ভূমি সেবায় হয়রানিমুক্ত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনার পথে বাংলাদেশ

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০১:০৯ পিএম, ০৪ আগস্ট ২০২৫

ভূমি সংক্রান্ত কাজ মানেই ছিল দীর্ঘসূত্রিতা, জটিলতা আর হয়রানি। কিন্তু সেই দিন হয়ত এবার শেষ হতে চলেছে। ভূমি মন্ত্রণালয় এখন দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনাকে পুরোপুরি স্বচ্ছ, জনবান্ধব ও হয়রানিমুক্ত করার এক বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে।ভূমি রেকর্ডে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বিদ্যমান সেবাগুলোকে ডিজিটালাইজ করাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করার মাধ্যমে এই খাতকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে, যেন দেশের প্রতিটি নাগরিক ঘরে বসেই পান তার কাঙ্ক্ষিত ভূমি সেবা।

রোববার (৩ আগস্ট) তথ্য অধিদপ্তরের এক বিবরণীতে এসব তথ্য জানানো হয়।

তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ভূমি মন্ত্রণালয় ল্যান্ড সিঙ্গেল গেটওয়ে তৈরির মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন ডিজিটাল সেবাগুলোকে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করছে। ফলে নাগরিকরা এক জায়গা থেকেই সব ধরনের ভূমি সেবা পাবেন। জিপিএস এবং জিও ফেন্সিং প্রযুক্তির সাহায্যে ভূমির মালিকরা তাদের জমির সব তথ্য গুগল আর্থে প্লট করে দেখতে পারবেন, যা ভূমির অবস্থান ও মালিকানা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেবে।

এতে আরও বলা হয়, পরবর্তী ধাপে এ জরিপের সঙ্গে ভূমির মালিকানার ম্যাপিং করা হবে। রাজস্ব আদায়ের তথ্য, নামজারি প্রক্রিয়া এবং মামলা থাকলে মামলার বর্তমান অবস্থার তথ্যগুলো সংযুক্ত করা হবে। এছাড়া নাগরিকরা এখন নিজস্ব মোবাইল নম্বর দিয়ে অনলাইনে জমির নামজারির মাধ্যমে ঘরে বসেই পরচা বা খতিয়ান সংগ্রহ করতে পারবেন।

একই সঙ্গে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। ভূমির খাজনা পরিশোধ, নামজারি, জমাখারিজ, খতিয়ান বা পরচা সার্টিফায়েড কপি এবং মৌজা ম্যাপ সংগ্রহও অনলাইনে সম্ভব হচ্ছে। এতে সেবাগ্রহীতাদের সময়, শ্রম এবং ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে সাশ্রয় হচ্ছে।

শুধু তাই না, বিশ্বের যে-কোনো দেশ থেকে ০৯৬১২৩১৬১২২ নম্বরে ফোন করে অথবা ভূমিসেবা পোর্টাল বা ‘ই-খতিয়ান’ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি আবেদন করে খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপের সত্যায়িত কপি নিজ নিজ ঠিকানায় পাওয়া যাবে।

প্রকাশিত ওই তথ্য বিবরণীতে আরও জানানো হয়েছে, রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় স্থাপিত ভূমি ভবনের নিচতলায় নাগরিক ভূমি সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ১৬১২২ নম্বরে ফোন করে অথবা land.gov.bd ওয়েবসাইট বা ‘ভূমি উন্নয়ন কর’ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই এনআইডি নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। কর পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকরা তাৎক্ষণিকভাবে কিউআর কোডসমৃদ্ধ একটি দাখিলা পাচ্ছেন, যা ম্যানুয়াল পদ্ধতির দাখিলার সমমানের ও সর্বত্র গ্রহণযোগ্য। যাদের জমি নিয়ে জটিলতা রয়েছে, তাদের প্রতিবছর মে মাসে ভূমি সেবা সপ্তাহে, ভূমি মেলায় ও ভূমি অফিসগুলোতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে সেবা প্রদান করা হবে।

এছাড়া মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) যুক্ত হওয়ায় নাগরিকদের অনলাইন সিস্টেমে পরিশোধিত ফিসগুলো তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে। এছাড়া, সারা দেশে ভূমিসেবার অনলাইনে আদায়কৃত ফিস সরাসরি ড্যাশবোর্ডে প্রদর্শিত হচ্ছে, যা পুরো প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ করে তুলেছে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশেষ কারণ ছাড়া ২৮ দিনের বেশি কোনো নামজারি পেন্ডিং রাখা যাবে না। সকল পেন্ডিং ডিসিআরের জন্য এক্সেল তালিকা থেকে নাগরিকদের ফোন করে দ্রুত নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা হবে। এই বিষয়ে মনিটরিং কর্মকর্তারা নিয়মিত তদারকি করবেন।

এছাড়াও, আইবাসের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিদ্যমান সফটওয়্যারগুলো আপডেট করে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য গত ১ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছে।

কেএইচকে/এমআরএম/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।