বরগুনায় বীজ আলু সংকট, দিশেহারা চাষি
বরগুনার পাথরঘাটায় বীজ আলুর তীব্র সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা। অগ্রিম টাকা দিয়েও সময়মতো বীজ আলু না পেয়ে ফসল উৎপাদনে বাধার মুখে পড়েছেন তারা।
চাষিদের অভিযোগ, চাহিদা বেশি থাকায় ডিলাররা সিন্ডিকেট করে বীজ আলু বস্তাপ্রতি ১৫০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করেও ভাঙছে না সিন্ডিকেট। কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় জমি অনাবাদি থাকার শঙ্কায় ভুগছেন চাষিরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, বাজারে আলুর চড়া দাম আর গতবছর লাভ বেশি হওয়ায় এবার আলু চাষে বেশি ঝুঁকেছেন বরগুনার পাথরঘাটার চাষিরা। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মাঠে নেমেছেন আলু বীজ লাগাতে। কেউ জমিতে কোদাল টানছেন, কেউ দিচ্ছেন সার। একদিকে সারিবদ্ধভাবে নারীরা শুরু করেছেন আলু বীজ বপন। উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে কাজ।
এত কিছুর মধ্যেও বীজ আলু সংকটে চিন্তায় পড়েছেন জমি মালিকরা। তাদের অভিযোগ, আলুর চড়া দামকে পুঁজি করে সরকারি মূল্যের ১২০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ বীজ আলু। স্থানীয় ডিলাররা একজোট হয়ে বীজ আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করায় অগ্রিম টাকা দিয়েও পাচ্ছেন না বীজ আলু। পাথরঘাটায় কোল্ডস্টোরেজ না থাকায় বীজ আলু উৎপাদন করতে পারছেন না তারা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন ডিলাররা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আলু চাষে বরিশাল বিভাগে বরগুনার অবস্থান তৃতীয়। চলতি বছর বরগুনা জেলায় ৯৭৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য আলুর বীজ প্রয়োজন হবে ১ হাজার মেট্রিক টন। উপজেলাভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাথরঘাটায় ৫৪০ হেক্টর, বামনায় ৩৫ হেক্টর, বেতাগীতে ১২৮ হেক্টর, সদরে ১৪০ হেক্টর, আমতলীতে ৬২ হেক্টর এবং তালতলীতে ৭০ হেক্টর।
পুরুষের পাশাপাশি আলু ক্ষেতে কাজ করা খালেদা আক্তার বলেন, ‘ডিলারদের অগ্রিম টাকা দিয়েও এবার চাহিদা অনুযায়ী বীজ আলু পাইনি। ডিলাররা বেশি দামে বাইরে বিক্রি করে দিয়েছে। তাই আমাদের অনেক জমিই খালি পড়ে থাকবে। এতে খরচের টাকাই উঠবে না।’
চাষি মো. ইব্রাহিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বীজ আলুর দাম এবার অনেক বাড়িয়েছে ডিলাররা। এ গ্রেড বীজ আলুর দাম প্রতিবস্তা ৩৪৮০ টাকা আর বি গ্রেড ৩২০০ টাকা কোম্পানি নির্ধারণ করে দিলেও ডিলাররা বিক্রি করছেন ৪৫০০-৪৭০০ টাকায়। তারপরও চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিবস্তায় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি নিচ্ছেন ডিলাররা।’
আরেক চাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষুদ্র কৃষকরা অগ্রিম টাকা দিয়েও ভালো বীজ পায়নি। তারা যে বীজগুলো পেয়েছে এগুলোয় ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আবার এ বছর আবহাওয়ার অবস্থা খুবই খারাপ। সবমিলিয়ে কৃষকদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।’
অতিরিক্ত দামে বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে বীজ আলু সরবরাহকারী জাকির চৌকিদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানি বীজ আলু আমাদের দিতে পারে না। তবে যারা অগ্রিম টাকা দিয়েছিলেন সবাইকেই বীজ আলু সঠিকভাবে দেওয়া হয়েছে। যারা আলু পাননি তারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।’
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, বরগুনায় সবচেয়ে বেশি আলুচাষ হয় পাথরঘাটায়। এখানে বীজ আলুর সংকট নিরসনের পাশাপাশি ডিলারদের সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে সংকট নিরসনে পাথরঘাটায় কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। চাষিরা যাতে ন্যায্যমূল্যে বীজ আলু পান, সেজন্যে আমাদের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, বিএডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ উদ্যোগে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগির সংকট কেটে যাবে।
এসআর/জিকেএস