ঈদের শপিং করতে এসে হাজতে!
ঈদ সামনে রেখে মার্কেট খোলার সুযোগ পেয়েই চট্টগ্রামের কিছু ব্যবসায়ী আর ক্রেতারা প্রশাসনের সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলায় মেতে উঠেছেন। মহানগর ও উপজেলায় প্রশাসনের অভিযানের মাঝেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ধার ধারছে না এসব ক্রেতা-বিক্রেতা। সোমবার (১৮ মে) নগরের রিয়াজুদ্দিন বাজারের বিভিন্ন মার্কেটে এভাবেই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বেচাকেনার দায়ে নয়জনকে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। অপরদিকে হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বেচাকেনার দায়ে সাতটি দোকানে তালা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের তরফে অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামের সব বড় বিপণি-বিতান ও শপিংমলের ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে বন্দরনগরীর ব্যক্তিগত দোকান-আউটলেটসহ উপজেলা পর্যায়ের দোকানগুলো খোলা থাকলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বালাই নেই।
বিক্ষিপ্তভাবে খোলা মার্কেট এবং দোকানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসন। তাই দোকান খোলার প্রথম দিন থেকেই অনেক মালিককে দোকান বন্ধ করতে হয়েছে। আবার অভিযানে অনেকে পালিয়েছেন দোকান ফেলেই।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, গত ১০ মে থেকে মার্কেট-শপিংমলে কেনাকাটা করা যাচ্ছে। তবে সেক্ষেত্রে মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও দোকানিদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনাও রয়েছে।
কিন্তু চট্টগ্রামে বিক্ষিপ্তভাবে খোলা মার্কেটের দোকানে প্রথম দিন থেকেই স্বাস্থ্যবিধি ব্যত্যয় লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলার বেশিরভাগ মার্কেটে মানা হচ্ছে না সরকারি নিয়ম-কানুন। এদিকে দোকান খোলার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির বিধান নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।
সোমবার (১৮ মে) নগরের রিয়াজুদ্দিন বাজারের বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালিয়ে নয়জনকে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। আটকরা সবাই ঈদের কেনাকাটা করছিলেন। তাদের মধ্যে চারজন বিক্রেতা ও পাঁচজন ক্রেতা। এদের বিরুদ্ধে সংক্রমণ আইনে মামলা করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সোমবার কোতোয়ালির বিভিন্ন মার্কেটে কেনাকাটার সময় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় রিয়াজুদ্দিন বাজারের বিভিন্ন মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কেনাকাটার প্রমাণ পাওয়া যায়। পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল থেকে নয়জন ক্রেতা-বিক্রেতাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে আটকদের আসামি করে সংক্রমণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসামিরা এখন জেলহাজতে রয়েছেন। তাদের আদালতে প্রেরণের প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মার্কেটগুলোতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে জেলার বোয়ালখালী, পটিয়া, রাউজান ও হাটহাজারীসহ প্রায় সব উপজেলা থেকে স্থানীয় মার্কেট ও দোকানে বেচাকেনার ধুম লেগেছে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ক্রেতারা অনেকেই মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা ও কেনাকাটা করছেন। ওই মার্কেটের অনেক দোকানি ও কর্মচারীও মাস্ক না পরেই কাপড় বিক্রি করছেন।
এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে অনেকটা গাদাগাদি করেই বেচাকেনা করা হচ্ছে। বড় বড় শপিংমলে তো বটেই ছোট মার্কেটেও দেখা গেছে একই পরিস্থিতি। সুরক্ষার কথা ভুলে একে অপরের গা-ঘেঁষে কেনাকাটায় মগ্ন হয়ে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। যেন ঈদ উৎসবের আনন্দে ভুলে গেছেন লকডাউনের কথা।
বাইরে তালা ভেতরে মেলা
চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হাটহাজারী। এ উপজেলার মার্কেটগুলোতে সবসময় পুরুষের চাইতে নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকে। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় সবচেয়ে অমনোযোগী এসব নারী ক্রেতা। এ সুযোগকে পুঁজি করে কিছু কিছু দোকানি প্রশাসনের সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলায় মেতে উঠেছেন।
প্রতিদিন উপজেলা প্রশাসন অভিযান শুরু করলেই কিছুক্ষণের জন্য নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করলেও পরক্ষণেই তা আর থাকছে না। আজ উপজেলার ইছাপুর বাজার, উপজেলা পরিষদ মার্কেট ও পৌরসভা এলাকার দোকানগুলোতে বাইরে তালা দিয়ে ভেতরে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে অনেকটা গাদাগাদি করেই বেচাকেনা করার প্রমাণ পেয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপজেলার দোকানগুলোতে সামনের শাটার ফেলে তালা দিয়ে ভেতরে গাদাগাদি করে চলছে কেনাবেচা। এভাবে চলতে থাকলে ঈদের আগেই সবার ঘরে ঘরে করোনা পৌঁছে যাবে।’
অভিযানের বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে ইছাপুর বাজারে গিয়ে দেখি সবগুলো দোকানের বাইরে তালা। কিন্তু একটু খোঁজখবর নিতেই দেখা গেল ভেতরে কয়েকশ নারী-পুরুষ মোটামুটি মেলা বসিয়ে কেনাকাটা করছেন। দোকান মালিকরা স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থাই রাখেননি। উপজেলার বাকি মার্কেটগুলোর অবস্থাও একই। অভিযানের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখেই ক্রেতারা মুখ লুকিয়ে পালিয়ে যেতে থাকেন।'
ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, কিছু কিছু দোকানদার বেশি মুনাফার আশায় জীবন-মৃত্যুর হিসাবও ভুলে গেছেন, ক্রেতারাও বড় বেপরোয়া। অভিযানে সাতটি দোকানে তালা দেয়া হয়েছে। ঈদের আগে তাদের কেউ আর দোকান খুলতে পারবেন না।’
আবু আজাদ/এমএফ/পিআর