‘না খাইয়া মরার চেয়ে ঠেলাগাড়ি ঠেলাই ভালো’

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১১:৪৭ এএম, ১০ এপ্রিল ২০২০

‘এই রাখ রাখ, থামা থামা’ বলে ঠেলাগাড়ি থামিয়ে রাস্তার পাশে বসে পড়লেন ক্লান্ত ষাটোর্ধ্ব আজমত মিয়া। সারা শরীর থেকে দর দর করে ঘাম ঝরছে তার। কোমরে বাঁধা গামছা খুলে ঘাম মুছতে মুছতে সঙ্গে থাকা আরও দুজনকে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার গন্তব্যে রওনা হয়ে যাবেন বলে জানালেন। সাথের দুজন অপেক্ষাকৃত তরুণ হলেও তারা বৃদ্ধ আজমতের চেয়ে বেশি ক্লান্ত।

Azmot-4.jpg

বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তিনজনের কেউই প্রকৃতপক্ষে ঠেলাগাড়ি চালক নন। তারা কেউ ভ্যান চালাতেন কেউ প্লেইন শিটের দোকানে চাকরি করতেন। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে ভীষণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু লঞ্চ থেকে তাদের নামিয়ে দেয়া হয়। সংসারের চাকা সচল রাখতে নিরুপায় হয়ে ঠেলাগাড়ি চালাচ্ছেন তারা।

Azmot-4.jpg

কামরাঙ্গিরচর তারা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা আজমত মিয়া। তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাসহ ৮ সদস্যের পরিবার। সংসারে উপার্জনক্ষম তিনি ও তার ছেলে। ছেলে আগে পিকআপ চালাতো। কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন কর্মহীন। এ কারণে তিনি ঠেলাগাড়ি চালাচ্ছেন।

তারা জানান, মৌলভীবাজার থেকে নিউ মার্কেটে ঠেলাগাড়িতে চালের বস্তা নিয়ে যাচ্ছেন। ঠেলাগাড়িতে ২৫ কেজি ও ৫০ কেজি ওজনের মোট ৩৩টি বস্তা রয়েছে।

Azmot-4.jpg

মজুরি কী হিসাবে পান জানতে চাইলে তারা জানান, প্রতি ট্রিপে বস্তা প্রতি ২৫ ও ৪০ টাকা দরে মজুরি পান। মজুরি বাবদ মোট যে টাকা পান তা থেকে সর্দারের জন্য ১০০ টাকা ও ঠেলাগাড়ি ভাড়া ৫০ টাকা বাদ দিয়ে বাকি টাকা তিনজনে ভাগ করে নেন।

এ টাকায় তাদের পোষায় কি-না প্রশ্ন করলে তারা সমস্বরে বলেন, ‘মোটেই কাম-কাজ নাই, না খাইয়া মরার চেয়ে ঠেলাগাড়ি ঠেলাই ভালো।’ এ কথা বলেই ভরদুপুরে ঠেলাগাড়ি ঠেলে গন্তব্যের দিকে ছুটে চললেন তারা তিনজন।

এমইউ/এমএসএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।