বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে যা বললেন তারেক রহমান
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, বিএনপির অতীত সরকারের সময় যেরকম সাংবাদিকদের গুম করা হয়নি। সাংবাদিকদেরকে নির্যাতন করা হয়নি। সাংবাদিকদেরকে দেশ ছেড়ে যেতে হয়নি, বাধ্য হতে হয়নি। ইনশআল্লাহ ভবিষ্যতেও হবে না।
বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে প্রশ্ন করা হয়, বিগত সরকারের আমলে তাদের একটা বিষয়ে একটা বড় সমালোচনা ছিল যে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। আপনারা যদি ক্ষমতায় আসেন সেক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদ বা সংবাদ মাধ্যমের ওপর দমন-পীড়নের বিষয়গুলো যে আর হবে না, সেই নিশ্চয়তা কি আপনি দিতে পারেন?
আরও পড়ুন:
ভারত স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে বিরাগভাজন হলে আমাদের কিছু করার নেই
তারেক রহমান বলেন, জ্বি, ইয়েস পারি। একদম দিতে পারি। আপনি ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পত্রপত্রিকা খুলুন। আমি কারও নাম উল্লেখ করবো না, কোনো পত্রিকার কথা উল্লেখ করবো না। শুধু খুলে দেখুন কীভাবে অনেক খবর ছাপা হয়েছিল। যার সত্যতা কিন্তু ছিল না, অপপ্রচার ছিল। কিন্তু অপপ্রচারটা সংবাদ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আপনি কি শুনেছেন, আপনি কি আমাকে প্রমাণ দিতে পারবেন- বলতে পারবেন যে বিএনপির সময়, আমি কিন্তু বলতে পারবো অনেক অনেক সাংবাদিকের নাম যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্বৈরাচারের সময় এবং পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ইভেন, এখনো অনেকে প্রবাস জীবনে আছেন, এরকম বহু সাংবাদিক। আমি বলতে পারবো, স্বৈরাচারের সময় বহু সাংবাদিককে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন-ধমক দেওয়া হতো। বিএনপির সময় এগুলো করা হয়নি, কারণ তখন সংবাদপত্রে যে খবরগুলো প্রকাশিত হয়েছে তৎকালীন বিএনপি সরকার সম্পর্কে, আমার সম্পর্কে যে খবরগুলো প্রকাশিত হয়েছে, যদি ওইরকম হতো তাহলে কিন্তু ওরকম খবর প্রকাশিত হতো না। অর্থাৎ বিএনপির সময় যদি অত্যাচার- নির্যাতন থাকতো তাহলে খবরগুলো প্রকাশিত হতো না স্বাভাবিকভাবে। যা হয়নি বিগত সরকারের সময় স্বৈরাচার সরকারের সময়। কাজেই আপনাকে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, বিএনপির অতীত সরকারের সময় যেরকম সাংবাদিকদের গুম করা হয়নি। সাংবাদিকদেরকে নির্যাতন করা হয়নি। সাংবাদিকদেরকে দেশ ছেড়ে যেতে হয়নি, বাধ্য হতে হয়নি। ইনশআল্লাহ ভবিষ্যতেও হবে না।
বিবিসি বাংলার শেষ প্রশ্ন ছিল, তাহলে কী সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধ করে- এ ধরনের যে আইনগুলো রয়েছে, সেগুলো আপনারা বাতিল করবেন, এটা কী ধরে নেওয়া যায়?
তারেক রহমান এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, অবশ্যই, আমরা সবাই মিলে বসবো, আলোচনা করবো। আপনাদের মত সাংবাদিকসহ যারা আছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করবো। আলোচনা করে সেগুলোকে আমরা এরকম কালো আইন যা যা আছে, আমরা আস্তে আস্তে ঠিক করবো। তবে এখানে বোধহয় একটি বিষয় আবার আমাকে উল্লেখ করতে হয়-যেটি আমি সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে বলেছি। দেখুন, এটি তো সবাইকে মিলে করতে হবে। অপপ্রচারকে তো অবশ্যই সংবাদ হিসেবে তো প্রচার করা ঠিক নয়, তাই না? আমাদের কাছে আপনাদের যেরকম চাওয়া থাকবে, ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে, যারাই আসুক সরকারে, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদেরও অনুরোধ থাকবে আপনাদের প্রতি, যে অপপ্রচার সংবাদ হিসেবে যেন প্রচারিত না হয়, এই বিষয়টিকে একটু সবাইকে সচেতন বা খেয়াল রাখতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সংস্কার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রায় দুই দশক পর প্রথম কোনো গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসি বাংলার মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোল। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সাক্ষাৎকার দেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা।
এসএনআর/এএসএম