাগান এলাকার বাসিন্দা হামিদা আক্তার বিউটি।

বাল্যবিয়ের শিকার হনুফা খাতুন চা দোকানি স্বামীর সংসারে একটু স্বচ্ছলতার আশায় হাতের কাজের দেড়শ টাকা মজুরি দিয়ে নিজের সূচিশিল্পের কাজ শুরু করেন। কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা হনুফা খাতুন এখন মাসে গড়ে ১৫ হাজার টাকা উপার্জন করেন। ছেলেকে পড়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যাওয়া রূপালী খাতুন দর্জি প্রশিক্ষণ নিয়ে সেলাই এবং কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। এখন ব্যাগ বানিয়ে মাসে তার প্রায় ১৫ হাজার টাকা উপার্জন। উপশহরের বাসিন্দা রূপালীর সংসারেও এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য।

আর রাজিয়া খাতুনতো সংগ্রাম নারী হিসেবে অন্যদের কাছে উদাহরণ হয়ে উঠেছেন। শূন্য থেকে শুরু করে হস্তশিল্প, শাড়ি কাপড়ের ব্যবসা, মুদি দোকান, হাঁস মুরগি গরুর খামার করে নিজের জীবন যেমন বদলে নিয়েছেন, তেমনি অন্য নারীদেরও উৎসাহিত করছেন স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে। পেয়েছেন এলজিআরডি মন্ত্রণালয় থেকে দেশসেরার স্বীকৃতিও।

আত্মপ্রত্যয়ী এই নারীদের দিন বদলের গল্পের নেপথ্যের সারথি ‘ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-আইইডি’। কোনো ঋণ কার্যক্রম নয়; প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এই নারীদের স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে সংস্থাটি। শুধু বিউটি, হনুফা, রূপালী বা রাজিয়া নয়; এমন অসংখ্য নারী স্বাবলম্বী ও উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। বদলে গেছে তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক চিত্র। পরিবার ও সমাজের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও তারা ভূমিকা রাখছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও আইইডি’র এই কার্যক্রমের ইতিবাচক মূল্যায়ন করছেন।

নারী দিবস, যশোর, উদ্যোক্তা, সাফল্যযশোরে প্রান্তিক নারীদের দিন বদলের গল্প

হামিদা আক্তার বিউটির দিন বদলের গল্প

যশোর শহরের পুরাতন কসবা লিচুবাগান এলাকার হামিদা আক্তার বিউটি বাবা মায়ের ৮ সন্তানের মধ্যে ৬ষ্ঠ। মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে ১৩ বছর বয়সে বিয়ে করেন মহুরি মনিরুজ্জামান হীরনকে। বিউটির বিয়ের মাত্র ৫ মাস পর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান। তখন তিনি গর্ভবতী। এক বছর পর স্বামী ফিরে এলেও মাদকাসক্ত-বেকার। উপায়ান্তর না পেয়ে বিউটি সংসারের হাল ধরার জন্য বাসাবাড়িতে কাজ করেন। পরে অনেক চেষ্টায় ৩৮০০ টাকা বেতনে শহরের একটি ক্লিনিকে চাকরি নেন। সেখানে ৮ বছর চাকরি করেন।

সংসারের সমস্ত ব্যয়ভার তার ওপরই ছিল। স্বামীর মন চাইলে কিছু টাকা দিতেন। চাকরি করে সংসার চালাতে তাকে হিমশিম খেতে হত। এটা দেখে তার বড় বোন তাকে কাপড়ের ব্যবসা করার পরামর্শ দেন এবং সেইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা ধার দিয়ে কুষ্টিয়ার পোড়াদহে নিয়ে যান। সেখান থেকে প্রতি সপ্তাহে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিচ, বিছানার চাদর নিয়ে এসে বাড়িতেই বিক্রি শুরু করেন। এসময় তিনি আইইডির সচেতনতা দলের সদস্য হন। এর মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের পর তিনি ব্যবসাটিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে শুরু করেন। এরপর প্রতি সপ্তাহে পোড়াদহের শাড়ি, থ্রিপিচের পাশাপাশি যশোরের বড়বাজার থেকেও পাইকারি দামে গজ কাপড়, থ্রিপিস, লুঙ্গি নিয়ে এলাকায় বিক্রি শুরু করেন। পাশাপাশি হাতের কাজের শাড়ি, থ্রিপিস, বেডশিটও যুক্ত হয় তার ব্যবসার সঙ্গে।

তবে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও পুঁজি সংকটে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারছিলেন না বিউটি। এসময় আইইডি’র সহযোগিতায় ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসার পরিধি বাড়ান। এখন প্রতি সপ্তাহে পোড়াদহ থেকে অন্তত ৫০ হাজার টাকার শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিচ, বিছানার চাদর নিয়ে আসেন। সঙ্গে থাকে যশোরের হাতের কাজের শাড়ি, থ্রিপিস, বেডশিটসহ বিভিন্ন কাপড় সামগ্রী।

হামিদা আক্তার বিউটি জানান, প্রতিমাসে দু’লক্ষাধিক টাকার বেচাকেনায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা আয় হয় তার। এখন তার পুঁজি প্রায় দশ লাখ টাকার। ঘটা করে সম্প্রতি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। স্বাচ্ছন্দ্যে খেয়ে পরে সঞ্চয়ও করছেন।

অতীত কষ্টের কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত বিউটি বলেন, ‘বাড়িতে কোনো তরকারি নেই, প্রতিবেশীর কাছে তরকারি চাইতে গেছি। তরকারি দিবে না বলে, কড়াই ঢেকে রেখেছে। পরিশ্রম করে আমি আমার দিন বদলেছি। সেই প্রতিবেশী মেয়ের বিয়েতে টাকা ধার চেয়েছে; তাকে ৪০ হাজার টাকা ধার দিয়েছি। আমার অতীত কষ্টের কথা মনে করে কষ্টে থাকা মেয়েরা আমার কাছে আসলে তাদের নিজের পায়ে দাঁড় করানোর জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করি।’

স্বপ্নবান নারী হনুফা খাতুন

বুকের মাঝে লালিত স্বপ্নকে পূরণ করতে সমাজের প্রচলিত স্রোতের বিপরীতে গিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন হনুফা খাতুন। যশোর জেলা সদরের কাজীপাড়ার ভাড়া বাসায় হনুফা খাতুনের বসবাস। স্থানীয় মানুষের অতি পরিচিত হনুফা আপা পেশাগত জীবনে একজন কাপড় ব্যবসায়ী। আইইডি যশোর কেন্দ্রের নারী দলের সভানেত্রী হনুফার আইইডি যশোরের সঙ্গে পথ চলা শুরু ২০০৫ সালে নারী উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।

স্বামী চা দোকানি। ফলে সংসার জীবনে অভাব অনটন ও কখনোবা কঠোর দরিদ্রতা ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। সংসারে এক ছেলে, এক মেয়ে, স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে মোট ছয় সদস্যের পরিবার। তাই দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন।

শুরুটাও হয়েছিল শাড়ি সেলাই থেকে পাওয়া মাত্র দেড়শ টাকা দিয়ে। সেই টাকা দিয়ে অন্যের মাধ্যমে কাপড় ও সুই-সুতো কিনে সেলাইয়ের কাজ করতে থাকেন। ধীরে ধীরে হাতের কাজের শাড়ি, থ্রিপিস, বেডশিট বিক্রি শুরু করেন। বাড়িতে বসেই এখন তিনি প্রতিমাসে অর্ধ লক্ষাধিক টাকার শাড়ি, থ্রিপিস, বেডশিট বিক্রি করেন। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিমাসে গড়ে ১৫ হাজার টাকা তার উপার্জন হয়। স্বামীর উপার্জনের বাইরে এই টাকা তিনি সংসারে ব্যয় করছেন, সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। ছেলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ মেয়েও উচ্চ শিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নারী দিবস, যশোর, উদ্যোক্তা, সাফল্যযশোরে প্রান্তিক নারীদের দিন বদলের গল্প

হনুফা খাতুন বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি নারী দলের সব সদস্যকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি। দলের কোনো সদস্যের কোনো ধরনের সমস্যা হলে দলের অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করি। আবার প্রয়োজন অনুযায়ী আইন সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে আইনি সহায়তা পেতে সহযোগিতা করি। এছাড়া এলাকার কোনো ব্যক্তি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য যোগ্য হলে তাদেরকে নিয়ে সমাজসেবা, মহিলা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে ভাতা পেতে সহযোগিতা করি।

সংগ্রামী নারী রুপালী খাতুন

রুপালী খাতুনে জন্ম যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের শেখহাটি এলাকায়। পঞ্চম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় ১৩ বছর বয়সে ২০০৭ সালে বাবা-মা তাকে বিয়ে দেন উপশহরের বিরামপুর এলাকার টুটুল হোসেন মন্ডলের সঙ্গে। তার স্বামী পেশায় একজন প্লাম্বার। বিয়ের পর তার লেখাপড়া থমকে যায়। বিয়ের দুই বছর পর জন্ম হয় মেয়ের। ১৩ বছর আগে উপশহর এলাকায় আইইডি পরিচালিত একটি অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে জানতে পেরে আইইডি’র নারী দলের সঙ্গে যুক্ত হন। দলীয় সভার মাধ্যমে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেন। শেখেন দর্জির কাজ। তারপর স্বামীর সহযোগিতায় একটি পুরাতন সেলাই মেশিন কিনে এলাকায় মজুরির ভিত্তিতে দর্জির কাজ শুরু করেন। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে আয়ের টাকা সংসারে খরচের পাশাপাশি সঞ্চয়ও করতে থাকেন।

পরবর্তীতে রুপালী আইইডির নেতৃত্ব বিষয়ক প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ, উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। এরপর সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে গজ কাপড়, শাড়ি ও থ্রিপিসের ব্যবসা শুরু করেন। দর্জির কাজের পাশাপাশি তার ব্যবসাও ভালো চলছিল। করোনা পরবর্তী সময়ে জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তার ব্যবসায় কিছুটা ভাটা পড়ে।

তবে দমে যাওয়ার পাত্র নন রুপালী। কয়েক মাস আগে তিনি চটের ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। এখন পুরোদমে ব্যাগ তৈরিতে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে তার। স্বামী বাজার থেকে চট ও সিমেন্টের বস্তা কিনে এনে কেটে দেন। রুপালী বেগম ও একজন সহযোগী সেই ব্যাগ সেলাই করেন। এই ব্যাগ থেকেই প্রতিমাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা উপার্জন হচ্ছে তার।

রুপালি বেগম জানান, বর্তমানে পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। ভবিষ্যতে কাপড় ও ব্যাগের ব্যবসা আরও বড় করে অন্যদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চান। ভবিষ্যতে মানুষের পাশে থেকে সমাজের জন্য আরও ভালো কিছু করার স্বপ্ন তার।

অন্যের জন্য উদাহরণ রাজিয়া খাতুন

রাজিয়া খাতুন আট ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। অভাবের সংসারে ১৩ বছর বয়সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর স্বামীর সংসারেও নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। ১৯৮২ সালে প্রথম সন্তানের মা হন। প্রথম সন্তানের জন্মের পর সিদ্ধান্ত নিয়ে নৈশবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৮৯ সালে এসএসসি পাস করেন। ইচ্ছা থাকলেও উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি আর পেরোতে পারেননি। তখন নিজেকে সংসারের আয়বর্ধক নানা কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ফেলেন ও বাড়িতে ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। পরবর্তীতে আইইডি থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ করে দুই দশক আগে টিউশনির জমানো দুই হাজার তিনশ পঞ্চাশ টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন ক্রয় করেন। সেই কাজের পাশাপাশি নকশিকাঁথা সেলাইয়ের কাজও শুরু করেন। এ কাজে অল্পদিনের মধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া পড়ে যায়।

হস্তশিল্পের কাজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এলাকার অন্য নারীদের দিয়েও কাজ করিয়ে বিক্রি শুরু করেন। শাড়ি, থ্রিপিস, বেডশিট, টু-পিস পাইকারি কিনে এনে এলাকার নারীদের দিয়ে নকশি ও ফুল তুলে বিক্রি করতে থাকেন। পাশাপাশি হাঁস, মুরগি ও গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। মুদি দোকান দিয়েছেন। শহরের লিচুবাগান এলাকায় তিন শতক জমি কিনে বাড়িও করেছেন। ছেলেকেও আলাদা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিয়েছেন। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

বর্তমানে হস্তশিল্প ব্যবসায়ী ও খামারি হিসেবে সফল তিনি। তিন দশকের লড়াইয়ে রাজিয়া খাতুন এখন অন্যের জন্য উদাহরণ।

নারী দিবস, যশোর, উদ্যোক্তা, সাফল্যযশোরে প্রান্তিক নারীদের দিন বদলের গল্প

রাজিয়া খাতুন বলেন, নিজে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছি। জীবনের খুব কাছ থেকে দেখেছি কষ্ট কাকে বলে। কষ্ট দূর করার জন্য লড়াই করেছি। স্বপ্ন দেখেছি, দৃঢ় মনোবল ছিল। পেছনে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কারও কথায় কান দিইনি। স্বপ্ন পূরণে কাজ করে গেছি। আমাকে যারা বদনাম দিতো, তারাই এখন আমার প্রশংসা করে, সম্মান দেয়। সামাজিক উন্নয়নে এখনো কাজ করে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও কাজ করবো।

কঠোর পরিশ্রম করে দরিদ্রকে জয় করা রাজিয়া কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয় নগর উন্নয়ন সেক্টর ক্যাটাগরিতে দেশসেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন। দরিদ্র শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা ও ভারতের মুম্বাই শহর সফর করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করেছেন।

শুধু বিউটি, হনুফা, রূপালী বা রাজিয়া নয়, এমন অসংখ্য নারী স্বাবলম্বী ও উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। বদলে গেছে তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক চিত্র। পরিবার ও সমাজের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও তারা ভূমিকা রাখছেন। আত্মপ্রত্যয়ী এই নারীদের দিন বদলের গল্পের নেপথ্যের সারথি ‘ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-আইইডি’।

আইইডি যশোর কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বীথিকা সরকার জানান, ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আইইডি একটি জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ২০০৪ সাল থেকে যশোরে এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যশোরে আইইডি’র ৫০টি নারী দলে ১ হাজার ১১ জন তৃণমূল পর্যায়ের নারী, ১০টি পুরুষ দলে ২০০ জন তৃণমূল পর্যায়ের পুরুষ সদস্য, ৬টি কিশোরী দলে ১২০ জন তৃণমূল নারীদের পরিবারের কিশোরী, ১৬টি উদ্যোক্তা দলে ৩২০ জন তৃণমূল পর্যায়ের নারী, একটি যুব ও সাংস্কৃতিক ফোরামে ২০ জন শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী, সমাজের বিত্তবান ২০ জন নারীকে নিয়ে নারী ফোরাম এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে নাগরিক প্লাটফর্ম ‘জনউদ্যোগ’ রয়েছে।

নারী দিবস, যশোর, উদ্যোক্তা, সাফল্যযশোরে প্রান্তিক নারীদের দিন বদলের গল্প

তিনি উল্লেখ করেন, আইইডি কোনো ঋণ কার্যক্রম নয়, বরং প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে সংস্থাটি। প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে, দর্জি, পাটের ব্যাগ তৈরি, নেতৃত্ব ও বিকাশ, কিশোরীদের জেন্ডার প্রশিক্ষণ, আত্মরক্ষা ও আত্মবিশ্বাস তৈরিতে প্রশিক্ষণ (কারাতে ১৬ দিনব্যাপী) ও ১০ মাস মেয়াদি দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ।

নারী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দা মাসুম বেগম বলেন, সমাজের প্রান্তিক অবস্থানে থাকা নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলে স্বাবলম্বী করতে ভূমিকা রাখছে আইইডি। নানাভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে এই নারীরা আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে আয় উপার্জন করেন। এতে পরিবারে যেমন স্বাচ্ছন্দ্য আসছে, তেমনি সমাজের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও তারা ভূমিকা রাখতে পারছেন। এই নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরও বিস্তৃত করতে ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য করার পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও প্রয়োজন।

জনউদ্যোগ যশোরের আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমেদ বলেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া, দরিদ্র যে নারীরা একরকম গৃহবন্দি ছিল, আইইডি তাদের প্রশিক্ষিত ও কর্মমুখী করেছে। আর্থিক ভিত্তি পাওয়ায় এই নারীরা এখন তাদের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন। তারা পরিবার সমাজে মতামত প্রদান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখছে। বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে একতাবদ্ধ হয়ে আওয়াজ তুলছে। সমাজ, রাষ্ট্র তাদের অবদানের স্বীকৃতিও দিচ্ছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিণ জানান, আইইডিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা পিছিয়ে পড়া নারীদের নানাভাবে প্রশিক্ষিত করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। উদ্যোক্তা হয়ে এই নারীরা আয়-উপার্জন করায় তাদের সংসারে যেমন সচ্ছলতা এসেছে, তেমনি তারা নিজেরাও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করেছে।

যশোর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অসিত কুমার সাহা বলেন, সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছে। সমাজের প্রান্তসীমার এই নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবার ও সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। সরকারও নানা ধরনের প্রণোদনায় তাদরকে উদ্বুদ্ধ করছে এবং আরও অগ্রসর হতে সহযোগিতা করছে।

এফএ/জেআইএম

টাইমলাইন

  1. ০৯:৫৬ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নই নারীর আসল ক্ষমতায়ন
  2. ০৯:৫৫ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ নারী দিবসে জ্যাকুলিনের চমক
  3. ০৯:৩৩ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ প্রতিটি বাধাই উদ্যোক্তার বিকাশের একটি সুযোগ
  4. ০৮:৪০ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ পরিবেশ নিয়ে খুশি নন খোদ শিল্পীসংঘের সভাপতি
  5. ০৮:৩৮ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ হাইকোর্টে ১০ নারী বিচারপতি, আপিল বিভাগে নেই কেউ
  6. ০৭:৫৬ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ নারীর ওপর কোনো হস্তক্ষেপই কাম্য নয়
  7. ০৭:৪৯ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ নারী দিবসে জায়েদ খানের প্রত্যাশা
  8. ০৭:১১ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ ‘যদি নিজেকে নারী হিসেবেই ভাবতাম, এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না’
  9. ০৬:৩৯ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের উদ্দেশে যে বার্তা দিলেন কঙ্গনা
  10. ০৫:৪৯ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ অন্য উদ্যোক্তাদের নকল না করে নিজের সম্ভাবনা খুঁজতে হবে
  11. ০৫:১৪ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ দেশে দেশে প্রথা ভাঙা নারী তারকারা
  12. ০৪:৫৪ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মাননা
  13. ০৪:৫৩ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ শুটিংয়ের দুই বিড়ম্বনা, জানালেন অপু বিশ্বাস
  14. ০৪:৪৬ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ ‘সমাজটা নারীবান্ধব হতে হতে থেমে গেছে’
  15. ০৪:২২ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ মা-স্ত্রী ও মেয়ে আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ তিন নারী: তারেক রহমান
  16. ০৩:৫৮ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ সমতার পথে নারীর অগ্রযাত্রা: বাধা নয়, সুযোগ চাই
  17. ০৩:১৭ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ সর্বোচ্চ সংখ‌্যক ডিসি ও সচিব এখন নারী
  18. ০৩:০৫ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ ছন্নছাড়া জীবন ছেড়ে ১৮ বেদে নারীর রূপান্তরের গল্প
  19. ০২:৫২ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ ৫০০০ নারী কর্মী যুক্ত হবে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের টেলি মার্কেটিংয়ে
  20. ০২:১৯ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ নারী উদ্যোক্তা হওয়ার অনুকূল পরিবেশ অনুপস্থিত
  21. ০১:৫৭ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ জীবন সাজে-ফের চোখের জলে ভাসে
  22. ০১:১৮ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ নারী দিবস উৎসব নাকি প্রতিবাদ?
  23. ১২:৫২ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে ছিল নারীরা: ড. ইউনূস
  24. ১২:৪৬ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ নারীদের পোশাক নিয়ে কারও বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না: রিজভী
  25. ১২:৪৩ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ মুখ বুজে নির্যাতন সহ্য করেন ৬৪ শতাংশ নারী
  26. ১২:৪০ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ ডিজিটাল দুনিয়ায় নারীর অবস্থান
  27. ১২:৩২ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ যশোরে প্রান্তিক নারীদের দিন বদলের গল্প
  28. ১২:২৬ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ মনে হয়নি এলাকার কোনো বড়ভাই আমার দিকে তাকাবেন: ন্যান্সি
  29. ১২:১৮ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ নারী উদ্যোক্তাদের কল্যাণে নতুন দিগন্ত
  30. ১২:১৮ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ গুগল ডুডলে স্টেম শিক্ষায় নারীদের অবদান
  31. ১২:০৫ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ আইন পেশায় এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা
  32. ১১:২৬ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ নারীশিল্পীদের পারিশ্রমিক কম, একে আমি বৈষম্য হিসেবে দেখি না
  33. ১১:০৯ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ রোজা রেখেও রক্ত দিয়েছেন নিগার
  34. ১০:৪৮ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ বিভিন্ন দেশে যেভাবে পালিত হয় নারী দিবস
  35. ১০:৪৪ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়া কমছে, নেপথ্যে অত্যাচার-প্রতারণা
  36. ১০:৩৩ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ তিনবার আত্মহত্যা করতে যাওয়া দোলা এখন সফল উদ্যোক্তা
  37. ১০:১৫ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ ফেসভ্যালু নয়, আর্টভ্যালুকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত
  38. ১০:০৭ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ বৈষম্যই নারীমুক্তির প্রধান অন্তরায়
  39. ১০:০৪ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার গল্প শোনালেন সাদিয়া
  40. ০৯:৫৯ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ নারীরা শক্তি, সাহস আর সম্ভাবনার প্রতীক
  41. ০৯:২৭ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ নারী দিবস: শুধু একদিনের উদযাপন নাকি বছরের প্রতিদিন?
  42. ০৯:১৮ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ শত শত প্রতিবন্ধীকে স্বাবলম্বী করে চলেছেন ৩৯ ইঞ্চির অদম্য হোসনা
  43. ০৯:১২ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ কেন, কীভাবে শুরু নারী দিবসের?
  44. ০৯:০৩ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ
  45. ০৮:৩৯ এএম, ০৮ মার্চ ২০২৫ জুলাই আন্দোলনে শক্তি-প্রেরণা জুগিয়েছেন নারীরা
  46. ০৯:২৭ পিএম, ০৭ মার্চ ২০২৫ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও অদম্য বাংলার নারী
  47. ০৮:১২ পিএম, ০৭ মার্চ ২০২৫ নারীরা শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে না, সুযোগ সৃষ্টি করবে
  48. ০৬:৪৬ পিএম, ০৭ মার্চ ২০২৫ শিক্ষায় এগিয়ে থেকেও চাকরিতে পিছিয়ে নারী