ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

সায়েন্স ফিকশন

জিও-এক্স সেভেন

সাহিত্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:৫৫ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নাহিদ হোসাইন

রাজবাড়ী স্টেশনে যখন পৌঁছলাম; তখন রাত পৌনে দুইটা। স্টেশনে প্রবেশ করতেই ধাক্কা খেলাম। জনমানবশূন্য একটি স্টেশন। চারদিকে ঘন কুয়াশা ল্যাম্পপোস্টের মিটমিট আলোয় অদ্ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি করেছে।

অফিস থেকে জিওলজিক্যাল সার্ভে ডিপার্টমেন্টের গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে এসেছি। সফলভাবে তথ্য নিতে পারলে প্রমোশন হবে। মেসের কষ্টকর জীবন কাটিয়ে একটি নতুন বাসা নিতে পারবো। বিয়ে করতে পারবো অরিত্রিকে। তাই তো জিনিসপত্র নিয়ে চলে এলাম এ গ্রামে।

খোঁজ-খবর করে জানলাম, এখানে ট্রান্সমিশন পাওয়ার জেনারেটর স্টেশন বসানো হয়েছে। আমার দায়িত্ব সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে বাতাস ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করা। আগের দিন রাতে ম্যানেজার স্যার ফোন করে বলেন, ‘বুঝলেন কবির সাহেব, আপনি কিন্তু সেখানে কোনো প্রকার ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। প্রকল্পটি অনেক স্পর্শকাতর। আমরা কোনো প্রকার ঝুঁকি নিতে চাই না।’
‘ঠিক আছে স্যার।’
‘এমনকি কোনো প্রকার কাগজও ব্যবহার করবেন না। মুখে মুখে তথ্য নিয়ে চলে আসবেন দ্রুত। তারপর প্রমোশন লেটারে সাইন করবেন।’
বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে আমি যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করি। আমার মাথায় শুধু ঘুরছিল, ‘ফিরে এসেই প্রমোশন লেটারে সাইন করবো’।

স্টেশনে নামার পর কোনো কিছুই স্বাভাবিক লাগছে না আমার কাছে। গুমোট বাতাসে সবকিছু যেন আটকে আছে। কোনো যানবাহন নেই। অগত্যা হেঁটেই রওয়ানা দিলাম। আমাকে পথ দেখাচ্ছে গুগুল ম্যাপ। কিছুক্ষণ পর স্ক্রিনটা কয়েকবার বিপ করে নেটওয়ার্ক চলে গেল। আমি হঠাৎ করে যেন গোলক ধাঁধায় পড়ে গেলাম। বুঝতে পারছি না কোন দিকে যাবো।

আমি দাঁড়িয়ে আছি গ্রামের মেঠোপথের মাঝখানে। চারপাশে উঁচু উঁচু তাল গাছ। একপাশে নদী, অপরপাশে বিস্তীর্ণ মাঠ। দ্বিতীয় ধাক্কা খেলাম, গাছের পাতার রং নীল দেখার পর। আমি বুঝতে পারলাম, এখানে কোনো একটা সমস্যা আছে। আমি এর শেষটা দেখবো। কাজটা আমাকে করতে হবে। মনকে ভরসা দিলাম।
হঠাৎ মাথার ভেতর তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা অনুভব করলাম। আমার দুই কান বন্ধ হয়ে গেল। মনে হলো পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে।
‘কবির কোথায় যাচ্ছিস?’
ঘুরে দেখি নিবিড় দাঁড়িয়ে। ফ্ল্যাশ লাইটের আলোয় তাকে কিছুটা এলেমেলো দেখাচ্ছে।

নিবিড় আমার শৈশবের বন্ধু। হঠাৎ তার উপস্থিতি আমাকে যেন অথৈ সাগরে কিনারা এনে দিলো। তার হাত ধরতেই অনুভব করলাম, অসম্ভব ঠান্ডা একটা হাতে যেন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পন্দন ছড়াচ্ছে। আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠলো। পথ হাঁটতে হাঁটতে সে বলল, ‘গ্রামটা অনেক বদলে গেছে, স্বাভাবিক নয় কিছু।’
‘মানে?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম।
নিবিড় জানালো, ‘ছয় মাস আগে কিছু বিজ্ঞানী এসে এখানে ভূগর্ভস্থ এক ধরনের ম্যাগনেটিক ফোর্স খুঁজে পায়। তারপর তারা শুরু করে এক্সপেরিমেন্ট। তারা চেয়েছিল পৃথিবীর প্রাকৃতিক শক্তির বিকল্প উৎস তৈরি করতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়।’
‘তারপর?’
‘ওই শক্তি, মানুষের মস্তিষ্কের তরঙ্গের সঙ্গে মিশে গিয়ে এক নতুন রূপে সব মানুষ একেকটা ডাটা সার্ভার হয়ে গেছে। সবাই আর মানুষ নেই, কবির, জিও-এক্স সেভেনের প্রকল্প হয়ে গেছে।’
‘তুই এত তথ্য পেলি কীভাবে?’ জিজ্ঞাসা করলাম।

নিবিড় অদ্ভুতভাবে হাসলো। আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। বুঝতে পারছিলাম, সত্যিই ভয়াবহ কিছু ঘটেছে। চারদিক থেকে আমার কানে ভেসে আসছে হাসি, কান্না, চিৎকারের শব্দ। হঠাৎ নিবিড় শীতল হাতে আমাকে টেনে ধরলো, ‘আর যাবি না। আর এক পা এগোলেই ম্যাগনেটিক ফোর্স তোকে স্পর্শ করবে। তোর মস্তিষ্কের নিউরাল প্যাটার্ন এখানেই আটকে যাবে। সাথে তুইও।’
‘কিন্তু আমাকে তো কাজটি শেষ করতে হবে। অফিসিয়াল অ্যাসাইনমেন্ট।’

নিবিড় অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাত ধরলো। মনে হলো আমাকে কেউ সজোরে টান দিলো। মস্তিষ্কে অদ্ভুত যন্ত্রণা, কানে একটানা শব্দ। নিজেকে আবিষ্কার করলাম স্টেশনের সামনে। নিস্তব্ধ রাস্তায় নীরবতা ভাঙলো মোবাইলের রিংটোন। স্ক্রিনে রাহাতের নাম। রিসিভ করতেই রাহাত বলছে, ‘কবির তুই কোথায়? নিবিড় ঘণ্টাখানেক আগে বাইক অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। স্পট ডেড।’
‘কী বলিস? নিবিড় তো আমার সাথেই ছিল।’

আমার পাশে নিবিড়কে আর খুঁজে পেলাম না। আমি ধীরে ধীরে পেছনে তাকালাম। কিছুই নেই। শুধুই নীরবতা আর কুয়াশায় মোড়ানো অন্ধকার।

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন