অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বন্ধের পথে এসেনসিয়াল ড্রাগস


প্রকাশিত: ০২:০৫ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৬

নিজেরা ওষুুধ তৈরি করে অন্যের প্রাণ বাঁচাবে কীভাবে নানা সমস্যায় নিজেই এখন রোগী সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা, অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে এখন বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা। এছাড়া সরকারি মালিকানাধীন একমাত্র ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দুটি ল্যাটেক্স প্রসেসিং প্ল্যান্টও বন্ধ হওয়ার পথে। ফলে এখানে কর্মরতরা বেকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা।  

জানা গেছে, সিবিএ নেতারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে প্রতিষ্ঠানটিকে জিম্মি করে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাদের কথামত প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. ইহসানুল করিম ইডিসিএলকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিয়মিত অফিস করেন না। প্রতিদিন বিকেলে সিবিএ নেতারা ফাইল নিয়ে গেলে তিনি তার বাসায় বসে সই করে দেন। যার ফলে অনেক সিদ্ধান্ত তিনি না জেনেই বাস্তবায়নের অনুমোদন দিয়ে দেন। অনির্বাচিত সিবিএ নেতারা ওই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করছেন। এমনকি সুযোগ সুবিধা প্রদানের নামে অনেকের কাছে বিভিন্ন অংকের টাকা দাবি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত বছরের অক্টোবরে ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি ডা. মো. কদরূল হুদার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলেছে। তার আমলে সিবিএ নেতারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারতো না।

বিগত ৫ বছরে ইডিসিএল ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। ওই সময় সিবিএ নেতাদের কোনো পাত্তাই দিতেন না এমডি। এসব কারণে তার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন সিবিএ নেতারা। তার মেয়াদকাল শেষ হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে ইডিসিএল-এর সব কটি শাখায় ত্রাস সৃষ্টি করছেন সিবিএ নেতারা।

ইডিসিএলের ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, অবৈধ সিবিএ নামধারী সভাপতি আব্দুর রহমান, সেক্রটারি দুলাল সরদার ও রবিউল আলমসহ বেশ কয়েকজন নেতা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন। তারা ইডিসিএলকে এক রকম জিম্মি করে ফেলেছেন। বর্তমান এমডি ডা. ইহসানুল করিম নিয়োগ পাওযার পর সিবিএ নেতা আবদুর রহমান অলিখিত এমডি। তার কথায় সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তিনি সিবিএ নেতা দাবি করলেও কোন নির্বাচিত নেতা নন। প্রায় ১০ বছর আগে তালিকাভুক্ত দুটি বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে কাজ না দিয়ে রহমান একটি বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তার মাধ্যমে নিয়মিত বিজ্ঞাপন সরবরাহ করে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

প্রায় ছয় মাস ধরে কোন উৎপাদন না থাকায় শ্রমিক কর্মচারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের বেতন ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন তারা। যেখানে উৎপাদন নেই, সেখানে বর্তমান এমডি গোপালগঞ্জে নির্মাণাধীন প্রজেক্টের অনুকূলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রায় ছয়শ লোককে নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগ প্রাপ্তদের সবাই বাড়িই এমডির নিজ জেলা ফেনী, একজনের বাড়িও গোপালগঞ্জ জেলায় নয়।

অপরদিকে ইডিসিএলের মধুপুর ল্যাটেক্স প্রসেসিং প্ল্যান্ট ও খুলনা ল্যাটেক্স প্ল্যান্ট এমডির অদক্ষতা ও সিবিএ নেতাদের দৌরাত্যের কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কোন সময়। ওই দুটি প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে গেলে প্রায় এক হাজার শ্রমিক কর্মচারী চাকরি হারাবেন।

মধুপুরের ল্যাটেক্স প্রসেসিং প্ল্যান্ট খুলনার কনডম কারখানায় কাচাঁমাল সরবরাহ করে থাকে। এটি বন্ধ হয়ে গেলে এবং খুলনার কনডম ফ্যাক্টরি চালু রাখতে বিদেশ থেকে বিপুল অংকের টাকার কাঁচামাল আমদানি করতে হবে। এছাড়া দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত ডিএমডি (পারচেজ) মনোয়ারুল আমিনসহ কয়েকজনকে পুনঃনিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই মনোয়ারুল আমিনই তার পছন্দের লোকদের মাধ্যমে নির্মাণের কেমিক্যাল ক্রয় করে নিজেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

ইডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ইডিসিএল ১৮৪.৪২ কোটি টাকা, ২০১০-১১ অর্থবছরে ২৯৬.৫৭ কোটি টাকা; ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩৫৯.৭২ কোটি টাকা; ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৯০.২৮ কোটি টাকা এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪২৫.৪৮ কোটি টাকার ওষুধ উৎপাদন করে। এর মধ্যে সরকারী কোষাগারে কর প্রদান করা হয়েছে যথাক্রমে ৩৭.৯৮ কোটি টাকা, ৭২.২১ কোটি, ৭৫.৩৪ কোটি, ৮৯.৭২ কোটি এবং ৯৭.০৯ কোটি টাকা। এছাড়া করপূর্ব মুনাফা অর্জন করেছে যথাক্রমে ৫০.৪৫ কোটি টাকা, ৬৭.৫৮ কোটি টাকা, ৫৭.৮৮ কোটি টাকা, ৫৬.১৭ কোটি টাকা ও ৫৭.৫৩ কোটি টাকা। ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে সেই প্রতিষ্ঠানটি মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের ৫% কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ইহসানুল করিম এমডি হয়ে আসার পরে তা আর দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। ১৯৬২ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে সরকারী ওষুধ ল্যাবরেটরি নামে এ কোম্পাানির যাত্রা শুরু।

১৯৭৯ সালে ওষুধ প্রডাকশন ইউনিট নামে এর নামকরণ করা হয়। ১৯৮৩ সালে এটিকে কোম্পানিতে রূপান্তর করে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) নামকরণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে এটিকে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। বর্তমানে এ কেম্পানির আওতায় ঢাকা ও বগুড়ায় দুটি ওষুধ তৈরির কারখানা এবং খুলনাতে একটি কনডম তৈরির কারখানা রয়েছে। এছাড়া গোপালগঞ্জে  একটি কারখানার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

এইচএস/জেএইচ/আরআইপি

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।