আক্রান্ত মৃতে শীর্ষে ঢাকা, তবু টনক নড়ছে না
রাজধানীসহ সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরও ৫৪৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর এটিই একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৪৬২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মোট ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, দেশে মোট আক্রান্তের মধ্যে শীর্ষে রাজধানী ঢাকা। আক্রান্ত ও মৃতের অর্ধেকেরও বেশি রোগী ঢাকার বাসিন্দা। গত দুদিনে মারা যাওয়া ১২ জনের ৯ জনই ঢাকার।
সারাদেশের হিসাবে ঢাকা শহর ও ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলায়ও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। ঢাকা শহর ও ঢাকা বিভাগে আক্রান্ত মোট রোগীর ৮৫ শতাংশেরও বেশি।
সূত্র জানায়, রাজধানীর কমবেশি সব এলাকায়ই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। তবে আক্রান্ত রোগীর হিসাবে রাজধানীতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে- রাজারবাগ, যাত্রাবাড়ী, লালবাগ, মোহাম্মদপুর, বংশাল, মহাখালী, মিটফোর্ড, মিরপুর-১৪, তেজগাঁও, ওয়ারী, শাহবাগ, কাকরাইল ও উত্তরা।
রাজধানী ঢাকায় আক্রান্ত ও মৃতের হিসাবে শীর্ষে থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে তাদেরই অনীহা বেশি! স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত্ববিদরা বার বার বলছেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরে অবস্থান করতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক, গ্লাভস এবং নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ সেরে দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
মঙ্গলবার (২৮এপ্রিল) জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক রাজধানীর রাজারবাগ, লালবাগ, শাহবাগ, কাকরাইল, মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে দেখেন, অন্যান্য দিনের চেয়ে রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি অনেক বেশি। রোজার অজুহাতে ফুটপাতসহ বিভিন্ন স্থানে খাবারসহ বিভিন্ন দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। পুরান ঢাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাটে বাজার ও ওষুধ কেনার অজুহাতে অপেক্ষাকৃত তরুণরা অবাধে ঘোরাফেরা করছে। কোথাও কোথাও শারীরিক দূরত্ব তো অনেক দূরের কথা গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। অবস্থা দৃষ্টে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লালবাগ এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, প্রায় এক মাস ঘরবন্দি থেকে আজ রাস্তায় বেরিয়ে এত মানুষ দেখে হতবাকই হলাম। এভাবে মানুষ ঘোরাফেরা করলে সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজধানীর কাকরাইল এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, কিছুদিন আগে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের জোরদার টহল দেখলেও এখন আর তাদের দেখা যাচ্ছে না। সরকারিভাবেও তো কোনো ঘোষণা আসেনি। ফলে রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বেড়েছে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে বের হতে দিলেও একটা নিয়ম ও কঠোর নজরদারির মধ্যে চলাফেরার সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় রাজধানীতে করোনার সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে সারাদেশে প্রায় সাতশ চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্টসহ স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত। এ অবস্থা চলতে থাকলে হাসপাতালে রোগীর সেবা দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, মানুষ সচেতন না হলে সংক্রমণ কমানো যাবে না। মানুষ সচেতন হলে সারাদেশে করোনা রোগীর চিকিৎসায় যে প্রস্তুতি রয়েছে তাই যথেষ্ট। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে আক্রান্ত আশঙ্কাজনক হারে বাড়লে সারাদেশের সব হাসপাতাল মিলিয়েও চিকিৎসা দেয়া অসম্ভব হতে পারে।
এমইউ/এএইচ/এমকেএইচ