করোনায় গুজব : ২০ ফেসবুক আইডি বন্ধ, শনাক্ত আরও ৫০
করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও সরকারবিরোধী বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণে ইতোমধ্যে ২০টি ফেসবুক আইডি, পেজ বন্ধ করেছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত আরও ৫০টি ফেসবুক আইডি, পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল শনাক্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, র্যাব, ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এবং সিআইডিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সংস্থা গুজব বন্ধে কাজ করছে।
সিটিটিসির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গুজব বন্ধে বিভাগটি সাইবার পেট্রোলিং করছে। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এ পর্যন্ত ২০টি ফেসবুক আইডি ও পেজ বন্ধসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে এ বিভাগ।
এই বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসকে (কোভিড-১৯) কেন্দ্র করে অনেকে নানাভাবে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তাদের শনাক্তে আমরা প্রথম থেকেই কাজ করছিলাম। এরই অংশ হিসেবে অভিযুক্ত আইডিগুলো বন্ধ করা হয়েছে। গুজব বন্ধে সাইবার পেট্রোলিং অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই না বুঝে এগুলো শেয়ার করে গুজবটাকে বিস্তৃত করছেন। আমরা সবাইকে কোনো পোস্ট নিশ্চিত না হয়ে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি করোনাভাইরাস নিয়ে ৪টি ইস্যুতে গুজব সৃষ্টি করা আরও ৫০টি ফেসবুক আইডি, পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ। এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্রের মুসলিমবিরোধী কার্যক্রমসহ বাংলাদেশের সরকার ও সরকারের নানা কাজের ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশই অশিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য ও সরকারবিরোধী ক্ষোভ সৃষ্টির জন্য গুজবগুলো ছড়ানো হচ্ছে। এসব কাজের জন্য সারাদেশ থেকে মোট ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ছাড়া গুজবের পোস্ট শেয়ার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য ৭ জনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানা যায়, তারা না বুঝে এগুলো শেয়ার করেন। তাই এই ৭ জনকে পরবর্তীতে এসব না করার মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
গুজবের বিষয়ে রোববার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, করোনাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীব্যাপী ফেক নিউজ ও গুজব ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আমরা গুজব ও ফেক নিউজের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও ব্যবস্থা নিচ্ছি। গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব ও পুলিশের সাইবার টিম কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং গুজব ছড়ানো আইডি বন্ধ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এ ধরনের অস্বাভাবিক বা গুজবের পোস্ট পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে এগুলোর সত্যতা খোঁজে। সত্যতা না পেলে পোস্টদাতাকে শনাক্ত ও গ্রেফতারের কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি ফেসবুক-ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে সেসব আইডির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে এগুলো বন্ধের অনুরোধ জানান।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের বিশাল জগত মনিটরিং সহজ নয়। তদুপরি, আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মানুষকেও সচেতন করছি গুজবে কান না দিতে। গুজব ছড়ানো লিংক ও অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নিয়মিত বিটিআরসিকে (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) বলা হচ্ছে।’
এদিকে শনিবার রাতে করোনাভাইরাস ‘একটি বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য আজাব’ উল্লেখ করে লিফলেটে ছড়ানোর অপরাধে ৬ জনকে ঢাকা থেকে আটক করে পুলিশ।
এআর/জেডএ/এমকেএইচ