ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

পশ্চিমা বিশ্ব আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়

খালিদ হোসেন | প্রকাশিত: ০৩:২৫ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের প্রতি পশ্চিমা বিশ্ব সহানুভূতিশীল নয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম। তারা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন।

জাগো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার এসব কথা বলেছেন ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক খালিদ হোসেন। আজ থাকছে সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।

জাগো নিউজ: অনেকে বলেন পশ্চিমা বিশ্ব আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল। আপনারা কি সেটা অনুভব করেন?

নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম: না, আমরা সেটা এভাবে দেখি না। তারা আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়। বরং বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংকট নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তারা জানতে চায়, দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রায়নের জন্য সামগ্রিকভাবে কী করা যায়।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব যেভাবে লুটপাট, দমননীতি আর একদলীয় শাসনের পথে গেছে—তার দায় কিন্তু তাদেরই। তারা এখন পর্যন্ত নিজেদের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়নি, এমনকি জনগণের কাছে ক্ষমাও চায়নি। যদি তারা সত্যিই অনুশোচনা প্রকাশ করত, তাহলে একটা রিকনসিলিয়েশনের প্রসেস শুরু হতে পারত। এখন তো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটা মামলা চলছে—আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে দায়ী করা যায় কি না, সেই বিষয় নিয়েই। সেখানে বিচার প্রক্রিয়ায় হয়তো পরিষ্কার হবে—দলের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে অবস্থান কী হবে।

আরও পড়ুন
সময় চলে এসেছে, দ্রুতই দেশে ফিরে আসবো: তারেক রহমান
স্বৈরাচারের মুখের ওপর বলেছিলাম দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়
নির্বাচন এককভাবে নাকি দলগতভাবে যা জানালেন তারেক রহমান
গণঅভ্যুত্থানের আসল মাস্টারমাইন্ড কে, খোলাসা করলেন তারেক রহমান

 

জাগো নিউজ: রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিএনপির অবস্থান কী? আন্তর্জাতিক পরিসরে এটা কীভাবে মোকাবিলা করতে চান?

নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম: রোহিঙ্গা ইস্যু অত্যন্ত জটিল। এটি কেবল মানবিক নয়, কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও বটে। আমাদের দলের স্থায়ী কমিটি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবেন।

আমার দায়িত্ব কেবল আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করা ও লিগ্যাল অ্যাডভাইজ দিতে পারা। তবে এটা বলব—বিএনপি সর্বদা মনে করে, রোহিঙ্গা সমস্যা কেবল সীমান্ত নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়। আমরা বিশ্বাস করি, এই সংকট সমাধানে জাতিসংঘ ও আঞ্চলিক সহযোগিতাই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

জাগো নিউজ: আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে বিএনপির ওপর কি কোনো আন্তর্জাতিক চাপ আছে?

নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম: না, আমি এমন কোনো চাপ বা ইঙ্গিত দেখিনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের জনগণের সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দেয়। তারা চায়, এই দেশের জনগণ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, তাদের প্রতিনিধিকে নিজেরাই বেছে নিতে পারে। বিএনপির নীতি স্পষ্ট—বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের মানুষ, কোনো বিদেশি শক্তি নয়।

আরও পড়ুন
প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ: তারেক রহমান
গুম-খুনের জবাব আ’লীগকে, ৭১’র জবাব জামায়াতকে দিতে হবে
চাঁদাবাজি, দখলের অভিযোগ নিয়ে যা বললেন তারেক রহমান
বিএনপির রাজনীতিতে কী পরিবর্তন আসছে, জানালেন তারেক রহমান

 

জাগো নিউজ: আপনি বলেছিলেন বাংলাদেশের কূটনীতিতে বড় ঘাটতি আছে। কোথায় দেখছেন সেই ঘাটতি?

নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম: দুদিক থেকেই। নীতি নির্ধারণে যেমন ঘাটতি আছে, বাস্তবায়নেও আছে।

দেখেন, ভারতের কূটনীতি কংগ্রেস বা বিজেপি বদলালেও অপরিবর্তিত থাকে। আমেরিকায় ডেমোক্র্যাট হোক বা রিপাবলিকান—দেশের পররাষ্ট্রনীতি কিন্তু একই থাকে। তারা রাষ্ট্রের স্বার্থে ধারাবাহিক। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যায়—একেক দল ক্ষমতায় এসে একেক রকম কূটনৈতিক অবস্থান নেয়।

এটা ভুল। রাষ্ট্রের স্বার্থই হওয়া উচিত একমাত্র ভিত্তি। রাজনৈতিক দলের স্বার্থ নয়, জাতীয় স্বার্থই প্রাধান্য পেতে হবে।

পশ্চিমা বিশ্ব আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়

জাগো নিউজ: বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পররাষ্ট্রনীতিতে কোন তিনটি বিষয়ে প্রাধান্য দেবে বলে মনে করেন?

নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম: দেখুন, আমি দলের সিদ্ধান্ত বলার অবস্থানে না। তবে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বিএনপি জনগণের ইচ্ছা ও জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবে।
জনগণের যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ— যেমন আঞ্চলিক ভারসাম্য, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও কৌশলগত নিরাপত্তা— এই তিনটি ক্ষেত্রেই বিএনপি ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি অনুসরণ করবে।

জাগো নিউজ: এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী?

নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম: দেখেন, এখানে একটা অর্থনৈতিক বাস্তবতা আছে। এলডিসি হিসেবে থাকলে অনেক আন্তর্জাতিক এক্সেমশন ও সুবিধা পাওয়া যায়— যেমন রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, সহায়তা তহবিল ইত্যাদি। এখন সরকার যেভাবে উত্তরণের জন্য তাড়াহুড়ো করছে, সেটা ব্যবসায়ীদের স্বার্থের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

আরও পড়ুন
বিএনপির মূলনীতি একটাই, সবার আগে বাংলাদেশ
ভারত স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে বিরাগভাজন হলে আমাদের কিছু করার নেই
আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করবে
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে যা বললেন তারেক রহমান

 

উত্তরণ ভালো, কিন্তু তার আগে প্রস্তুতি থাকা জরুরি। কারণ যদি আমরা অপ্রস্তুত অবস্থায় উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় ঢুকে যাই, তাহলে কিছু আন্তর্জাতিক সুবিধা হারাব। তাতে সাধারণ মানুষের জীবনে কোনো বাস্তব উন্নতি আসবে না।
বিএনপির বিশ্বাস—অর্থনৈতিক উত্তরণ মানে শুধু পরিসংখ্যান নয়, জনগণের জীবনের মানোন্নয়ন। সেই লক্ষ্যেই কাজ করবে বিএনপি।

জাগো নিউজ: ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিবিসি বাংলাকে দুই দশক পর সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। আপনি সেই সাক্ষাৎকার শুনেছেন—আপনার কাছে জানতে চাই, কোন অংশটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি নাড়িয়েছে?

নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম: আসলে পুরো সাক্ষাৎকারটাই নাড়িয়েছে—শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। তবে বিশেষভাবে যে জায়গাটা আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে, সেটা হলো যখন উনি বলেছেন, ‘১৭ বছর ধরে আমি দেশের বাইরে আছি।’
এই কথার মধ্যে একটা বিশাল বেদনা লুকিয়ে আছে। উনি তার ভাই হারিয়েছেন, যিনি দেশকে রেখে গেছেন। উনার মা অসুস্থ হয়েছেন, সেই মা এখন সুস্থ নন। যে বাড়িতে তিনি বড় হয়েছেন, সেটাও আজ আর নেই।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো—উনি এই কষ্টগুলো ব্যক্তিগত আবেগে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং বলেছেন, ‘এই দৃশ্যটা শুধু আমার একার না—এটা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের।’
এটাই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ। তিনি বলেননি, ‘আমি সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী।’ বরং বলেছেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটি পরিবারই ভুক্তভোগী।’

পশ্চিমা বিশ্ব আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়

এই আত্মত্যাগের জায়গা, এই একাত্মতা—আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।

জাগো নিউজ: আপনারা প্রায়ই বলেন, ‘বিএনপি মানে গণমাধ্যমবান্ধব দল।’ কিন্তু এতগুলো দেশীয় গণমাধ্যম থাকা সত্ত্বেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম—বিশেষ করে বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিলেন? দেশীয় গণমাধ্যমকে পাশ কাটিয়ে গেলেন নাকি?

নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম: ভালো প্রশ্ন। তবে আমি মনে করি, এ বিষয়ে উনি ইচ্ছে করে কাউকে এড়িয়ে যাননি। আসলে উনাকে কেউ এ বিষয়ে প্রশ্নও করেনি। দেখুন, ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত—তখন দেশে কতগুলো গণমাধ্যম ছিল? এখন তো অগণিত—প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন—সব মিলিয়ে সংখ্যা শতাধিক।

এখন যদি একজনকে সাক্ষাৎকার দেন, তাহলে অন্যরা বলবে, ‘আমরা পেলাম না কেন?’

তাহলে উনি কার বিরাগভাজন হবেন না? উনি তো বাংলাদেশের নেতা—সবার জন্য সমান। তাই কাউকেই বাদ দিতে চাননি।

আরও পড়ুন
সাক্ষাৎকারে বিতর্কিত কথা না বলায় তারেকের প্রশংসায় শিশির মনির
৩১ দফা না কি জুলাই সনদ, যা বললেন তারেক রহমান
সবচেয়ে বড় বিচারক জনগণ, আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গে তারেক রহমান
এক এগারোর সরকার নিয়ে যা বললেন তারেক রহমান

আরেকটা দিকও আছে—উনার নিজেরই একটা পত্রিকা আছে। যদি উনি নিজের পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিতেন, তাহলে অনেকে বলত, ‘এটা তো আত্মীয়করণ’। তাহলে বিতর্ক হতো—‘নিজের পত্রিকাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।’ উনি সেই বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চেয়েছেন।

তাছাড়া, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যেমন বিবিসি, আল জাজিরা, চ্যানেল ফোর—এইগুলো তুলনামূলকভাবে সীমিত। সেখানে দেওয়া মানে একটা নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্মে নিজের বক্তব্য তুলে ধরা।

কিন্তু দেশীয় গণমাধ্যমে দিতে গেলে অনেক প্রশ্ন, প্রতিযোগিতা, ভুল ব্যাখ্যা তৈরি হতে পারত। তাই হয়তো উনি এমন একটা জায়গা বেছে নিয়েছেন, যেখানে তার কথা বিকৃত না হয়ে সঠিকভাবে পৌঁছাবে।

কেএইচ/এমএমএআর/এমএফএ/জিকেএস

আরও পড়ুন