ত্রাণ নয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওএমএসের ট্রাকের অপেক্ষা

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৩:০৭ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২০

বুধবার মধ্য দুপুর। রাস্তাঘাটে সুনসান নীরবতা। রাজধানীর নিউমার্কেটের সামনে ফাঁকা রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে ফাাঁকা ফাঁকা করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ইট। ভালো করে খেয়াল করতেই চোখে পড়ল শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু ফুটপাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অলসভাবে বসে আছেন। প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন ওএমএসের ট্রাকের। প্রখর রোদের তাপ থেকে নিজেদের রক্ষা করতেই ইট দিয়ে জায়গা ধরে ফুটপাতে ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন তারা।

এ প্রতিবেদককে দেখে একজন তরুণী এগিয়ে এসে প্রশ্ন করেন, ‘স্যার, ওএমএসের ট্রাকটা কখন আসবে বলতে পারেন?’ ওই তরুণী জানান, সকাল ৮টায় কামরাঙ্গীরচর থেকে হেঁটে এসে এখানে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু ট্রাকের দেখা নেই। ট্রাক এলেও প্রয়োজনীয় পরিমাণ মসুরের ডাল, তেল, চিনি ও খেজুর ভাগে পাবেন কিনা তা নিয়েও চিন্তিত ওই তরুণী।

তরুণী বলেন, সরকার বলে ঘরে থাকেন, ঘরে থাকেন, ঘরে বসে থাকলে কি খাওন আসবো। গরিব মানুষ, আয় রোজগার বন্ধ। টিভিতে দেখি ওএমএসের পণ্যের অভাব নেই। কিন্তু আমরা ভাগে পাই না। আমরা ত্রাণ চাই না, সরকার ওএমএসের পণ্যটা ঠিক মতো দিলে খাইয়া বাঁচতে পারি।

OMS-2

এ দৃশ্যপট রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার। ওএমএসের ট্রাকের ন্যায্যমূল্যের পণ্য কিনতে পৃথক দুটি স্থানে অপেক্ষা করছিলেন শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। ওএমএসের কয়টি ট্রাক আজ কোথায় কখন আসবে তা জানা না থাকায় সম্ভাব্য দুটি স্থানে কেউ সশরীরে কেউবা ইট বিছিয়ে সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন। তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তারা কেউ সকাল ৮টা কেউবা সকাল ৯টা থেকে অপেক্ষা করছেন।

তারা জানান, আয় রোজগার বন্ধ থাকায় ওএমএসের অপেক্ষাকৃত কম দামের পণ্য কিনে কোনোভাবে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকছেন তারা। কিন্তু ওএমএসের পণ্যও এখন সরবরাহ করা হচ্ছে না বলে তারা অভিযোগ করেন।

OMS-3

সালমা নামের এক গৃহবধূ জানান, গতকাল সকাল ৯টায় সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থেকে দুপুর ২টায় পণ্য কেনার সুযোগ পান। এ সময় তিনি দুই কেজি মসুর ডাল কিনতে চাইলে তাকে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, বাইরে ১২০ টাকা কেজি ডাল। এত দামে ডাল কিনে খাওয়া সম্ভব নয় বলে এখানে এসেছেন। কিন্তু তাকে বেশি করে চিনি কিনতে বলা হয়। তিনি বলেন, চাল ও ডাল এ দু’টি বেশি করে দিলে কোনোভাবে খেয়ে জীবনটা বাঁচাতে পারব। কিন্তু বেশি চিনি নিয়ে কী সরবত খেয়ে বাঁচব?

সকাল ৯টায় সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন লালবাগের বাসিন্দা হাশেম মিয়া। তিনি বলেন, আমার দরকার তেল ও ডাল। ট্রাকের বিক্রেতারা বলেন, খেজুর ও বুট (ছোলা) ছাড়া খালি তেল ও ডাল দেবে না। এভাবে তো সব পণ্য কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব না বলে ওই ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এমইউ/এমএফ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।