পেশি না হারিয়ে ওজন কমানোর উপায়
ছবি: সংগৃহীত
শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে গিয়ে অনেক সময় পেশি কমিয়ে ফেলেন, এটা স্বাস্থ্যের জন্য হয়ে ওঠে হিতে বিপরীত। তাই সঠিক নিয়মে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে কীভাবে পেশির গঠন দৃঢ় করে ভালো থাকা যায়, সেটা জানা জরুরি।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে শরীরের ক্যালরি কমানো উচিত। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘ শরীরে অতিরিক্ত চর্বি থাকা যেমন ক্ষতিকর তেমনি মাংসপেশি কম থাকাটাও ক্ষতিকর। কারণ মাংসপেশি কমে গেলে শরীরের বিপাকক্রিয়া কমে যায়, শরীরে চর্বি পোড়ানোর ক্ষমতা কমে যায় এবং ত্বক ঝুলে পড়ার প্রবণতা বাড়ে। এছাড়া মাংসপেশি কমে যাওয়া মানে শরীরের শক্তি ও সহনশীলতা কমে যাওয়া। এটি দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, শরীরের ওজন ধরে রাখা কঠিন হয়’।
সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএসপি) বিপাক বিশেষজ্ঞ এলেইন দিয়াস বলেন, ‘ ওজন কমানো মানে শুধু দাঁড়িপাল্লার সংখ্যাটা কমানো নয়। বরং শরীরের কার্যকর ও মূল্যবান অংশ অর্থাৎ মাংসপেশি ধরে রাখা’।

তিনি আরও জানান, শরীরে যখন ক্যালরি ঘাটতি দেখা দেয়, তখন শরীর এই বিষয়টিকে শক্তির অভাব হিসেবে দেখে এবং প্রতিরক্ষা হিসেবে শরীরের জমানো শক্তি সাশ্রয় নিতে শুরু করে। এছাড়া যদি অতিরিক্ত বা পরিকল্পনাহীনভাবে ক্যালরি কমানো হয়, তাহলে শরীর শক্তি বাঁচাতে মাংসপেশি ভাঙা শুরু করতে পারে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক পেশি না হারিয়ে কীভাবে ওজন কমানো যায়-
- ১. পেশি ধরে রাখাবে পানি ও প্রোটিন
পেশি গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রোটিন বা আমিষ। তাই পেশির গঠনে খাদ্যতালিকায় বেশি করে প্রোটিন রাখা বাঞ্ছনীয়।
ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস নিউট্রিশন সোসাইটির মতে, পেশি গঠন ও শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে লীন মাস ধরে রাখতে প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক প্রতি কেজি ওজনের জন্য এক দশমিক চার থেকে দুই গ্রাম পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। অর্থাৎ ৭০ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তির দিনে ৯৮ থেকে ১৪০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। তবে খেয়াল রাখতে হবে ক্যালরি ঘাটতি যেন মাঝারি মাত্রায় হয়।
এলেইন দিয়াসের মতে, প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০০ ক্যালরি বা ফ্যাট বার্ন করা হবে আদর্শ। এর চেয়ে বেশি হলে শরীর মাংসপেশি পোড়ানো শুরু করতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে, যাদের সাধারণত বিশ্রামের সময়ের ক্যালরি খরচের হার ও মাংসপেশি তুলনামূলক কম, তাদেরও সতর্ক থাকা উচিত।

যদি কারো পক্ষে ৫০০ ক্যালরি ঘাটতি রক্ষা করা কঠিন হয় তাহলে তারা প্রতিদিন ৩০০ ক্যালরি কমিয়ে শুরু করতে পারেন।
ক্রীড়া-চিকিৎসক পাবলিয়ুস ব্রাগা জানান, ‘ ক্যালরি পোড়ানো বা ফ্যাট বার্নের একটি সীমা রাখতে হবে, সেই সঙ্গে প্রোটিনের সঠিক ভারসাম্য রাখা জরুরি। প্রতি বেলার খাবারের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ যেন প্রোটিন উৎস থেকে আসে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে’।
শরীর হাইড্রেটেড রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি, কারণ এর অ্যান্টি–এজিং ইফেক্ট, ডিটক্সিফাইং করার মাধ্যমে শরীরের ভেতরের দূষিত জলীয় অংশ বেরিয়ে যায়, যা পেশি গঠনে সহায়তা করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘প্রায় ৭০ শতাংশ মাংসপেশি পানি দিয়ে গঠিত, তাই এগুলোকে সঠিকভাবে সচল রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করত হবে। প্রতি কেজি ওজনের জন্য প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিলিলিটার পানি পান করা প্রয়োজন’।
- ২. নড়াচড়া করা শুধু ক্যালরি পোড়ানোর জন্য নয়
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ডায়েটের পাশাপাশি শরীরচর্চা একটি বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে, মাংসপেশি ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। চর্বি কমানোর পাশাপাশি পেশি বাড়াতে ব্যায়ামের ধরনও গুরুত্বপূর্ণ। দিয়াস জানান, ‘স্ট্রেংথ ট্রেনিং, যা মাংসপেশি ধরে রাখতে, এমন কি বাড়াতেও সাহায্য করে। শরীর সাধারণত এক সময়ে যে কোনো একটি বিষয়ে মনোযোগ দেয়। হয় চর্বি কমানো বা পেশি বাড়ানো। চর্বি কমাতে ক্যালরি ঘাটতি লাগে, আর পেশি বাড়াতে ক্যালরি অতিরিক্ত লাগে। স্ট্রেংথ ট্রেনিং মাংসপেশি দীর্ঘমেয়াদে স্থূলতা, টাইপ টু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের মতো সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

এছাড়া নিরাপদ বার্ধক্যের জন্য মাংসপেশি অপরিহার্য। আইরিসিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ হরমোন উৎপাদন করে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং অ্যালঝাইমার্স, পারকিনসনের মতো নানা রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
তবে কিছু ক্ষেত্রে, যেমন নারীদের মেনোপজের পর হরমোন ও বিপাকীয় পরিবর্তনের কারণে মাংসপেশি ধরে রাখা ও চর্বি প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই মেনোপজ পরবর্তীতে যদি পরিকল্পিতভাবে সঠিক নিয়ম অনুসরণে ব্যায়াম করা হয়, তাহলে মাংসপেশি ধরে রেখে ও চর্বি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
- ৩. মানসিক সুস্থতা
মাংসপেশি ধরে রাখার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানসিক সুস্থতা। ওজন কমানো ও শারীরিক গঠন উন্নত করার যাত্রা যেন বাড়তি মানসিক চাপ না সৃষ্টি করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত যে কোনো চিন্তাই নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম অবশ্যই প্রয়োজন। ঠিকমতো না ঘুমালে পেশি বিশ্রাম পাবে না, ওজন কমাও বাধাগ্রস্ত হবে। আর না ঘুমালে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে গিয়ে ওজন হ্রাসে বাধা দেবে।
আরও পড়ুন
ঘুমানোর আগে ধূমপানে বাড়ছে অনিদ্রা ও হৃদরোগের ঝুঁকি
ডেঙ্গু নাকি চিকুনগুনিয়া, কীভাবে বুঝবেন
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসএকেওয়াই/কেএসকে/জিকেএস