মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণায় ১৪ বছরের জেল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:২৮ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালালে ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানান।

যদিও নীতিগত অনুমোদনের সময় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমাদের সাইবার ক্রাইমের আধিক্য অনেক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের কোন আইন নেই, এজন্য নতুন আইনটি করা হয়েছে। আইসিটি অ্যাক্ট বা অন্যান্য আইনে যা নেই তা এখানে আনা হয়েছে। সাইবার রিলেটেড যত বিষয় আছে তা এই আইনে রয়েছে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কোন ব্যক্তি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে যেকোনো প্রচার-প্রপাগান্ডা বা তাতে মদদ দিলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।’ খসড়ায় ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথাও বলা হয়েছে নতুন আইনে।’ আইনের কিছু অপরাধ জামিনযোগ্য ও কিছু জামিন অযোগ্য বলেও জানান শফিউল আলম।

২০১৬ সালের ২২ আগস্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। তবে খসড়াটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছিলেন, ‘যারা কনসার্ন স্টেক হোল্ডার (সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগী) তাদের নিয়ে বৈঠক করে এটাকে (খসড়া আইন) আরেকটু পরিশীলিত করবেন।’ এই প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কয়েক দফা সভা করার পর গত বছরের ২৯ নভেম্বর এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়। এরপরই খসড়াটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠকে পাঠিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।

সাইবার সন্ত্রাসের শাস্তি ১৪ বছরের জেল
সাইবার সন্ত্রাসের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান খসড়া আইনে রয়েছে বলে জানান শফিউল আলম। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কোন ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ সাইবার তথ্য পরিকাঠামোর মধ্যে অবৈধভাবে প্রবেশ করলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। গুরুত্বপূর্ণ সাইবার তথ্য পরিকাঠামোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন করলে সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড এক কোটি টাকা অর্থ দণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

‘কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা ডিজিটাল ডিভাইসে বেআইনিভাবে প্রবেশ করলে অপরাধ হবে। এজন্য সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড পেতে হবে। কেউ অবৈধভাবে প্রবেশে সহায়তা করলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম ইত্যাদি থেকে তথ্য-উপাত্ত বা এর অনুলিপি সংগ্রহ করেন তাহলে তার এই কাজটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর শাস্তি ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।’ যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কম্পিউটারের সোর্স কোর্ড ধ্বংস করে, তবে পরিবর্তনের শাস্তি সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড বলেও জানান তিনি।

গুপ্তচর বৃত্তির শাস্তি ১৪ বছর জেল
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোন সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বিধিবদ্ধ সংস্থার কোন গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস বা কম্পিউটার নেটওয়ারর্কে ধারণ, প্রেরণ, সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহলে সেটা হবে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ। সেটার শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর জেল বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা।’

সাংবাদিকরা অনেক সময় সরকারি অফিস থেকে তথ্য নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেন, এটা গুপ্তচরবৃত্তির মধ্যে পড়বে কিনা এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সহাস্যে বলেন, না না, আমরা এখানে সাংবাদিক শব্দটি উচ্চারণ করিনি। সাংবাদিকদের কোন নাম উল্লেখ করা হয়নি। কোথাও সাংবাদিকদের টার্গেট করা হয়নি।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতে ১০ বছরের জেল
শফিউল আলম বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন যা ধর্মীয় মূল্যবাধে বা অনুভূতিতে আঘাত করে তাহলে শাস্তি ১০ বছরের জেল বা ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কোন কিছু প্রকাশ করেন বা করান যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এই ধরনের অপরাধের জন্য শাস্তি সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।’

মানহানিতে ৩ বছরের জেল
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে পেনাল কোডের ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী অপরাধ অর্থাৎ সেখানে মানহানির যে সংজ্ঞা দেয়া আছে তেমন কোন অপরাধ করেন তবে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’ আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া ই-ট্রানজেকশন (অর্থের আদান-প্রদান) করলে শাস্তি সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘ওয়েবসাইটে আক্রমণাত্মক বিষয় প্রচার বা ভীতি প্রদর্শনের শাস্তি ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা।’ তিনি আরও জানান, যদি কোন ব্যক্তি হ্যাকিং করেন তবে শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

হবে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি
ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য প্রস্তাবিত আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠনের কথা বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এর প্রধান হবেন মহাপরিচালক। তার অন্যান্য জনবল থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘মহাপরিচালকের আওতার মধ্যে কোন ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোন হুমকি সৃষ্টি করলে তিনি তা অপসারণ বা ব্লক করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে অনুরোধ করতে পারবেন। এছাড়া ক্ষতিকর কোন তথ্য উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে অনুরোধ করতে পারবে বলেও জানান শফিউল আলম।’ খসড়া আইনে সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করার কথা বলা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

আরএমএম/ওআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।