ত্রাণের আশায় পথে নেমেছেন ফুল ব্যবসায়ী সকিনা বেগম
দুপুর ১টা। রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ফুট ওভারব্রিজ সংলগ্ন ছালা দিয়ে বেঁধে রাখা একটি বন্ধ ঝুপড়ি দোকানের বাইরে লম্বা টুলের উপর মুখে মাস্ক পরে বসে আছেন মধ্য বয়স্ক এক নারী।
আশপাশে অনেকগুলো ফুলের দোকান, কিন্তু একটাও খোলা নেই। রাস্তাঘাট ফাঁকা। অদূরে দুজন ট্রাফিক কনস্টেবল সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গল্প করছেন। সিগন্যালের সবুজ-লাল বাতি জ্বলছে কী নিভছে সেদিকে খেয়াল নেই তাদের। কিছুক্ষণ পরপর দ্রুত গতিতে দু-একটি প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল ছুটে যাচ্ছে। টুলের উপর বসে থাকা মধ্যবয়স্ক ওই নারী কোনো গাড়ি একটু গতি কমালে তিনি সেটার সামনে এগুচ্ছেন।
কী কারণে তিনি দোকানটির সামনে বসে আছেন এবং কোনো গাড়ি আসতে থাকলে কেন দাঁড়িয়ে সামনে যেতে উদ্যত হচ্ছেন, জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, এ ফুলের দোকানটির মালিক তিনি। প্রতিদিন ভোরে শাহবাগের মার্কেট থেকে ফুল কিনে বিক্রি করতেন। দিনে প্রায় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা লাভ করতেন। স্বামী নেই। এ দোকানের আয় দিয়ে ছয় সন্তানসহ সাত সদস্যের পরিবারের খরচ চালাতেন।
তিনি জানান, কিন্তু গত বেশ কিছুদিন ধরে ফুলের দোকান বন্ধ হওয়ায় আয় পুরোপুরি বন্ধ। বেশ কয়েক দিন জমানো টাকা-পয়সা খরচ করে চলেছেন। কিন্তু এখন জমানো টাকাও প্রায় শেষ। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে দোকান খোলা যায় কি-না তা দেখতে এসেছেন। এছাড়া কিছু সাহায্য পাওয়া যায় কি-না সে আশাতেও এখানে বসে আছেন তিনি।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা সকিনা বেগম নামেও ওই নারী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অসুবিধা হইয়া গেছে। কেমনে যে পোলাপাইনরে খাওয়ামু আল্লাহই জানে।
তিনি জানান, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে সবচেয়ে বেশি ফুল বেচাকেনা হয়। এ সময় ফুলের দাম বাড়ে, আয় রোজগারও বেশ ভালো হয়। কিন্তু এ বছর সব ফুলের দোকান বন্ধ।
সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে, তিনি পাচ্ছেন কি-না জানতে চাইলে সকিনা বেগম না সূচক জবাব দিয়ে বলেন, ত্রাণ সহায়তা মুখ চিনে চিনে দেয়। তিনি বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সংগ্রহ করতে পারেননি বলে জানান।
শুধু সকিনা বেগম একা নন, রাজধানীসহ সারা দেশে তার মতো ছোট-বড় সকল ফুল ব্যবসায়ীর মাথায় হাত। পহেলা বৈশাখে প্রধানত শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সেখানে অনেক ফুল বিক্রি হয়।
সোমবার শাহবাগ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ফুলের দোকান বন্ধ। দোকানের বাইরে পুরনো ফুল পড়ে আছে। গত বছর এমন দিনে শাহবাগ এলাকার ফুল ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত থাকার কারণে নাওয়া-খাওয়া ভুলে গেলেও এবার করোনাভাইরাস তাদের কপাল পুড়িয়েছে। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের নির্দেশে তারা বর্তমানে বাসায় অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।
এমইউ/এমএসএইচ/এমএস