নজরুল ইসলাম অকুতোভয় সাংবাদিক ছিলেন

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৪৫ পিএম, ০১ অক্টোবর ২০২৩

গোলাম সারওয়ার

তিনি দরাজ কণ্ঠে মাঝে মাঝেই বলতেন, ‘সারওয়ার ভাই, সাংবাদিকতার সেই স্বর্ণযুগ আর নেই, চারদিকে অপসাংবাদিকতা চলছে, আর ভালো লাগে না, খাপ খাওয়াতে পারছি না। এখান থেকে পাততাড়ি গোটাতে হবে।’ অবশেষে শুধু সাংবাদিকতা জগৎ থেকেই নয়, ইহজগৎ ছেড়েই পাততাড়ি গুটিয়ে তিনি চলে গেলেন। রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান অকুতোভয়, নির্লোভ একজন সাংবাদিক ও কলামিস্ট ছিলেন। প্রশাসনের কাছে তিনি একজন বলিষ্ঠ এবং ব্যক্তিত্বশীল সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারাও তাকে সমীহ করে চলতেন। সত্য প্রকাশে তিনি কাউকে ছাড় দিতেন না।

বিজ্ঞাপন

আদর্শিকভাবেই তিনি নেশা এবং সৌখিন হিসেবেই সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছিলেন। পাশাপাশি তিনি আইন পেশাও জড়িত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে তিনি এই পৃথিবীর সকল মায়া মমতা ত্যাগ করে চলে গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। রাজশাহী মহানগরীর রাজারহাতা এলাকায় নিজ বাসভবনে বসবাস করতেন তিনি। শেষের দিকে সাংবাদিকতা জগতের ইতি টেনে তিনি রাজশাহী ছেড়ে ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় মনোনিবেশ করেছিলেন। বয়সজনিত কারণে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় ঢাকা ছেড়ে তিনি আবার রাজশাহীতে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। অসুস্থ অবস্থাতেও হৃদয়ের টানে মাঝেমধ্যে তিনি প্রেস ক্লাবে চলে আসতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশ নিতেন।

অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরিজীবনের প্রথমে থানা শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনে কর্মরত ছিলেন। আশির দশকে রাজশাহী বারে ফৌজদারি আইনজীবী হিসেবে তিনি আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে কলাম লেখার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জগতে পরিচিতি লাভ করেন। এসময়ে তিনি দৈনিক জনতা, দৈনিক খবর, বাংলার বাণী, দ্য নিউ নেশনসহ প্রথম সারির বিভিন্ন সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীণ এই প্রেস ক্লাবকে গণমুখী করতে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন>> প্রবীণ সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন আর নেই

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। রাজপথে সবসময় সরব ভূমিকা পালন করে এসেছেন। রাজশাহী প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর বাকশাল সরকারের জেলা গভর্নর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে কারাগার থেকে নির্বাচিত এমএলএ জননেতা আতাউর রহমানের দ্বারা তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিলেন। পরে তিনি ‘জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ’র উপদেষ্টাও ছিলেন।

আজ অনেক স্মৃতি মনের পর্দায় ভেসে উঠছে। তার চিরাচরিত অভ্যাস ছিল প্রেস ক্লাবে ঢুকে তার নির্দিষ্ট আসনে বসেই দরাজ কণ্ঠে অফিস সহায়কের উদ্দেশে বলতেন, ‘জনি, সব কাগজ নিয়ে আয়।’ তিনি একনাগাড়ে সব কাগজ পড়ে তারপর আড্ডায় মেতে উঠতেন। জুনিয়রদের সামনেও তিনি খোলামেলাভাবে কথা বলতেন। তার স্বভাবসূলভ অট্টহাসি আসরকে গরম করে রাখতো। তাকে কখনো মন খারাপ থাকতে দেখিনি। আমাকে বলতেন, সারওয়ার ভাই, সাংবাদিকরা সবাই আমার জুনিয়র। একমাত্র আপনার কাছেই মনের কথা শেয়ার করা যায়। প্রেস ক্লাবের বর্তমান সভাপতি সাইদুর ভাই তখন সেক্রেটারি ছিলেন। তিনিসহ নজরুল সাহেবকে সবাই আঙ্কেল বলে সম্বোধন করতেন। একমাত্র আমাকেই তিনি ভাই বলে ডাকতেন। সেই সুবাদে পারিবারিক অনেক কথাই আমাকে বলতেন। ক্লাবের অনেক বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গে মতবিনিময় করতেন। আমাকে তিনি একটা কথাই বার বার বলতেন, ‘ভাই,আমিতো ঢাকায় চলে যাবো, সময়ের টানাপোড়েনে প্রেস ক্লাবকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সাইদুরের সঙ্গে সিনিয়র হিসেবে আপনি এই ঐতিহ্যবাহী প্রেস ক্লাবের দুঃসময়ে কাছে থাইকেন।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তার সেই কথাগুলো আমার কর্ণকুহরে বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। নজরুল ভাই, এই প্রেস ক্লাবে আমি ছিলাম, নানা অসংগতি সত্ত্বেও আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো ইনশাআল্লাহ। আপনার আত্মা শান্তি পাক।রাজশাহী প্রেস ক্লাব আপনার অকুণ্ঠ অবদান আজীবন গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

আজীবন সদস্য, রাজশাহী প্রেস ক্লাব

ইএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।