আগ্রহ নেই উদ্যোক্তাদের, রাজশাহী বিসিক-২ যেন কাশবন
রাজশাহীর পবা উপজেলার বিসিক শিল্পপার্ক-২/ছবি-জাগো নিউজ
• ২৮৬টি প্লটের মধ্যে বরাদ্দ ৪৯টি
• মাত্র তিনটি প্লটে শিল্প কার্যক্রম শুরু
• গ্যাস ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা করা হয়নি আজও
• প্লটের দাম ‘তুলনামূলক বেশি’ বলছেন উদ্যোক্তারা
তিন বছর আগে উদ্যোক্তাদের জন্য প্রস্তুত ঘোষণা করা হয় রাজশাহীর পবা উপজেলার বিসিক শিল্পপার্ক-২। তবে আজও কার্যত জমে ওঠেনি। প্লটের অতিরিক্ত মূল্য, ইউটিলিটি সেবার অনুপস্থিতি ও ব্যাংকিং সহায়তার অভাবে এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তিন বছরে মাত্র তিনটি প্লটে শিল্প কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকিগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।
রাজশাহী বিসিকের দেওয়া তথ্যমতে, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক সংলগ্ন ৫০ একর জমিতে গড়ে ওঠা বিসিক-২ প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুলাইয়ে উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ১৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ২৮৬টি শিল্প প্লট রয়েছে। এর মাধ্যমে ১০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাত্র ৪৯টি প্লট বরাদ্দ হয়েছে। তবে শিল্প কার্যক্রম শুরু হয়েছে মাত্র তিনটি প্লটে। বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লটগুলোর বেশিরভাগই পড়ে আছে ফাঁকা। সেখানে গজিয়ে উঠেছে কাশবন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিসিক-২ প্রধান ফটক পেরিয়েই রাখা হয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্লট। তবে সেখানে কোনো কার্যক্রম নেই। একটু সামনে এগোতেই দেখা মিলছে সারি সারি কাশবন। প্রতিটি প্লটেই ফুটেছে ফুল। নেই কোনো কর্মচাঞ্চল্য।
‘বেশিরভাগ প্লট কীটনাশক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাত শিল্পকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ এখানে কোনো কমন ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) নেই। এতে বিপজ্জনক বর্জ্য খোলা ড্রেনে ফেলা হলে আশপাশের পরিবেশ মারাত্মক হুমকিতে পড়বে।’
রাজশাহীর খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান উষা সিল্ক প্রিন্টিং ও উইভিং ফ্যাক্টরি ২০২৪ সালে প্লট চেয়ে আবেদন করেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পের শুরুতে আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু বাস্তবতা প্রত্যাশার সঙ্গে মেলেনি। তাই আমরা আর সেখানে যাইনি।’
- আরও পড়ুন:
- বিসিক শিল্পনগরীর ৬০ প্লটের ৪০টিই ফাঁকা
- উদ্যোক্তা সংকটে ধুঁকছে লালমনিরহাটের বিসিক
- চামড়া শিল্পে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি সম্ভব
- সংকটে শাঁখা শিল্প, পেশা বদলাচ্ছেন কারিগররা
ট্রিপল এস ইলেকট্রনিকসের ব্যবস্থাপক মো. নাসিম জানান, প্রায় এক বছর আগে প্লট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পেলেও এখনো পাননি।

তিনি বলেন, ‘প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ সম্প্রতি এসেছে। কিন্তু গ্যাস ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা এখনো হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ বিনিয়োগ করতে চায় না।’
বিসিক-২ এর প্লটের মূল্য প্রতি বর্গফুট এক হাজার ১৪৮.২৭ টাকা, যা দেশের বেশিরভাগ শিল্পাঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, ‘এটি বাজারদরের চেয়ে দুই-তিনগুণ বেশি।’
‘প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য যে পরিমাণ পুঁজি দরকার, তা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব না। ব্যাংকগুলোও এ প্রকল্পে ঋণ দিতে অনিচ্ছুক। ফলে এখানে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেশিরভাগ প্লট কীটনাশক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাত শিল্পকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ এখানে কোনো কমন ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) নেই। এতে বিপজ্জনক বর্জ্য খোলা ড্রেনে ফেলা হলে আশপাশের পরিবেশ মারাত্মক হুমকিতে পড়বে।’

রাজশাহী নারী চেম্বারের সভাপতি রোসেটি নাজনীন বলেন, ‘প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য যে পরিমাণ পুঁজি দরকার, তা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব না। ব্যাংকগুলোও এ প্রকল্পে ঋণ দিতে অনিচ্ছুক। ফলে এখানে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না।’
অবকাঠামোগত দুর্বলতার পাশাপাশি এই শিল্পপার্কে পরিবহন ব্যয়ও বেশি। কারণ এখানে কোনো রেল বা নদীপথ সংযোগ নেই। এতে কাঁচামাল পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে বলেও জানান শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
- আরও পড়ুন:
- প্লট বরাদ্দের ৫ বছরে উৎপাদনে মাত্র ৭ শিল্প কারখানা
- ৬৭ বছরে বিসিক
- বিসিকের ২১ শিল্পনগরীতে এক হাজার ৯৮ প্লট খালি
- বিসিক শিল্পনগরীতে নারীরা পাবেন ১০ শতাংশ কোটা
এ বিষয়ে রাজশাহী বিসিকের উপব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্প এলাকায় জমি নিচু হওয়ায় বালু ভরাটে ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে প্লটের দামও বেড়েছে। এখন আমরা রাজধানী ও বন্দর নগরী থেকে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান আনতে চেষ্টা করছি।’

বিসিক-১ এর সমস্যা সমাধান না করেই বিসিক-২ চালু করা হয়েছে, যা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলা সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন।
তিনি বলেন, রাজশাহীতে প্রকৃতপক্ষে একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) প্রয়োজন, যা শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারে।
এসআর/এএসএম