এ কোন চকবাজার!
রমজানের শুরুর দিন আজ শনিবার (২৫এপ্রিল) প্রথম রমজানে রাজধানীর শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী চকবাজারে ইফতারি বাজার বসেনি। নানা নামের হরেক পদের ইফতার সামগ্রী তৈরির কারিগরদের সেই ব্যস্ততাও নেই। নেই হাজার হাজার ক্রেতা সমাগম।
‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গায় ভইরা লইয়া যায়’ বলে উচ্চস্বরে নেই বিক্রেতাদের হাঁকডাক। গোটা চকবাজারের রাস্তাঘাট দখল করে বঁটি কাবাব, সুতা কাবাব, রেশমি কাবাব, জালি কাবাব, টিকিয়া, মুরগি মোসাল্লাম, খাসির লেগ রোস্ট, গরুর ভুনা মাংস, আস্ত কোয়েল ভুনা, শাহী জিলাপি, মাঠা, শরবত, হালিম ও বিভিন্ন ধরনের ফলমূলসহ খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেনি দোকানিরা।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে সরকার রাজধানীসহ সারাদেশে ইফতার সামগ্রীর বাজার বসানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারসহ কোথাও ইফতারি বাজার বসেনি।
শনিবার (২৫ এপ্রিল) সরেজমিনে চকবাজার পরিদর্শনকালে সদাব্যস্ত চকবাজারকে মৃত চকবাজার মনে হয়েছে। চারদিকে নীরবতা। প্রতি রমজানে চিরচেনা চকবাজারের ইফতারের বাজারের সঙ্গে এ চকবাজারের কোনো মিল নেই। জমজমাট ইফতারি বাজারবিহীন এ চকবাজারকে দেখলে অস্ফুট স্বরে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে এ কোন চকবাজার।
রাজধানীর ইফতার বাজারের মধ্যে পুরান ঢাকার চকবাজারের ঐহিত্যবাহী ইফতার বাজার ছোটবড় সবার কাছে পরিচিত এক নাম। রমজান শুরুর প্রথম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত চকবাজারের ইফতারি বাজার জমজমাট থাকে।
দেশ স্বাধীনের পর থেকে গত বছর পর্যন্ত সময়ের পরিক্রমায় নতুন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে, পাঁচ তারকা হোটেল ও অনেক উন্নতমানের রেস্টুরেন্টে অনেক ইফতার সামগ্রী তৈরি ও বিক্রি হলেও সব ছাপিয়ে চকবাজারের ইফতার সবার কাছে প্রিয়। একই বাজারে এত ইফতারের আইটেম আর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাই নগরবাসীর অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ইফতার কিনতে চকবাজারে ছুটে আসেন। বিশেষ করে রমজানের প্রথম দিনে মানুষের ভিড়ে পা রাখাই দায় হয়ে পড়ে চকবাজারে।
সেহরির পর থেকেই চকবাজারের ইফতার সামগ্রী তৈরির কারিগররা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দোকান খুলে প্রস্তুতি শুরু হয়। সকাল ১০টার পর থেকে অসংখ্য চুলায় হরেক আইটেমের ইফতার সামগ্রী ভাজা শুরু হয়। জোহরের নামাজের পর থেকে নামে ক্রেতাদের ঢল।
কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে চকবাজার আজ ইফতারি বাজার বসেনি। চেনা চকবাজার যেন অচেনা এক বাজার।
এমইউ/এএইচ/এমকেএইচ