জাতির ‘করোনা ভাগ্য’ নির্ধারিত হবে ৩০ মার্চ!
করোনাভাইরাস সংক্রমণের চরম ঝুঁকিতে গোটা দেশ। এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, করানোয় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জন। তাদের মধ্যে সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এখনও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কম হলেও জনমনে আতঙ্ক কাটছে না। সংক্রমণের ভীতিতে রয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা শুক্রবার (২০ মার্চ) বিকেলে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলেন, করোনা এখনো প্রবাসফেরত ব্যক্তি ও তার পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সামাজিকভাবে এখনও রোগটি ছড়িয়ে পড়েনি।
তিনি জানান, সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত হোম কোয়ারান্টাইনে মোট ১৪ হাজার ১৬২ জনকে রাখা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাখা হয়েছে ৫ হাজার ১৪৯ জনকে। এছাড়া এখন পর্যন্ত হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থানে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে ১০২ জনকে। এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ১০৭ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয় ৩০ জনকে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ৬৫০টিসহ সারাদেশে ৫ হাজার ২৯৩টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনিলা ফেরদৌস জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ইতালিফেরত প্রবাসীরাই দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য বড় হুমকি। আগামী ১৫ দিন তাদের সঠিকভাবে নিয়মনীতি মেনে (বাড়ির নির্দিষ্ট একটি কক্ষে বিচ্ছিন্ন থাকা, পরিবারের সদস্যদের সাথে মেলামেশা না করা, বাড়ির বাইরে কারও সাথে সাক্ষাৎ বা ঘোরাফেরা না করা) হোম কোয়ারান্টাইনে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি জানান, গত ১৫ মার্চ থেকে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে (ইউকে ছাড়া) ফ্লাইট আসা বন্ধ হয়েছে। এ দিন পর্যন্ত ইতালিসহ ইউরোপের করোনাভাইরাস আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ থেকে যারা এসেছেন তাদের নাম-ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য করার বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার কার্যালয় ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় কমিটিসহ একাধিক কমিটি গঠিত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাখালীর নতুন ভবনের দোতলায় একটি সমন্বিত করোনা নিয়ন্ত্রণ সেল স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় এত বড় সেল কখনো গঠিত হয়নি।
তিনি বলেন, ১৫ মার্চ পর্যন্ত যারা এসেছেন তাদের কারও দেহে করোনাভাইরাসের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকলে তা ৩১ মার্চ অর্থাৎ ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ পাবে। এ কারণে ৩০ মার্চ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারলে পরে করোনা ভাইরাসের বড় ধরনের বিস্তার ঘটার আশঙ্কা কম।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক প্রস্তুতি আরও জোরদার করেছে।
আইইডিসিআর ছাড়া অন্যান্য সব বিভাগের (বরিশাল ব্যতীত) ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার জন্য সেগুলোকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। শনাক্তকরণ পরীক্ষা সম্প্রসারণের জন্য ১৬টি পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) মেশিন ক্রয় প্রক্রিয়াধীন। সাতটি সিএমএসডি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলায় ৮৭ হাজার গ্লাভস, ১৭ হাজার ৭৮৫টি হ্যান্ড রাব, ৪৮ হাজার ২০০টি ফেস মাস্ক, ক্যাপ ও জুতার কভার, ১৩ হাজার ৪৩ স্টি সার্জিক্যাল মাক্স অ্যান্ড প্রটেকটিভ কভারঅলস, ৫০০টি কম্বো সার্জিক্যাল প্রটেক্টর (অ্যাপ্রোন, টুপি ও জুতা প্রটেক্টর), ৩ হাজার ৩৮০টি গাউন ও ৫ হাজার ৫৭০টি আই প্রটেক্টর বিতরণ করা হয়েছে।
করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য গাইডলাইন আপডেট করে সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হচ্ছে। মরদেহ ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত চার দিনে ১৬০ জন চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে আরও জানা গেছে, করোনাভাইরাস সেবা গ্রহণ-সংক্রান্ত ২ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৬টি কল এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এসেছে ২৬ হাজার ২৯টি কল।
আইইডিসিআর সূত্র জানায়, গত ২১ জানুয়ারি থেকে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বিভিন্ন সমুদ্র ও স্থলবন্দর এবং ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে মোট ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৭৪২ জন দেশি-বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের মধ্যে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৯২ জন বিমানবন্দর, ৮ হাজার ৭৭১ জন সমুদ্রবন্দর, ৩ লাখ ১১ হাজার ৮৫০ জন স্থলবন্দর এবং ক্যান্টনমেন্ট ও বেনাপোল রেলস্টেশন দিয়ে ৭ হাজার ২৯ জন বাংলাদেশ এসেছেন।
এমইউ/এইচএ/এমএস