ত্রাণ নিতে এসে জনসমাগম, বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি
করোনাভাইরাসের কারণে দুই দফায় ২৬ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করায় দেশের শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তবে এ সময়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সমাজের বিত্তবানসহ অনেক সামাজিক সংগঠন। দিচ্ছেন ত্রাণসামগ্রী। এ ত্রাণসামগ্রী নিতে এসে জনসমাগম তৈরি করছে এ সব মানুষ। এতে সরকারের নির্দেশনা অমান্য করার পাশাপাশি বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি।
এ জন্য সচেতনতা তৈরিতে রাজধানীজুড়ে করা হচ্ছে মাইকিং। সেখানে বলা হচ্ছে, ‘রাজধানীজুড়ে সেনাবাহিনীর টহল গাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে নিজেকে ও অন্যকে বাঁচাতে বাসায় থাকুন, অযথা রাস্তায় ঘোরাফেরা করবেন না। আমাদের বল প্রয়োগে বাধ্য করবেন না।’
এদিকে, করোনাভাইরাসের কারণে জনসমাগম রোধে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নগরের বিভিন্ন রাস্তায় টহল বসিয়ে প্রাইভেটকার, জিপ, মোটরসাইকেল এমনকি রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। রাজপথে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার সন্তোষজনক জবাব না পেলে মামলাও ঠুকে দিচ্ছেন।
সেনাবাহিনীর টহল ও পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও থেমে নেই মানুষের চলাচল। নানা অজুহাতে মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন। গত দু’দিন ধরে ত্রাণ সহায়তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে রাজপথে ব্যাপক লোক সমাগম হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ আছে, এ সব ত্রাণ বিতরণের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরা তো দূরের কথা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে মারামারিও হচ্ছে। ফলে এ ধরনের জনসমাগম থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তীব্র ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
শুক্র ও শনিবার (৩ ও ৪ এপ্রিল) সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীতে ত্রাণসহায়তা নিতে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে হতদরিদ্র মানুষের সমাগম বাড়ছে। ঘুরেফিরে একই মুখ বারবার ত্রাণসহায়তা নিচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় হতদরিদ্রদের হাতে একাধিক ত্রাণসামগ্রীর ব্যাগ দেখা গেছে। তাদের অনেকেই ভ্যান গাড়ি ভাড়া করে ত্রাণসামগ্রী বাসায় রেখে আবার ছুটে আসছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর নিউমার্কেটের সামনে সফুরা খাতুন নামে এক বৃদ্ধা আনুমানিক ৮-১০ কেজি ওজনের একটি ত্রাণসামগ্রীর ব্যাগ নিয়ে হেঁটে নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। ব্যাগটি নিয়ে হাঁটতে না পারলেও তিনি বিশ্বাস বিল্ডার্সের সামনে আরেকবার ত্রাণসামগ্রী পাওয়ার আশায় হেঁটে যাচ্ছিলেন।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে টিসিবির ট্রাকে ন্যায্যমূল্যে তেল, চিনি, পেঁয়াজ ও আটা বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে আবার কেউবা হুড়োহুড়ি করে পণ্য কিনছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- বর্তমান পরিস্থিতিতে টিসিবির পণ্য বিক্রি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে কি না?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ সবাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাসায় অবস্থানের বিষয়ে বারবার অনুরোধ জানালেও মানুষ আমলে নিচ্ছে না।
একাধিক রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ জন ও মৃতের সংখ্যা ৮ জন কম মনে করে আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে তা সারাদেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। জনসমাগম ঠেকাতে না পারলে তা বিশদ আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে এ ভাইরাস। তখন মৃত্যু ঠেকানো দায় হয়ে পড়বে বলে তারা মন্তব্য করেন।
এমইউ/এফআর/এমএস