ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চলছে, সজাগ থাকতে হবে

হাসান আলী | প্রকাশিত: ০৩:১২ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশে একটি নির্বাচনী আমেজ বিরাজমান। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চলছে। সেই বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা।

জাগো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ১২ দলীয় জোটের এই সমন্বয়ক। তার মতে, ‘ফ্যাসিস্টবিরোধী যে ঐক্য ছিল দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে, আমাদের অবশ্যই ঐক্যটা ধরে রাখতে হবে।’

দীর্ঘদিন ধরে ভিন্নধারার জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন সৈয়দ এহসানুল হুদা। রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন বৃহত্তর জাতীয়তাবাদী জোটের সহযোগী শক্তি হিসেবে সক্রিয়। সম্প্রতি বিভিন্ন আন্দোলন ও কর্মসূচিতে তার নেতৃত্বে ১২ দলীয় জোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন এই রাজনীতিবিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক হাসান আলী।

  • জাগো নিউজ: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। এই সময়টাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

সৈয়দ এহসানুল হুদা: দেখুন, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী মাইলফলক। একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা বিগত ১৬/১৭ বছরের একটি স্বৈরাচার সরকার থেকে মুক্ত হতে পেরেছি। এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। সংবিধান মেনেই তারা রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়েছিলেন এবং অদ্যাবধি একটি সাংবিধানিক সরকারই বাংলাদেশে আছে। ইউনূস সাহেব ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন সেটাকে গণতন্ত্রকামী প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে।

কিছু দল ক্ষমতার মোহে এতই মোহাচ্ছন্ন হয়ে গেছে যে এই নির্বাচনে তারা কিছুটা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। সেই বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আমি মনে করি, ফ্যাসিস্টবিরোধী যে ঐক্য ছিল, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে, আমাদের অবশ্যই ঐক্যটা ধরে রাখতে হবে।

আমি মনে করি, নির্বাচনী সব কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন শুধু তফসিল ঘোষণাটাই বাকি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে একটি নির্বাচনী আমেজ বিরাজমান। সঙ্গে সঙ্গে কিছু দল ক্ষমতার মোহে এতই মোহাচ্ছন্ন হয়ে গেছে যে এই নির্বাচনে তারা কিছুটা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। সেই বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আমি মনে করি, ফ্যাসিস্টবিরোধী যে ঐক্য ছিল দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে, আমাদের অবশ্যই ঐক্যটা ধরে রাখতে হবে।

আরও পড়ুন
পিআর আমিই বুঝি না, দেশের জনগণ কীভাবে বুঝবে
চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ১২ দলীয় জোট সমন্বয়কের বৈঠক
৫৬ শতাংশ মানুষ এখনো পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না

জাগো নিউজ : জুলাই সনদ আসলে কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না? এ বিষয়ে জাতীয় দল এবং ১২ দলীয় জোটের অবস্থান কী?

সৈয়দ এহসানুল হুদা: সনদের অধিকাংশ বিষয়ে প্রায় সব দলই একমত। সেখানে আংশিক একমত কিছু জায়গায় নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) ছিল, সেটা দিয়েও আমরা চেয়েছি যে এই সংস্কার প্রক্রিয়াটা যেন বাস্তবায়ন হয়। মৌলিক কিছু বিষয়ে আপত্তি ছিল। বাস্তবায়নের ব্যাপারে আমরা বলেছিলাম যে বিষয়গুলো আশু বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো নির্বাহী আদেশ, অধ্যাদেশ বা প্রশাসনিক আদেশে বাস্তবায়ন করে ফেলতে। মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে পরবর্তী সংসদ একটা নির্দিষ্ট টাইমফ্রেমের মাধ্যমে সেই সংস্কারগুলো করবে। সেখানে আমরা বলেছি, যাদের নোট অব ডিসেন্ট আছে তারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের ম্যানিফেস্টোতে সেগুলো উল্লেখ করে জনগণের কাছে ম্যান্ডেট চাইবেন এবং সেই ম্যান্ডেটের প্রেক্ষিতেই যদি তারা ক্ষমতায় যান তাহলে সেটার আলোকেই তারা বাস্তবায়ন করবেন।

ড. ইউনূস যখনই কোনো ন্যাশনাল ক্রাইসিসে পড়ে যান, সেই সময় সবাইকে ডেকে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চান, যেন দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সবাই তার সঙ্গে আছেন। সেটাই তিনি হয়তো বৈদেশিকভাবে বা বিদেশের কাছেও সেই জিনিসটাই উপস্থাপন করতে চাচ্ছেন।

আমরা বলেছিলাম যে, প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে একটি জাতীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা যেন এই অঙ্গীকারনামাতে সই করি, যেটা একটা জাতীয় দলিল হিসেবে সবার কাছে উপস্থাপিত হবে। এই দলিল এবং এই কমিটমেন্টের ব্যাপারে আমরা যে ওয়াদাবদ্ধ সেটা এর মাধ্যমে পরিষ্কার হবে। কিন্তু যারা বিতর্ক করছেন তারা এই প্রশ্নটি সামনে নিয়ে এসেছেন যে, ওয়াদাতে তারা হ্যাপি না। তারা নিশ্চয়তা চাচ্ছেন, আইনি ভিত্তি চাচ্ছেন।

  • জাগো নিউজ: পিআর পদ্ধতি/গণভোট/গণপরিষদ নির্বাচনসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ আছে। বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আন্দোলনও করছে, সেটিকে কীভাবে দেখছেন?

সৈয়দ এহসানুল হুদা: অবশ্যই এটি একটি দ্বিচারিতা। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের দুই-একটি দল ছাড়া আর কেউই তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেনি। ছয় থেকে আট মাস আগে যে দলের নেতৃত্বে এই আন্দোলন হচ্ছে তারা ৩০০ আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং তারা একেবারে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। একদিকে তারা বলছে, নির্বাচন হতে দেবে না। আরেক দিকে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি তারা সম্পন্ন করছে। আমি মনে করি, নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার এটি তাদের একটি কৌশল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ আছে এবং জনগণই মূল শক্তি। জনগণ তাদের সেই কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন আদায় করে নেবে।

তার শত্রুর কোনো অভাব নেই। সেই বাস্তবতাটাও বিবেচনায় নিতে হবে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা নিশ্চয়ই এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল এবং তার ভিত্তিতেই হয়তোবা ওনার কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে দেশে ফিরতে। তবে আমি আশা করি, শিগগির আমরা হয়তো তারেক রহমান সাহেবকে বাংলাদেশের মাটিতে দেখতে পাবো।

আরও পড়ুন
ফেব্রুয়ারির নির্বাচন দেশের গণতন্ত্রে নতুন যুগের সূচনা করবে
বিএনপির কাছে ৩০টি আসন চেয়েছিল জামায়াত
দেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশে বিক্ষোভ, ভাবমূর্তি সংকটে বাংলাদেশিরা

  • জাগো নিউজ: পুরো দেশ যখন নির্বাচনের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন হঠাৎ রাজপথের এমন কর্মসূচি কি নির্বাচন পেছানোর মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে? আপনার কী মনে হয়?

সৈয়দ এহসানুল হুদা: আমাদের আন্দোলনের সবশেষ যেই রাজনৈতিক দাবি, সেটি ছিল শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। এখন ওই দলগুলো ক্ষমতার মোহে উদ্ভট কিছু দাবি নিয়ে আসছে। বাংলাদেশে এখন জামায়াতে ইসলামীসহ আরও সাতটি দল, তারা আন্দোলন করছে, রাজপথেও আছে, সংস্কার কমিশনেও যাচ্ছে। তারা পিআর পদ্ধতির ব্যাপারে আন্দোলন করছে এবং তারা হুমকি দিচ্ছে যে পিআর ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। আরেকটি স্বৈরাচারী বা কর্তৃত্ববাদী আচরণ আমরা তাদের কাছ থেকেই লক্ষ্য করছি। তারা যেভাবে বলছে যে, তাদের দাবি না মানা হলে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। এগুলো আমি মনে করি ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা, গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থেকে এসব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনটি আদায় করে নেবে।

  • জাগো নিউজ: যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হয় সেক্ষেত্রে কী হতে পারে?

সৈয়দ এহসানুল হুদা: বাংলাদেশ একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। বিনিয়োগ আপনারা দেখছেন যে এখনই স্থবির হয়ে গেছে। মানুষের মধ্যে হতাশা বেড়ে যাবে এবং সর্বোপরি ফ্যাসিস্ট ফিরে আসার একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। আমরা সেটাতেই বেশি উদ্বিগ্ন।

  • জাগো নিউজ: প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে তিনটি দলের নেতারা জাতিসংঘে গেছেন। তাতে কি চলমান সংকটগুলো সমাধানের কোনো দ্বার উন্মুক্ত হতে পারে?

সৈয়দ এহসানুল হুদা: না। ড. ইউনূস যখনই কোনো ন্যাশনাল ক্রাইসিসে পড়ে যান, সেই সময় সবাইকে ডেকে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চান, যেন দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সবাই তার সঙ্গে আছেন। সেটাই তিনি হয়তো বৈদেশিকভাবে বা বিদেশের কাছেও সেই জিনিসটাই উপস্থাপন করতে চাচ্ছেন। আমি মনে করি, এখানেও চরম বৈষম্য করা হয়েছে। বাংলাদেশের আরও অনেক রাজনৈতিক দল ছিল, ক্রিয়াশীল দল আছে যারা বিগত ১৬/১৭ বছর বিরামহীন এই সরকারের (আওয়ামী লীগ সরকার) বিরুদ্ধে রাজপথে থেকেছে, নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে নতুন একটি দল যারা এখনো নিবন্ধিতই হয়নি এবং সেখানেও লুকোচুরি করা হয়েছে। তাই আমার মনে হয় না এমনটা হবে।

আরও পড়ুন
ইসলামপন্থি সব দল ঐক্যবদ্ধ হলে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত: দেলাওয়ার
এক বছর পরেও অপেক্ষা, এবার কি ফিরছেন তারেক রহমান?
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে নয়াপল্টনে সংস্কারের ব্যস্ততা

  • জাগো নিউজ: আপনারা কূটনীতিক মহলে বিভিন্ন বৈঠক করছেন। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের মনোভাব কেমন?

সৈয়দ এহসানুল হুদা: কূটনীতিকরা অধীর আগ্রহে একটি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছেন। বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, বিদেশি বিনিয়োগ এবং সম্পর্কোন্নয়নের স্বার্থে তারা একটি নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তারা চান যেকোনো মূল্যে একটি উইন উইন সিচুয়েশনের মাধ্যমে সব দল ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই সনদটি বাস্তবায়িত হোক এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যেই যেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি আমরা সম্পন্ন করতে পারি।

  • জাগো নিউজ: অধিকাংশ মানুষের প্রত্যাশা, দেশের এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আসা উচিত। আপনি কী মনে করেন?

সৈয়দ এহসানুল হুদা: কঠিন প্রশ্ন! আমিও মনে করি এই মুহূর্তে হয়তোবা উনি দেশে থাকলে পরিস্থিতিটা আরও একটু ভালো হতো। এখন ওনার নিরাপত্তার একটি বিষয় আছে। আপনারা সবাই জানেন যে, বেনজির ভুট্টো নির্বাসন থেকে পাকিস্তানে ফেরত আসার ১৫ দিনের মাথায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তারেক রহমান বাংলাদেশের এখন আশার আলোর প্রতীক। তার নিরাপত্তা নিয়ে অবশ্যই আমরা শঙ্কিত। তার শত্রুর কোনো অভাব নেই। সেই বাস্তবতাটাও বিবেচনায় নিতে হবে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা নিশ্চয়ই এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল এবং তার ভিত্তিতেই হয়তোবা ওনার কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে দেশে ফিরতে। তবে আমি আশা করি, শিগগির আমরা হয়তো তারেক রহমান সাহেবকে বাংলাদেশের মাটিতে দেখতে পাবো।

  • জাগো নিউজ: মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

সৈয়দ এহসানুল হুদা: আপনাকেও ধন্যবাদ।

এমএইচএ/ইএ/এমএমএআর/জিকেএস